নাশকতা ও সহিংসতা সহায়ক খবর প্রচার করবে না টিভি

স্টাফ রিপোর্টার: চলমান হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরে সহিংসতা ও নাশকতা প্রতিরোধে সরকারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন টেলিভিশন মালিকরা। নাশকতা ও সহিংসতা-সহায়ক খবর প্রচার করা হবে না বলেও অঙ্গীকার করেছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সিনিয়র মন্ত্রী, বিভিন্ন ইলেট্রনিক মিডিয়ার মালিক ও কর্মকর্তাদের এক মতবিনিময় বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় জীবনে বিবেকের তাড়নায় সন্ত্রাস, সহিংসতা ও নাশকতা প্রতিরোধে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মালিক ও কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান সরকারের এ সিনিয়র মন্ত্রীরা। বৈঠকের পর মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী অঞ্জন চৌধুরী, একাত্তরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হোসেন বাবু এবং বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল সংবাদমাধ্যম কর্মীদের সাথে কথা বলেন।

তারা জানান, সহিংসতা ও নাশকতার বিরুদ্ধে সরকারকে সহযোগিতা করতে খোলামেলা কথা হয়েছে আমাদের। আমরা সবাই একমত হয়েছি, কোনো বিষয়ে যেন সেনসেশন তৈরি না করি!
বৈঠকের পর অঞ্জন চৌধুরী বলেন, আলোচনার বিষয় ছিলো, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কী দায়িত্ব, তা নিয়ে। বর্তমানে দেশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, এখানে আমাদের যে ভূমিকা, তা আমরা কীভাবে পালন করছি।

তিনি বলেন, বৈঠকে যা উঠে এসেছে, তা হলো, যা সত্য তা তুলে ধরার জন্য মন্ত্রীরা অনুপ্রাণিত করেছেন। বিএনপির অবরোধ-সহিংসতার বিষয়ে তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, এটা আন্দোলন নয়, নাশকতা। অঞ্জন চৌধুরী বলেন, আমরা দেশের জন্য যা ক্ষতিকর, তা অবশ্যই করবো না। আবারো বলছি, আন্দোলন নয়, এটা নাশকতা। শুধু মিডিয়াপারসন হিসেবে নয়, দেশবাসী হিসেবেও স্বীকার করেছি। দেশে যেভাবে নাশকতা হচ্ছে, তা যদি আমরা উৎসাহিত করি, তাতে বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি হবে। এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।

এছাড়া ভারতীয় চ্যানেল বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি। একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল হোসেন বাবু বলেন, আমরা সবাই একমত হয়েছি, মিডিয়ার অপার শক্তি ব্যবহার করে নাশকতা দমনে রাষ্ট্র ও সরকারের পাশে থেকে আমাদের সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করবো।

তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের কোনো দল নেই। এটা কোনো আন্দোলন নয়, নাশকতা। তাই, নাশকতার বিরুদ্ধে দেশ-জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার ব্যাপারে আমরা সবাই একসাথে কাজ করবো। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সেন্সরশিপ আরোপিত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মোজাম্মেল হোসেন বাবু বলেন, নো, নাথিং। আমাদের ওপর কোনো সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়নি। বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, তারা (মন্ত্রীরা) একটা কথা বলেছেন, সহিংসতা এবং রাজনীতিকে আমরা যেন না মিলিয়ে ফেলি।’

তিনি বলেন, সহিংসতা, সহিংসতা। আর রাজনীতি রাজনীতিই। সহিংসতা যদি রাজনীতি দখল করে নেয়, তাহলে রাজনীতি বিপজ্জনক জায়গায় গিয়ে পড়বে। তিনি বলেন, আমরা বলেছি, আমরা সুষ্ঠু রাজনীতির পক্ষে। আমরা সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারার পক্ষে এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস এবং সহিংসতা একসাথে চলতে পারে না। কাজেই ডিকটেশন বা কোনো নির্দেশনা ছিলো না। এমনকি কোনো অনুরোধও করা হয়নি। এখানে বিষয়গুলো পর্যালোচনা হয়েছে। পর্যালোচনার পর মিডিয়ার মানুষ হিসেবে আমরা একমত হয়েছি, এখন যেগুলো চলছে, তা সহিংসতা। বার্ন ইউনিটের যে চিৎকার, তা জাতির আর্তনাদ। আমরা জাতির আর্তনাদের পক্ষে। আর্তনাদ যারা সৃষ্টি করে, আমরা তাদের বিরুদ্ধে।’

শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, দেশে আন্দোলনের নামে নাশকতা ও সন্ত্রাস চলছে। এ কারণে অনেক কিছুই মানুষের অগোচরে। মানুষ জানতে পারছে না দেশের অবস্থা। আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিভাবে চলছে। মানুষ তা জানতে পারছে না। এই জিনিসগুলো তুলে ধরা এবং পাশপাশি হাইওয়েতে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার গাড়ি ঢাকা থেকে চলাচল করছে বিভিন্ন জায়গায়, এ বিষয়টি মানুষ অবহিত নয়।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দু-একটি বাস পোড়ানো বা ট্রাক পোড়ানো, মানুষের সামনে দৃষ্টিগোচর হচ্ছে। সে কারণে মানুষ মনে করছেন, সারাদেশেই বোধ হয় এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ বিষয়গুলো যাতে সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয় এবং মিডিয়া অনেক বিষয়ে ওয়াকিফহাল ছিলো না, সে বিষয়গুলো শুনেছেন মিডিয়ার প্রতিনিধিরা। তিনি বলেন, তাদের কাছে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছি। তারা সম্মত হয়েছেন। শিল্পমন্ত্রী বলেন, এটা রাজনীতি নয়, সন্ত্রাস এবং নাশকতা। সন্ত্রাস রাজনীতিকে গাইড করতে পারে না। আদর্শকে স্থাপন করতে পারে না। সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ নাশকতা মানুষকে নিরাপত্তা দিতে পারে না। নিরাপত্তাহীনতা দিতে পারে।

এ কাজটি সরকার বা জনগণের বিরুদ্ধেই নয়, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমেই এটি করা হচ্ছে, আমাদের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, বলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে প্রকৃতপক্ষে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। কিছু সন্ত্রাসীর নাশকতার কার্যকলাপ ছাড়া স্বাভাবিক অবস্থাই তুলে ধরা হবে মিডিয়ায়, এ আলোচনা হয়