কোকোর জানাজা আজ বায়তুল মোকাররমে : দাফন বনানীতে

স্টাফ রিপোর্টার: আজ দুপুর পৌনে ১২টায় আসছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর লাশ। পরে বাদ আসর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে জানাজা শেষে আজই তাকে দাফন করা হবে বনানী সামরিক কবরস্থানে। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে শোকাহত মানুষের শোক জানানো অব্যাহত রয়েছে।

গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর জানাজা সর্বসাধারণের সুবিধার্থে আজ মঙ্গলবার নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পরিবর্তে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে বাদ আসর অনুষ্ঠিত হবে। পরে তার লাশ বনানীস্থ সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বুধবারের পরিবর্তে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় সারাদেশে কোকোর গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসউইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান জানান, মালয়েশিয়া থেকে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় আরাফাত রহমানের মরদেহবাহী বিমানটি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবে। বেলা পৌনে ১২টায় ঢাকায় পেঁৗছবে। এরপর বিমানবন্দর থেকে কোকোর মরদেহ গুলশানের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নেয়া হবে। সেখানে তার মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ আত্মীয়স্বজন, নেতাকর্মী এবং সর্বস্তরের শুভাকাঙ্ক্ষীরা মরদেহ শেষবারের মতো দেখার সুযোগ পাবেন।
জানা গেছে, মরদেহের সঙ্গে দেশে ফিরছেন কোকোর দুই মেয়ে জাহিয়া ও জাফিয়াসহ স্ত্রী শর্মিলা রহমান তাবাসসুম, মামা শামীম এস্কান্দার, শামীম এস্কান্দারের শ্যালক শাহেদ, মালয়েশিয়া বিএনপির নেতা বাদলুর রহমান খান, মো. মোশাররফসহ আরো ২০ জন নেতা।

সূত্র জানায়, বিমানবন্দরে লাশ গ্রহণ করবেন বিএনপির ৫ নেতা ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ এবং গিয়াস কাদের চৌধুরী। লাশ নিয়ে যাওয়া হবে সরাসরি মায়ের কাছে গুলশান কার্যালয়ে। সেখানে ঘণ্টাতিনেক রাখা হবে লাশ। এরপর নিয়ে যাওয়া হবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে।

এদিকে কোকোর মৃত্যুর পর থেকে এখনো নির্বাক বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দল, জোট এবং পরিবারের লোকজন সমবেদনা জানাতে সোমবারও দলে দলে গুলশান অফিসে গেছেন। কিন্তু তিনি কারো সঙ্গেই কথা বলছেন না। এমনকি পারিবারিক সদস্যরা ছাড়া কারো সঙ্গে দেখাও করছেন না।

গুলশান কার্যালয়ে এক কর্মকর্তা জানান, খালেদা জিয়া কারো সঙ্গেই কথা বলছেন না। খাওয়া-দাওয়া করছেন না। নিজ কামরায় শুয়ে থাকছেন এবং সময়মতো নামাজ পড়ছেন। এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে শোকাহত মানুষের শোক জানানো অব্যাহত রয়েছে। গত ২ দিনের মতো গতকালও শোকে মুহ্যমান বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রতি সমবেদনা জানাতে এবং শোক বইয়ে স্বাক্ষর করতে গুলশান কার্যালয়ে ভিড় করছেন স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীসহ সর্বস্তরের জনগণ। সোমবার দিনব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ জনগণকে লাইনে দাঁড়িয়ে শোক বইতে স্বাক্ষর করতে দেখা গেছে। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকরা শোক বইতে স্বাক্ষর করেছেন। গুলশান কার্যালয়ে শোক জানাতে আসা কূটনৈতিকদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত নরওয়ের রাষ্ট্রদূত ম্যারি তুলুন্ডিমু, নেপালের মিনিস্ট্রি অব কাউন্সিলর সুশীল, ফিলিপাইনের রাষ্ট্রদূত ভিনসেন্ট আবু বান্দালি, স্পেনের রাষ্ট্রদূত লুইস তেজেদা, তুরস্কের রাষ্ট্রদূত হুসেইন মোফতলঘু, কুয়েতের রাষ্ট্রদূত আলী ইব্রাহিম ও সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাসের এক কর্মকর্তা।

বিকাল ৫টায় গুলশান কার্যালয়ে শোক জানাতে যান জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমেদ। শোক বইয়ে সই করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এই শোকের সময় তিনি পাশে আছেন। তার ছেলের মৃত্যুতে তিনিও শোক জানান। এছাড়া বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আনোয়ারুল উল্লাহ চৌধুরী, মুসলিম লীগের সভাপতি নূরুল হক মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, শনিবার দুপুরে মালয়েশিয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরাফাত রহমান কোকে। তার বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর। কোকোর মৃত্যুতে সোমবার থেকে দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, দলীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং নেতাকর্মী কালোব্যাজ ধারণ করে ৩ দিনব্যাপী শোক পালন করছে। এ ৩ দিন সারাদেশের মসজিদে মসজিদে কোরআনখানি ও দোয়া মাহফিল হবে।