এসএসসি পরীক্ষার সময় কর্মসূচি স্থগিত করা হয়নি

আন্দোলনে দমনে সরকারের কৌশল : টার্গেট এখন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মী

 

স্টাফ রিপোর্টার: চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে টার্গেট করা হয়েছে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের সক্রিয় নেতাকর্মীদের। এ লক্ষ্যে যৌথ বাহিনীর অভিযানের পাশাপাশি স্থানীয় আইনশৃংখলা বাহিনী প্রতিদিন শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে চলেছে। গত একমাসে সারা দেশে ১৩ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। যাদের বেশিরভাগই চলমান আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছিল। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে প্রথম সারির নেতা নেই বললেই চলে। বেশ কয়েকটি জেলায় মাঝারি সারির নেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া গ্রেফতারের পাশাপাশি সক্রিয় নেতাকর্মীদের কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যা করারও অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতা বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। আতংক সৃষ্টি করে মানসিকভাবে দুর্বল করার কৌশল হিসেবেই দলের সক্রিয় নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের এসব অভিমত জানা গেছে। তাদের মতে, গত ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া দেশব্যাপী টানা অবরোধে মূল ভূমিকা পালন করে আসছে মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরাই। জোটের কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে নেই বললেই চলে। কয়েকটি জেলায় নেতারা সক্রিয় থাকলেও বেশিরভাগ এলাকায় উল্টো চিত্র। জেলার মাঝারি সারির নেতাদের পাশে দাঁড়িয়ে বিএনপির অঙ্গসংগঠন এবং জামায়াত-শিবির আন্দোলনে মূল ভূমিকা পালন করে আসছে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও সরাসরি তৃণমূলের সক্রিয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আন্দোলনের কৌশল সম্পর্কে অবহিত করছেন। তাদের নানাভাবে সাহস দিচ্ছেন। দলের শীর্ষ দুই নেতার ফোন পেয়ে তৃণমূল নেতারা আরও সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সরকার এ পর্যায়ের বিরোধী নেতাদের দমনের কৌশল অবলম্বন করেছে।

সরকারের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লাগাতার অবরোধে রাজধানীর পরিস্থিতি কিছুটা সহনশীল থাকলেও সারা দেশে কম-বেশি উত্তেজনা বিরাজ করছে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বোচ্চ ব্যবস্থার পরও মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলন দমনে পাল্টা কৌশল নেয়া হয়েছে। বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বাদ দিয়ে এখন থেকে যেসব নেতা মাঠপর্যায়ে সক্রিয় রয়েছে তাদের টার্গেট করা হয়েছে। তালিকা ধরে শুরু হয়েছে গ্রেফতার অভিযান। গত কয়েকদিনে বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে চালানো হচ্ছে যৌথ অভিযান। এসব অভিযানে জেলা ও থানা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদল, জামায়াত-শিবিরের নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। তৃণমূলের পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের সক্রিয় নেতাদেরও টার্গেট করে গ্রেফতার অভিযান চলছে।

বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ, শুধু গ্রেফতার নয়, সক্রিয় নেতাকর্মীদের না পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদেরও নানাভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। আতংক সৃষ্টি করতে বাসাবাড়ির পাশাপাশি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানেও চালানো হচ্ছে অভিযান। নেতাদের না পেয়ে অফিস কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও হয়রানি, নির্যাতন করা হচ্ছে। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, আন্দোলন দমনের কৌশল হিসেবে সরকার গণগ্রেফতার শুরু করেছে। সারা দেশের সক্রিয় নেতাকর্মীদের টার্গেট করেছে তারা। সরকার মরিয়া হয়ে গেছে। এটা আন্দোলনকে ব্যর্থ করার প্রয়াস। পুলিশকেও পুরোপুরি এগিয়ে দিয়েছে। বলছে সব দায়িত্ব সরকারের।

তিনি আরও বলেন, দমন-পীড়ন করে আন্দোলন বন্ধ করা যায় না। ইতিহাস তা-ই বলে। দমন-পীড়ন যত বেশি হবে আন্দোলন আরও বেগবান হবে। সন্ত্রাস সন্ত্রাসের জন্ম দেয়, এটা মনে রাখতে হবে। সরকার সে পথেই হাঁটছে। এতে সমাধান হবে না। আন্দোলনের গতি জ্যামিতিক হারে বাড়বে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনে বিএনপির তৃণমূলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ের সক্রিয় নেতাকর্মীরাও গ্রেফতারের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ জানান, সরকার আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করে সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। সক্রিয় নেতাকর্মীদের পাইকারি হারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। অনেককে ক্রসফায়ারে হত্যা করার ঘটনাও ঘটছে। সরকার হয়তো ভাবছে এসব করে আন্দোলন দমন করা যাবে। কিন্তু তাদের এ পরিকল্পনা ভুল। গ্রেফতার, নির্যাতন যত বাড়বে আন্দোলনও বেগবান হবে।

খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ৫ জানুয়ারির পর থেকে নেতাকর্মীরা বাড়িছাড়া। আত্মগোপন থেকে এসে মিছিল করে আবার চলে যাচ্ছে। গত কয়েকদিনে অসংখ্যা নেতাকর্মীর বাসায় পুলিশ তল্লাশি চালিয়েছে। অনেককে না পেয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেছে। তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার করে কখনও আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। একজনকে গ্রেফতার করা হলে অন্যজন সেই জায়গা দখল করে নেবে।

এসএসসির সময় কর্মসূচি স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়নি: এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে কর্মসূচি স্থগিত করার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি। বৃহস্পতিবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যের খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর নজরুল ইসলাম খান চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ২০ দলীয় জোটের লিয়াজোঁ কমিটি এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। কারণ সব কর্মসূচি লিয়াজোঁ কমিটিই সর্বসম্মতভাবে নিয়ে থাকে।

খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাল স্থায়ী কমিটি: এদিকে পুত্রের মৃত্যুশোকে আচ্ছন্ন খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে রাতে তার গুলশানের কার্যালয়ে যান স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, সারোয়ারী রহমান, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান। এ বিষয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, সহকর্মী হিসেবে আমরা যারা স্থায়ী কমিটির সদস্য ঢাকায় অবস্থান করছি, তারা দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে এসেছি। আজকে কোনো রাজনৈতিক বিষয় আলোচনা হয়নি।

আরাফাত রহমান কোকোর কুলখানি কবে হবে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ছাড়াও মওদুদ আহমদের স্ত্রী হাসনা মওদুদ ও রফিকুল ইসলাম মিয়ার স্ত্রী অধ্যাপিকা শাহেদা রফিক বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেন। এর আগে সন্ধ্যায় কার্যালয়ের নিচতলায় প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর শোক বইতে স্বাক্ষর করেন বিশিষ্ট গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ারের নেতৃত্বে শিল্পীদের একটি প্রতিনিধি দল।