আটজনের লাশ উদ্ধার : দালালদের বিরুদ্ধে মামলা : গ্রেফতার ছয়

বাংলাদেশ থেকে অবৈধ পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে ট্রলার ডুবির ঘটনায়

 

স্টাফ রিপোর্টার: বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়ার খুদিয়ার টেক এলাকায় মালয়েশিয়াগামী ট্রলার ডুবির ঘটনায় আটজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে নৌবাহিনী-কোস্টগার্ড ও স্থানীয়দের যৌথ অভিযানে মহেশখালী চ্যানেল থেকে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। এছাড়া এ ঘটনায় চিহ্নিত ১১ দালালের বিরুদ্ধে কুতুবদিয়া থানার পুলিশ বাদী হয়ে শুক্রবার সকালে মানবপাচার আইনে একটি মামলা করেছে বলে জানিয়েছেন কুতুবদিয়া থানার ওসি অংসা থোয়াই। নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে কোস্টগার্ডের তানভীর ও তৌহিদ, নৌ-বাহিনীর অতন্দ্র ও অপরাজেয় নামের ৪টি উদ্ধার যান। এদিকে ডুবির ঘটনায় উদ্ধারকৃত যাত্রীদের কাছ থেকে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। কোস্টগার্ডের ধাওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে দাবী করা হলেও মূলত ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটেছে সাগরপথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়া দালাল ও যাত্রীদের মধ্যে বাকবিতন্ডা-ধাক্কাধাক্কি ও মাঝির অসাবধানতার কারণেই। তবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ বলছে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই এবং টেউয়ের তলে পড়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের মধ্যে আবুল কালাম ও শরীফ সিকদার জানান, কক্সবাজার সদরের পোকখালীর মানবপাচারের চিহ্নিত দালাল নুর মোহাম্মদ, ইয়াসিন হোসেন, ইসমাঈল হোসেন, উবায়দুল হক তাদের সাগরপথে মালয়েশিয়া পৌঁছে দেয়ার কথা বলে ফিশিং ট্রলারে তুলে। কিন্তু নিজেদের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে যাত্রীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতে চাইলে বাকবিতন্ডা ও ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। ঘটনার এক পর্যায়ে সাগরের টেউয়ের কবলে পড়ে ট্রলারটি যুবে যায়। খবর নিয়ে জানা গেছে উদ্ধারকৃত ৪২ যাত্রীদের মধ্যে ৩২ জনকে কুতুবদিয়া চ্যানেল ও ১০ জনকে মহেশখালীর মাতারবাড়ি চ্যানেল থেকে ভাসমান উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃতদের মহেশখালী, কুতুববদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

কোস্টগার্ডের পূর্ব জোনের জোনাল অপারেশন কর্মকর্তা লে. কমান্ডার ফজলুল করিম জানান, উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে শতাধিক যাত্রী নিয়ে ট্রলার ডুবির ঘটনায় ১১ দালালের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে পুলিশ বাদী হয়ে কুতুবদিয়া থানায় এই মামলা করেন। কুতুবদিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ অংসা থোয়াই জানান, ট্রলার ডুবির ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে দালালদের বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে মামলা করেছে। মামলায় ছয়জনের নাম উল্লেখ এবং পাঁচজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, উদ্ধার হওয়া ৪২ জনের মধ্যে দায়েরকৃত মামলায় ছয়জনকে দালাল হিসেবে চিহ্নিত করে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের ১৫ নং জেটি থেকে বুধবার দুপুরে ২০ জন যাত্রী নিয়ে এফবি ইদ্রিস নামের একটি ফিশিং ট্রলার মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করে সাগর পথে। পথিমধ্যে ট্রলারটি বাঁশখালীর ছনুয়া, পেকুয়ার মগনামা ও করিয়ারদিয়া থেকে আরো শতাধিক যাত্রী ওই ট্রলারটিতে বোঝাই করে। বৃহস্পতিবার ভোরে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলের দক্ষিণ-পশ্চিম মোহনায় পৌঁছুলে হঠাৎ ট্রলারটি ডুবে যায়।