রাজধানীর রামপুরা মহানগর প্রজেক্ট এলাকার বাসা থেকে ফাহমিদা আক্তার নিপুণের হাত-পা বাঁধা লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত নিপুণ দৈনিক ইত্তেফাকের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও রাষ্ট্রদূত মরহুম আখতার-উল-আলমের মেয়ে। পেশায় তিনি একজন আইনজীবী। নিহতের স্বামী ও সন্তান প্রবাসে থাকায় একাই থাকতেন প্রজেক্টের ৫ নম্বর সড়কের ১০৫ নম্বর ভবনের পঞ্চম তলায়। গত শুক্রবার সকালে ওই বাসা থেকে লাশ উদ্ধারের পর নিপুণের রহস্যজনক মৃত্যুর বিষয়টি আলোচনায় আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে মর্মান্তিক এ ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড হিসেবেই শনাক্ত করেছেন। তাদের ধারণা, বৃহস্পতিবার রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা হাত-পা বেঁধে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পালিয়ে যায়। একটি বাসায় ঢুকে দুর্বৃত্তরা এভাবে একজনকে হত্যা করে কিভাবে পালিয়ে যেতে পারে তাও রহস্যময়। এ ঘটনা স্বভাবতই আতঙ্কের জন্ম দেয়।
পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, নিহত নিপুণের গলায় মাফলার পেঁচানো, হাত-পা বাঁধা এবং নাকে-মুখে মরিচের গুঁড়া ছিটানো অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। তার এ বাসায় আত্মীয়স্বজন ছাড়াও পরিজনদের কেউ কেউ মাঝে-মধ্যে আসতেন বলেও জানা যায়। কিন্তু ঠিক কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড, তা এখনো শনাক্ত করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। তবে ময়নাতদন্তে ভারী কোনো বস্তু দিয়ে তার মাথায় আঘাতের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। সঙ্গত কারণে নিপুণের মৃত্যু ঘিরে ইতোমধ্যে নানা রহস্য ঘনীভূত হয়ে উঠেছে। আইনপেশায় জড়িত হওয়ার সুবাদে নিপুণের ব্যক্তিগত শত্রু তৈরি হওয়া অমূলক নয়। আবার অন্য যে কোনো কারণেও তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে- এমন আশঙ্কাও অযৌক্তিক নয়। কোনো ধরনের অস্বাভাবিক মৃত্যু যেখানে কারো কাম্য হতে পারে না, সেখানে বাসায় ঢুকে এ ধরনের নির্মম হত্যাকাণ্ড স্বভাবতই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মানুষ নিজ বাড়িতেও নিরাপদ থাকতে না পারলে তার মতো পরিতাপের বিষয় আর কী হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা নিপুণ হত্যাকাণ্ডের আলামত পর্যালোচনা করে জানিয়েছেন, এটি নিছক ডাকাতির কোনো ঘটনা নয়। এজন্য তদন্ত দল নিহতের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে বলে জানা যায়। আমরা গভীর পরিতাপের সাথে লক্ষ্য করি, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঝেমধ্যেই এ ধরনের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। ঘটনাগুলোর তদন্তও করছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত রহস্য ও দোষীদের অনেক ক্ষেত্রেই আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। রাজধানীর বিভিন্ন বাসাবাড়িতে এর আগে ঘটে যাওয়া অনেক হত্যাকাণ্ডের রহস্যই অনুদঘাটিত রয়ে গেছে, যা প্রশাসনের ব্যর্থতার দৃষ্টান্ত বহন করে বৈকি। আমরা মনে করি, এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত না হলে, দায়ীরা আইনের আওতায় না এলে, তাদের কঠোর সাজা নিশ্চিত না হলে সমাজ-রাষ্ট্র থেকে এ নেতিবাচক প্রবণতার অবসান হওয়া শুধু কঠিনই নয়, অসম্ভবও বটে। কথা তো এ যে, রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দায়িত্ব রাষ্ট্রেরই।
সার্বিক বিবেচনায় আমরা বলতে চাই- মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি দিতে রাষ্ট্রে কঠোর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। নানাবিধ কারণে বর্তমানে সমাজে মূল্যবোধেরও যথেষ্ট ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অবস্থার চাপে পড়ে ক্রমেই নিম্নমুখী হয়ে উঠেছে মানবতাবোধ। এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ব্যর্থ হলে, তা সার্বিক অর্থেই জনভোগান্তি ও হতাশা তৈরি করবে; যা সুশাসন ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রেও অন্তরায়। আমরা মনে করি, নিপুণ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনসহ দায়ীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে তাদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি এর আগে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডগুলোর ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ধরনের নেতিবাচক ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধেই তা করা জরুরি।