স্ত্রীর পরকীয়ায় প্রাণ গেলো এসআই আকরামের

স্টাফ রিপোর্টার: স্ত্রীর পরকীয়ায় অকালে জীবন গেলো পুলিশের এসআই আকরাম হোসেনের। আকরাম ঝিনাইদহ শহরতলি হামদহ এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার স্ত্রী ও স্ত্রীর প্রেমিক মুন ষড়যন্ত্র করে আকরামকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়। পরে আহত অবস্থায় চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান আকরাম। এ ঘটনায় আকরামের বোন জান্নাত আরা পারভীন রিনি বাদী হয়ে ঝিনাইদহ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৪ জনকে আসামি করে ২০ জানুয়ারি একটি মামলা করেন। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

মামলার এজাহারসূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ভগবাননগর গ্রামে বশির উদ্দিনের মেয়ে বনানী বিনতে বশিরের সাথে ২০০৬ সালের ১৩ জানুয়ারি বিয়ে হয় পুলিশ অফিসার আকরামের। বিয়ের ২ বছর পর বনানীর কোলজুড়ে আসে একটি কন্যাসন্তান। এরপর থেকে আকরাম চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করেন। সন্তান হওয়ার পর থেকেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়। একপর্যায়ে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দিনের বেশির ভাগ সময় বাড়ির বাইরে থাকায় স্ত্রী বনানী খাতুন নিকট আত্মীয় সাদিমুল হক মুনের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে চাপের মুখে পড়ে স্ত্রী বনানী। গোপনে মোবাইলে কথা বলা, স্বামীর অবর্তমানে লুকিয়ে প্রেমিক মুনের সাথে দেখা করতো বনানী। এরই একপর্যায়ে বনানী আকরামকে অবহেলা ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। বনানীর পরিবারও এ পরকীয়ায় সহযোগিতা করে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু আকরাম একমাত্র শিশুকন্যা আফরিনের কথা চিন্তা করে নীরবে সব সহ্য করতে থাকে। সংসারে অশান্তি শুরু হলে এসআই আকরাম স্ত্রীকে খুশি করতে ঢাকার মগবাজারে একটি বাড়ি কিনে দেন এবং বিমানবন্দরের এসবি শাখায় চাকরির সুবাদে সেখানে বসবাস করেন। পরে ২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর রাত ১১টায় মোটরসাইকেলযোগে যমুনা সেতু হয়ে বাড়ি ফেরার পথে শৈলকুপার বড়দাহ নামক স্থানে পৌঁছুলে স্ত্রী বনানী বিনতে বশির ও তার প্রেমিক মুন ষড়যন্ত্র করে লোকজন নিয়ে তাকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। পরে স্থানীয়রা তাকে মারাত্মক যখম অবস্থায় উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ জানুয়ারি আকরাম হোসেন মারা গেলে স্ত্রী বনানী ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বামীর লাশ এলাকায় নিয়ে আসে এবং দাফনের চেষ্টা করে। তার মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন ছিলো বলে ঝিনাইদহ ও ঢাকার চিকিৎসরা জানিয়েছেন। বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে স্ত্রী বনানী লাশ ফেলে রেখে কন্যাকে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে আকরামের বোন বাদী হয়ে মামলা করেন। আসামিরা পাবনা জেলার ঈশ্বরদী থানার কাছারিপাড়া জামতলার এনামুল হকের ছেলে সাদিমুল হক মুন, স্ত্রী বনানী বিনতে বশির, বনানীর বাবা বশির উদ্দিন বাদশা ও মাতা সেলিনা খাতুন। স্ত্রীর পরকীয়ায় একজন সৎ, যোগ্য ও নিষ্ঠাবান পুলিশ অফিসারের এমন করুণ মৃত্যুতে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে নিহতের পরিবার।