মেহেরপুর তামাকগাছে তৈরি হচ্ছে বিশ্বমানের কম্পোস্ট সার!

মহাসিন আলী: তামাক গাছ এখন আর ফেলনা নয়। তামাক গাছে বিশ্বমানের কম্পোস্ট সার তৈরি হয়। ইতোমধ্যে মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকার চাষিরা এই কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে দ্বিগুনহারে বিষমুক্ত ফসল ঘরে তুলেছেন। এতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বাবদ খরচ কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। যে কারণে মেহেরপুরের চাষিদের কাছে এই সার জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

Meherpur Pic-6

মেহেরপুর শহরের স্টেডিয়ামপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল্লা হেল বাকি ব্রিটিশ-আমেরিকা ট্যোবাকো কোম্পানি লিমিটেডে চাকরির অভিজ্ঞতায় তিনি ইতোমধ্যে চাষিদের এ সার তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। চাষিরা তার দেয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম্পোস্ট সার তৈরি করেছেন। তারা সফলতা পেয়ে খুশি।

মেহেরপুর সদর উপজেলার দফরপুর, খন্দকারপাড়া, শ্যামপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে স্বল্প খরচে এ সার তৈরি হচ্ছে। চাষিরা এ সার বিক্রি ও নিজ জমিতে ব্যবহার করে লাভবান হচ্ছেন। অল্প খরচ ও বিষমুক্ত ফসল তৈরি হওয়ায় চাষিরা এসার তৈরিতে মনোনিবেশ করেছেন।

মেহেরপুর সদর উপজেলার দফরপুর গ্রামের প্রকৌশলী আলহাজ মো. নূরুল ইসলামের নিজস্ব খামার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়। তার কম্পোস্ট পিট। সেখানে তিনি এ সার তৈরি করছেন। এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার ছেলে মামুনুর রশিদ। তিনি সাংবাদিকদের জানান, মাটির গর্তে (মাটির পিট) গোবর, ধঞ্জা, কচুরিপাড়া ও খৈলের সাথে কাঁচা তামাকগাছ এক ইঞ্চি করে কেটে ভালো করে মেশাতে হবে। পরে মিশ্রিত দ্রব্য মাটির গর্তে পলিথিনে রেখে ও পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে দিতে হবে। এভাবে মাটির গর্তে ৭০ থেকে ৭৫ দিন রাখতে হবে। মাঝে একবার উল্টে পুনরায় মাটির গর্তে রেখে দিতে হবে। পরবর্তীতে ওই পিট থেকে সার উত্তোলন করে কম্পোস্ট সার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করা যায়।

তামাক থেকে উৎপাদিত কম্পোস্ট সার কেন এতো গুরুত্বপণর্ণ এমন প্রশ্নের জবাবে, আব্দুল্লাহেল বাকি বলেন, যদিও ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তারপরও তামাক গাছ ফসলের জন্য সার হিসেবে উপযোগী। তিনি বলেন, এই গাছ মাঠের জমিতে ১২০ থেকে ১৩৫ দিন পর্যন্ত থাকে। ওই সময়ে তামাকগাছ মাটি থেকে যে সার মিশ্রিত খাদ্যগ্রহণ করে তা তার দেহে যৌগিক পদার্থ হিসেবে বিদ্যমান থাকে। কাঁচা অবস্থায় ওই গাছ কেটে সার প্রস্তুতের জন্য ব্যবহার করা হলে যৌগিক পদার্থ কম্পোস্ট সারের সাথে মিশে যায়। যা কম্পোস্ট সারে যথেষ্ঠ গুরুত্ব বহন করে। তিনি আরো বলেন, প্রতি বছর মেহেরপুর-কুষ্টিয়া অঞ্চলে বিভিন্ন তামাক কোম্পানির সহযোগিতায় প্রায় ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে তামাকচাষ হয়ে থাকে। তাই এখানে তামাকগাছ পাওয়া সহজলভ্য। এছাড়া এ অঞ্চলে তামাকগাছ দিয়ে তৈরি প্রচুর পরিমাণ বিশ্বমানের কম্পোস্ট সার উৎপাদন করা সম্ভব।

এদিকে সরেজমিনে মেহেরপুর শহরের উপকণ্ঠ খন্দকারপাড়া গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, ১৫ বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ হয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমান নিয়মিত এ এলাকার মাঠ পরিদর্শন করেন। তিনি জানান, এ মাঠের ১৫ বিঘা জমির ভুট্টা ভালো হয়েছে। তার মধ্যে ৩ বিঘা জমির ভুট্টা তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো হয়েছে। কৃষক আব্দুল্লাহ ওই ৩ বিঘা জমিতে তামাকগাছ থেকে তৈরি জৈবসার ব্যবহার করেছেন। তিনি প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রায় ৬০ মণ থেকে ৭০ মণ ভুট্টা উৎপাদন হবে বলে আশা করেন।

এদিকে তামাকগাছ থেকে প্রস্তুতকৃত জৈব সার ব্যবহার করছেন দফরপুর গ্রামের প্রকৌশলী হাজি নূরুল ইসলাম। তিনি বলেন, তার জমিতে ব্যবহার করা হয়েছে তার নিজের বাড়িতে তামাকগাছের তৈরি ওই জৈব সার। এতে তার গম ও সরিষা মাঠের অন্যান্য কৃষকের চেয়ে অত্যন্ত ভালো হয়েছে।

এদিকে তামাকগাছ থেকে তৈরি জৈব সার ব্যবহারে ক্ষেতের ফসলে কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম হচ্ছে বলে আরো জানালেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা খোদাজ্জেল হোসেন।

তামাক গাছ থেকে তৈরি জৈব সার মাটির উর্বতা শক্তি এবং মাটিতে ফলন দ্বিগুন ও উৎপাদিত ফসল বিষমুক্ত হওয়ায় দিন দিন মেহেরপুরের কৃষকদের কাছে এ জৈব সারের চাহিদা বাড়ছে। তবে এ সার তৈরিতে সরকারের সহযোগিতা জরুরি হয়ে পড়েছে।