কালীগঞ্জে ৩০ হাজার টাকার দাবি পূরণ না করায় কৃষকের বাড়িতে তালা

বাবা-মা আর স্ত্রী নিয়ে রাত কাটাচ্ছেন অন্যের বারান্দায়

 

ঝিনাইদহ অফিস: দাবিকৃত ৩০ হাজার টাকা না পেয়ে কৃষক আনোয়ার হোসেনের বাড়ির প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে এক আওয়ামী লীগ কর্মী। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে যখন তারা ঘরে বসে খাবার খাচ্ছিলেন তখন তাদের বের করে দিয়ে এই তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এখন কৃষক আনোয়ার হোসেন বৃদ্ধ বাবা-মা আর স্ত্রীকে নিয়ে অন্যের ঘরের বারান্দায় রাত কাটাচ্ছেন। কৃষক আনোয়ার হোসেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার সোনালীডাঙ্গা গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে।

কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, তার জমির সীমানার মধ্যে ছিলো আব্দুল ওয়াদুদের একটি ঘর। আব্দুল ওয়াদুদ আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী। তিনি বেশ কিছু দিন থেকেই এই ঘরটি সরিয়ে নেয়ার জন্য আব্দুল ওয়াদুদকে অনুরোধ করে আসছিলেন। কিন্তু তিনি ঘর না সরিয়ে আনোয়ার হোসেনের ওপর ক্ষিপ্ত হন। আনুমানিক দেড় মাস আগে আব্দুল ওয়াদুদ তার মাটির ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। সেখানে যাওয়ার পর তার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন। বলেন ঘর সরাতে তার এই টাকার ক্ষতি হয়েছে।

আনোয়ার হোসেন জানান, এ টাকার জন্য তার ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিলো। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, কিছু টাকা তিনি দেবেন তবে সময় দিতে হবে। এ টাকা না দেয়ায় ৩/৪ দিন আগে আব্দুল ওয়াদুদ আবার বাড়ি ফিরে এসেছেন। একটি টিনের ঘর দিয়ে তার পথ আটকে দিয়েছেন। পাশাপাশি মঙ্গলবার বিকেলে তার বাড়ি বাড়ির প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এ সময় তিনি ঘরে বসে খাওয়া-দাওয়া করছিলেন। তাকে তাড়িয়ে বের করে দিয়ে এই তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়। আনোয়ার হোসেন আরো জানান, ঘরে তালা ঝুলানোর পর তাকে নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। যে কারণে রাতে তিনি অন্যত্র ছিলেন। আর তার বৃদ্ধা বাবা লাল মিয়া, মা হামিদা বেগম ও স্ত্রী বর্ষা বেগম অন্যের ঘরের বারান্দায় রাত কাটিয়েছেন।

সোনালীডাঙ্গা গ্রামের বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বললে বিষয়টি নিয়ে কেউ মুখ খুলতে চাননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি জানান, আনোয়ার হোসেনের জায়গার মধ্যে আব্দুল ওয়াদুদের ঘর পড়েছে। এটা নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নেয়া উচিত। তিনি নিজে ঘর সরিয়ে এখন সরানো খরচ বাবদ অন্যের কাছে টাকা দাবি করা হচ্ছে। এটা ঠিক হয়। আব্দুল ওয়াদুদ আওয়ামী লীগের কর্মী হওয়ায় গ্রামের আওয়ামী লীগ সমর্থকরা এই টাকা দেয়ার বিষয়টি বিএনপিকর্মী আনোয়ার হোসেনের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। অবশ্য সোহেল রানা ওরফে মুক্তি নামের এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগকর্মী জানান, আনোয়ার টাকা দিতে চেয়ে দিচ্ছেন না। যে কারণে তালা লাগানো হয়েছে। এটা একার নয় অনেকের সিদ্ধান্তে হয়েছে।

এ ব্যাপারে আব্দুল ওয়াদুদ জানান, আনোয়ার হোসেনের জমিতে তার ঘর পড়ে যাওয়ায় সে নিজেই ঘর ভেঙে দিয়েছে। আর অন্যত্র ঘর করার জন্য ৩০ হাজার টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করেছে। এখন টাকা দিচ্ছে না। যে কারণে তিনি ঘরে তালা দিয়েছেন। টাকা পেলে ঘর খুলে দেবেন বলে জানান তিনি।