কাল থেকে কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে ৩৬ ঘণ্টার হরতাল

বিচ্ছিন্ন সহিংসতার মধ্যদিয়ে ২০ দলের ডাকা হরতাল পালিত

 

স্টাফ রিপোর্টার: বিচ্ছিন্ন সহিংসতার মধ্যদিয়ে ২০ দলের ডাকা ৩৬ ঘণ্টার হরতাল শেষ হয়েছে। হরতালের দ্বিতীয় দিন গতকাল সোমবার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশের গুলি ও ঝটিকা মিছিলের ঘটনা ঘটে। হরতালের পাশাপাশি অবরোধেরও ২১তম দিন শেষ হয়েছে। বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওসহ বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ২০-৩০ জন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ৪০ যানবাহনে। যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে ২০ দলের সাড়ে ৩ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। হরতালে দূরপাল্লার যানবাহন কম চললেও অভ্যন্তরীণ রুটে সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল ছিলো স্বাভাবিক। সিডিউল বিপর্যয় অব্যাহত থাকলেও ট্রেন চলাচল করেছে।

ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মো. আফজাল হোসেন ও চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ধ্রুব বণিকের বাসায় আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা ধ্রুব বণিককে হত্যার উদ্দেশে ওই আগুন দেয়া হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি ট্রাকবহরে হামলা চালিয়ে ৭-৮টি ট্রাক ভাঙচুর করা হয়। ছাত্রদল নেতাকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহে বুধবার ভোর ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে। এদিকে বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগে ২৪ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে ২০ দল।

ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার নামে মামলা দায়েরের প্রতিবাদে ও ২০ দলীয় জোটের ডাকা ৩৬ ঘণ্টার হরতাল সমর্থনে ঝিনাইদহে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা বিএনপির নেতাকমীরা। গতকাল সোমবার সকালে শহরের আরাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে জেলা বিএনপির সভাপতি মসিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি মিছিল বের হয়। পরে তেলপাম্পের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। এসময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক, বিএনপি নেতা জাহিদুজ্জামান মনা ও এমএ মজিদ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার নামে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

এদিকে নাশকতার আশঙ্কায় ঝিনাইদহে বিএনপির ছয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে শৈলকুপা উপজেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাক আহমেদ রয়েছেন। ঝিনাইদহ সহকারী পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম জানান, রোববার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়।

মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধে নাশকতার আশঙ্কায় মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ৭ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এরা হচ্ছেন- কেদারগঞ্জ বাজারের মোকাদ্দেস হোসেন (৪৫), গৌরীনগর গ্রামের আলী হোসেন (৩৫), মোনাখালী আজিল মালিথা (৪০), গোপালনগর গ্রামের ফারুক শেখ (২৭), আনারউদ্দীন (৪২), রফিক শেখ (৪০) ও রহিদুল ইসলাম (৩৫)।

মেহেরপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, নাশকতা প্রতিরোধে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যহত রয়েছে। অভিযানের অংশ হিসেবে রোববার রাতে বিভিন্ন স্থান থেকে সন্দেহজনক ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। আটকৃতদের মধ্যে মোকাদ্দেস হোসেনকে পুলিশের ওপর হামলা মামলায়, নাশকতার মামলায় আলী হোসেন, আজিল মালিথাকে এবং নাশকতার আশঙ্কায় কার্যবিধির ১৫১ ধারায় বাকিদেরকে গতকালই মেহেরপুর আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।

মেহেরপুরে বিএনপি-জামায়াতের ৯ কর্মী সমর্থক আটক

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, ২০ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধে নাশকতার আশঙ্কায় ৯ জন বিএনপি-জামায়াত কর্মী সমর্থককে আটক করেছে মেহেরপুর পুলিশ। গত রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে জেলার গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে গাংনী থানা পুলিশ দুজন বিএনপি, মুজিবনগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে মুজিবনগর থানা পুলিশ ৬ জন বিএনপি ও একজন জামায়াত কর্মীকে আটক করেছে।

মেহেরপুরের পুলিশ সুপার হামিদুল আলম জানান, ২০ দলের ডাকা চলমান অবরোধের সাথে ৩৬ ঘণ্টা হরতালের ডাক দেয়ায় জেলায় নাশকতায় আশঙ্কায় তাদের আটক করা হয়েছে। কার্যবিধির ১৫১ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে সোমবার সকালে তাদের মেহেরপুর জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে সোমবার ভোর থেকে অবরোধের সাথে হরতালের ডাক দেয়ায় আন্তঃজেলা ও দুরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিলো। তবে ব্যক্তিগত যানবাহন, অবৈধ যান নসিমন, করিমন, আলগামন, ইজিবাইক চলাচল ছিলো স্বাভাবিক। দোকানপাটও খোলা ছিলো। হরতালের পক্ষে-বিপক্ষে কাউকে কোনো মিছিল বা পিকেটিং করতে দেখা যায়নি। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন ছিলো।