দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি এবং

 

বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমলেও আমাদের দেশে কমানো হয়নি। কমানোর সিদ্ধান্তও নেয়া হয়নি। দেশে একবার দাম বাড়লে তার আর কমার আশা থাকে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তথা গত ছয় বছরে সাত দফা বেড়েছে বিদ্যুতের মূল্য। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে ফের মূল্য বাড়াতে দেশের পাঁচটি বিতরণ কোম্পানির করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে গণশুনানি। বিশেষজ্ঞরা বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিপক্ষে মত দিলেও বাংলাদেশ অ্যানার্জি রেগুলেটরি কমিশন বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পক্ষে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম এক বছর আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে এসে ঠেকেছে তাই এখনই মূল্য বৃদ্ধির কোনো যৌক্তিকতা নেই; তখন তা সমর্থনযোগ্য। এটা বিস্ময়কর যে, প্রতিবারই বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর আগে বলা হয়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় উপায়ান্তর না পেয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু এবারে যখন তেলের মূল্য বিশ্ববাজারে কমে গেছে, তখনো কেন মূল্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে? যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন বটে। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, বিদ্যুতের দাম পাইকারি পর্যায়ে বাড়লে ভোক্তা পর্যায়েও তার প্রভাব পড়বে। সাধারণ গ্রাহকদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোতে পড়েছে, পড়ছে। এর মাঝে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি যে মরার ওপর খাড়ার ঘায়ের মতো হবে তা দায়িত্বশীলদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন। এ পর্যন্ত যতোবারই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে, প্রতিবারই দেখানো হয়েছে একই যুক্তি- উৎপাদন ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান। অর্থাৎ উৎপাদন বা ক্রয় মূল্য বেশি ও বিক্রয় মূল্য কম হওয়ায় পিডিবি লোকসান দিচ্ছে। ক্রমাগত লোকসানের কারণে পিডিবি বিপর্যয়ে পড়তে পারে, এমন আশঙ্কাও তো অমূলক নয়। তবে এটাও তো মানতে হবে, পিডিবির লোকসানের অন্যতম কারণ হচ্ছে সিস্টেম লস। আবার এই বিশাল সিস্টেম লসের একটি বড় অংশই ঘটছে মূলত বিদ্যুত চুরির কারণে। অবৈধ সংযোগ দিয়ে লাভবান হয় পিডিবি বা সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিগুলোর এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। রেন্টাল কেন্দ্রগুলোতেও বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যুত চুরি বা সংশ্লিষ্ট অনিয়মগুলোর কিয়দংশও যদি দূর করা যেতো, তাহলে বোধ হয় নতুন করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না।

বিদ্যুত উৎপাদন ও বিতরণ বিভাগের ছিদ্র বন্ধ করতে হবে। সিস্টেম লসের নামে যে চুরির বৈধতা দেয়া হয়েছে, তা বন্ধ করা একদিনে সম্ভব নয়, কমিয়ে আনতে হবে। দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারার দায় গ্রাহকদের ওপর চাপানো যেমন যুক্তিযুক্ত নয়, তেমনই কোনো ভুল নীতির কারণে উৎপাদন খরচ বাড়লে তার দায়ও দেশের ভোক্তা সাধারণের ওপর কেনো চাপানো উচিত নয়। যদিও ক্রমাগত লোকসান দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান টিকতে পারে না। লোকসানের জন্য অন্যতম কারণগুলো খুঁজে বের করে বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে। যেমন লোকসান কমাতে হবে, তেমনই গ্রাহকদেরও বাস্তবতাও উপলব্ধিতে নেয়া দরকার।