ঢাকা মিরপুরে প্লাস্টিক কারখানায় আগুন : ১৩ জনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানী ঢাকার মিরপুর-১ নম্বরে একটি প্লাস্টিক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে শনিবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ হয়েছেন প্রায় অর্ধশত। প্লাস্টিক কারখানাটির নাম অ্যাটকো। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, লাশের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় লাশের সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান জানান, শনিবার বিকাল ৫টা ২৫ মিনিটের সময় মিরপুরের সনি সিনেমা হলের বিপরীতে চিড়িয়াখানা রোডে নাসিম প্লাজা নামে ওই ভবনে আগুন লাগে। আগুন নেভাতে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট। সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে তার ধারণা। ভেতরে তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার কাজ চালানো যায়নি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত তিন নারী ও দশজন পুরুষের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নেয়া হয়েছে। লাশগুলো পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। চারতলা ভবনটির পুরোটাই কারখানা। এর নিচতলায় প্লাস্টিকের সামগ্রী তৈরির কাঁচামাল ও বিভিন্ন কেমিক্যাল, দোতলায় অফিস, তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় কারখানা এবং ছাদে টিনশেড দিয়ে গোডাউন বানিয়ে তৈরি করা পণ্য রাখা ছিলো। সবকিছু পুড়ে যাওয়ায় বাড়িটির হোল্ডিং নম্বর পাওয়া যায়নি। অগ্নিদগ্ধ মার্কেটের দু নিরাপত্তাকর্মীকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন মার্কেটের নিরাপত্তা প্রধান তৌহিদুল ইসলাম (৪২) ও নিরাপত্তাকর্মী কামাল হোসেন (৩৫)।

মাজেবুল নামে ভবনের আরেক নিরাপত্তাকর্মী জানান, মার্কেটের নিচতলায় অ্যাটকো বাংলাদেশ লিমিটেড নামে একটি প্লাস্টিক পণ্য তৈরির কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। অ্যাটকো লিমিটেডের মালিকের নাম আনিসুজ্জামান খান। ওই কারখানায় ১৪৩ জন কর্মচারী কাজ করেন বলে জানান মার্কেটের নিচতলার ফটোকপি দোকানের কর্মী জহির। অ্যাটকো লিমিটেডের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ মমিনুল ইসলাম টুটুল জানান, তিনি কারখানার বাইরে ছিলেন। বিকালে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে কাছে গিয়ে দেখেন বয়লার বিস্ফোরণে কারখানাটি জ্বলছে। তিনি আরও জানান, প্রথমে কারখানার পাশে একটি ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ হয়। এর এক-দেড় মিনিট পর বিকট শব্দে একটি ব্রয়লার বিস্ফোরিত হয়ে পুরো ভবনে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এর কয়েক মিনিট পর আবারও বিকট শব্দে দ্বিতীয় ট্রান্সফরমারটি বিস্ফোরিত হয়।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক অপারেশন মেজর শাকিল আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ভবনে উচ্চমাত্রায় দাহ্যপদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বয়লারের বিস্ফোরণ হয়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আছলামুল হক, ডিএমপির কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ডিএমপি কমিশনার আহতদের সুচিকিৎসা ও নিহতদের লাশ দ্রুত ময়নাতদন্ত করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। এদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। তিনি নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে লাশ পরিবহনের জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা ও আহতদের ৫ হাজার টাকা করে দেন।