এসএসসি নিয়ে শঙ্কা : সিদ্ধান্ত কাল

স্টাফ রিপোর্টার: এসএসসি পরীক্ষা সোমবার, পরীক্ষায় অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে আছে প্রায় ১৫ লাখ পরীক্ষার্থী। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিএনপিকে অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে আসছে। আর বিএনপি অবরোধ প্রত্যাহার না করে নতুন করে ৭২ ঘণ্টার হরতাল আহ্বান করেছে। শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করছে, পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবেই। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী অভিভাবকদের মধ্যে নতুন করে শঙ্কার উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত এবং বিএনপি অবরোধ হরতালের মধ্যেই জিম্মি হয়ে আছে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার পরীক্ষার্থী ও তাদের পরিবার।

বগুড়া জেলার কাহালু উপজেলার পাইকড় এলাকার এক পরীক্ষার্থীর অভিভাবক জাফরুল ইসলাম বলেন, আমার বাড়ি উপজেলার এক কোণায়। সেখান থেকে উপজেলা বন্দরের পরীক্ষা কেন্দ্রে হরতাল-অবরোধের মধ্যে আমার মেয়ের পরীক্ষা দেয়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছি। কোথায় কখন ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে এবং কোন গাড়িতে আগুন দেয়, এ সব নিয়ে অনেকটাই শঙ্কার মধ্যে রয়েছি।

রাজধানীর এক অভিভাবক রফিকুল আলম বলেন, দুশ্চিন্তায় আছি। পরীক্ষার সময় নিরাপত্তা নিয়ে আমরাও উত্কণ্ঠায় আছি। যানবাহনে সবচেয়ে বেশি নাশকতা হচ্ছে। যানবাহনে করে পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে প্রতিমহূর্তে উত্কণ্ঠায় থাকতে হবে। যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায় এর দায় কে নেবে। অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হরতাল আহ্বানের পর শুক্রবার সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বিএনপির এটা নতুন কী। এখন হরতালে সবই কিছুই চলে। সবকিছুই চূড়ান্ত, পরীক্ষা থেকে পিছিয়ে আসার সুযোগ নেই।

মন্ত্রী আরো বলেন, আমরা নতুন করে বিএনপি ও শরিকদের হরতাল অবরোধ প্রত্যাহারের আহবান জানাচ্ছি। আশা করি তারা প্রত্যাহার করবেন। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, অন্তত পরীক্ষার দিনে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করুন। যদি অবরোধ হরতাল প্রত্যাহার না করে তাহলে পরীক্ষা হবে কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরীক্ষা হবারই সিদ্ধান্ত আছে। পেছানোর কোনো সিদ্ধান্ত নেই।

তবে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র আগেই জানিয়েছে, অবরোধের মধ্যে পরীক্ষা হবে, তবে হরতালের মধ্যে পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া হতে পারে। পেছানোর বিষয়ে পরীক্ষার আগের দিন ঘোষণা দিয়ে জানানো হবে।

শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, পরীক্ষা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে কি-না এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানা যাবে ১ ফেব্রুয়ারি, পরীক্ষার আগের দিন। রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেন, যারা পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছাকাছি আছে, তারা হয়তো পরীক্ষা হলে আসতে পারবে। তবে যারা দূরে তারা কী ভাবে পরীক্ষা দিতে যাবে। যারা প্রত্যন্ত এলাকায় থাকে, আর বাস যদি না চলে তাহলে পরীক্ষা হলে আসবে কী করে। আর যদি পরীক্ষা হলে আসার পথে দুর্ঘটনায় পড়ে? হরতালে হয়তো পরীক্ষা পেছানো হবে। তিনি বলেন, হরতালেও পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত থাকলে আমরা আয়োজন করতে পারি। কিন্তু যারা পরীক্ষা দেবে, সেই পরীক্ষার্থীরা কী করবে।

যাদের জন্য পরীক্ষার আয়োজন, এমন এক পরীক্ষার্থী আসমা সুলতানা বলেন, পড়াশোনায় মন বসাতে পারছি না। রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমাদের লেখাপড়ায় সমস্যা সৃষ্টি করছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে যদি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে ঝুঁকির মধ্যে কীভাবে কেন্দ্রে যাবো। যদি কিছু হয়ে যায়। আবার পরীক্ষা পিছিয়ে দিলেও সমস্যা। কোন বিষয়টির এখন প্রাকটিস করবো। সব মিলে আমরা পরীক্ষার্থীরা ভালো নেই।

এবার মাধ্যমিক (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় এবার মোট ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। এবার এসএসসিতে ১১ লাখ ১২ হাজার ৫৯১ জন, দাখিলে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ এবং ভোকেশনালে ১ লাখ ১০ হাজার ২৯৫ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৩৩৯ জন এবং ছাত্রী ৭ লাখ ১৫ হাজার ৯২৭ জন। বিদেশের ৮টি কেন্দ্রসহ ২৭ হাজার ৮০৮টি প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ১১৬টি কেন্দ্রে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ১০ মার্চ পর্যন্ত তত্তবীয় পরীক্ষা শেষে ১১-১৬ মার্চ ব্যবহারিক পরীক্ষা নেয়া হবে। পরীক্ষাগ্রহণ উপলক্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন বোর্ডে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।