মহেশপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে টিআর প্রকল্পের ৬ লাখ টাকার চাল আত্মসাতের অভিযোগ

 

ঝিনাইদহ অফিস: বরাদ্দ পেয়ে বাস্তবায়ন দেখিয়ে মাস্টাররোল দাখিলের এক বছর পর বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানতে পারলেন তাদের প্রতিষ্ঠানে টিআর প্রকল্পের সাড়ে ৬ লাখ টাকার চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা অত্যন্ত গোপনে উত্তোলন করে বিক্রির মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম। তিনি নিজে প্রকল্পের সভাপতি হয়ে বিদ্যালয়ের মাঠে মাটি ভরাট, চেয়ার-টেবিল তৈরি, সংস্কার ও জানালা-দরজা তৈরির জন্য বরাদ্দ এ চাল বিক্রির টাকা পকেটস্থ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

জহুরুল ইসলাম ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মহেশপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি দাবি করেছেন, সাবেক প্রধান শিক্ষক খায়রুল আনাম কিছু কাজ করে টাকা বাকি রেখে গিয়েছিলেন। যে টাকা তাকে পরিশোধ করতে হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকে সেই টাকা পরিশোধ করেছেন। তবে খায়রুল আনাম কোনো কাজ করিয়ে টাকা বাকি রেখে আসেননি বলে জানিয়েছেন। তিনি যে কাজ করেছেন তা সবই বিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে করেছেন।

মহেশপুর উপজেলা প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে এক বরাদ্দপত্রে চারটি প্রকল্প দেখিয়ে ২০ মে. টন চাল বরাদ্দ দেন সাবেক সাংসদ শফিকুল আজম খাঁন চঞ্চল। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসের দিকে ০১, ২৩, ৪৩ আর ৯০নং প্রকল্পে এই বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিটি বরাদ্দে ছিলো ৫ মে. টন করে চাল। আর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সবগুলোর সভাপতি হন প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম নিজেই। পরে এ চাল উঠিয়ে বিক্রি করেন প্রধান শিক্ষক। যার কোনো খবরই পাননি বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা।

একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মহেশপুর উপজেলা শহরের প্রধান শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান মহেশপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এখানে ৭ শতাধিক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন ২৯ জন। এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছে নানা সমস্যা। তার মধ্যে চেয়ার-টেবিল আর বেঞ্চ সঙ্কট রয়েছে। এ সকল কাজের জন্য তারা সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খাঁনের সাথে প্রায়ই যোগাযোগ রক্ষা করতেন। তিনি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে ২০ মে. টন চাল বরাদ্দ দেন। কিন্তু তারা এ বরাদ্দের পর আর কিছুই জানতে পারেননি। প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম গোপনে মাল তুলে বিক্রি করে আত্মসাৎ করেছেন। বিদ্যালয়ের কোনো কাজ করেননি। এই বরাদ্দের টাকায় করা হয়নি চেয়ার-বেঞ্চ তৈরি, হয়নি ভবন সংষ্কার। মাঠের মাটি ভরাটও করা হয়েছে বিদ্যালয়ের নিজস্ব তহবিল থেকে। শিক্ষকরা আরো জানান, কাজ না হওয়ায় তারা এতোদিন ভেবেছেন সংসদ সদস্য কোনো বরাদ্দ দেননি। কিন্তু অতি সম্প্রতি বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়। তারা কাগজপত্র যাচাই করে দেখতে পান একই সময়ে চারটি প্রকল্পে ২০ মেট্রিক টন করে চাল বরাদ্দ রয়েছে।

এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলামের নিকট অন্য শিক্ষকরা জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে বাধ্য নন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। শিক্ষকরা জানান, এ বরাদ্দ পাওয়ার পর বিদ্যালয় থেকে কমিটি গঠনের মাধ্যমে সেই অর্থ খরচ করার কথা। কিন্তু তার কিছুই করা হয়নি।

মহেশপুর উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা শুভাগত বিশ্বাস জানান, ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে এই চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে মর্মে মাস্টাররোল দাখিল করা হয়েছে। কাজ হয়েছে কি-না তিনি বিষয়টি বলতে পারেন না। তার যোগদানের পূর্বে এই প্রকল্প চারটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে গেলে অনেক কিছু করতে হয়। এ বরাদ্দের টাকাও তিনি প্রয়োজন মতো খরচ করেছেন। কোনো টাকা আত্মসাৎ করেননি। বিষয়টি গোপনে হয়েছে কথাটিও টিক নয় বলে দাবি করেন।