মুজিবনগরে পরকীয়ার বলি গৃহবধূ মর্জিনা : মামলায় অভিযোগ
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে শেখ শফি: বিদ্যুত স্পৃষ্টে নয়, মেহেরপুর মুজিবনগরের শিবপুর গ্রামের বধূ মর্জিনাকে হত্যা করা হয়ছে। এ মর্মে অভিযোগ তুলে দায়েরকৃত মামলায় বলা হয়েছে, প্রতিবেশী এক যুবতীর সাথে পরকীয়া সম্পর্কের জেরে স্ত্রীর ওপর চলতো নির্যাতন। সংসারে এ নিয়ে লেগেই থাকতো অশান্তির আগুন। দু সন্তানের জননী মর্জিনা খাতুন (৩০) শত চেষ্টা করেও স্বামীকে পরকীয়া থেকে ফেরাতে ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত পরকীয়ার কারণেই তাকে হত্যার শিকার হতে হয়। এ অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের আদেশের ভিত্তিতে ৬ মাস পর গতকাল কবর থেকে লাশ তুলে ময়নাতদেন্তর জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে নিয়েছে পুলিশ। অপরদিকে অভিযুক্ত স্বামী তার পরকীয়াকে নিয়ে অজানা ঠিকানায় পাড়ি জমিয়েছে। গ্রেফতারের জন্য পুলিশ তাদের হন্যে হয়ে খুঁজলেও হদিস মিলছে না।
অভিযোগকারী বলেছেন, পথের কাঁটা পরিষ্কার করতেই স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে স্বামী ইকবাল হোসেন। বিদ্যুতস্পৃষ্টে স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে এমন নাটক সাজিয়ে মরদেহ দাফন করা হয়। তবে শেষ রক্ষা হয়নি ইকবালের। মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে গতকাল বুধবার দুপুরে শিবপুর গ্রাম থেকে মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। পরকীয়া সম্পর্ক ও মৃত্যুর নাটকের অভিযোগে নিহতের ভাই মামলা দায়ের করলে বিজ্ঞ আদালত মরদেহ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। একই সাথে স্বামী ইকবাল হোসেনের নামে হত্যামামলা দায়ের করারও নির্দেশ দেন। আলোচিত এ ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামে।
গত বছরের ২৩ জুলাই স্বামীর বাড়িতে দু সন্তানের জননী মর্জিনার মৃত্যু হয়। বিদ্যুতস্পৃষ্টে মৃত্যু হয়েছে দাবি করে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় দাফন করেন স্বামী ইকবাল হোসেন। এর কয়েকদিন পরে ইকবাল হোসেন তার পরকীয়া প্রেমিকা প্রতিবেশী সুজনা খাতুনকে নিয়ে অজানার উদ্দেশে পাড়ি দেয়। তখন থেকেই পরকীয়ার প্রেমের বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসে। লোকমুখে ছড়িয়ে পড়ে পরকীয়া সম্পর্কের কারণে স্ত্রীকে হত্যা করেছে ইকবাল হোসেন। এ বিষয়টি প্রাথমিক নিশ্চিত হয়ে নিহতের ভাই কোমরপুর গ্রামের মোকলেছ হোসেন বাদী হয়ে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর মেহেরপুর আদালতে মামলা দায়ের করেন। পরকীয়ার সম্পর্ক এবং হত্যাকারী হিসেবে ইকবাল ও তার প্রেমিকার নাম উল্লেখ করেন তিনি। বিজ্ঞ আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে মুজিবনগর থানায় হত্যামামলা দায়েরের নির্দেশ দেন। ২৪ সেপ্টেম্বর মুজিবনগর থানায় হত্যা মামলাটি রেকর্ড হয়।
মুজিবনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি রবিউল ইসলাম জানান, আদালতের নির্দেশে মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালমর্গে প্রেরণ করা হচ্ছে। মরদেহ উত্তোলনের সময় উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজিবুল আলম।
এদিকে স্ত্রীর মৃত্যুর কয়েকদিন পর ইকবাল হোসেন তার পরকীয়া প্রেমিকা সুজনা খাতুনকে নিয়ে আত্মগোপন করেন। তারপর থেকেই তাদের হদিস মিলছে না। তবে তাদের দুজনকেই গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে বলে জানান ওসি রবিউল ইসলাম।