স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০১৪ সালের মতো আবারো মানুষ হত্যায় মেতে উঠেছেন। যখন আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে, ঠিক তখনই হঠাৎ কোনো ইস্যু ছাড়াই তিনি মানুষ খুন করছেন। বিএনপি নেত্রী তার ঘরবাড়ি ছেড়ে অফিসে বসে মানুষ হত্যার হুকুম দিচ্ছেন। তার হুকুমেই মানুষ পুড়ে মারা যাচ্ছে। তাই তাকে হুকুমের আসামি করে মামলা করা হতে পারে।
গতকাল বুধবার বিকেলে দশম জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সাবেক মন্ত্রী এবি তাজুল ইসলামের এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। হুকুমের আসামি হিসেবে কী ব্যবস্থা নেয়া যায় তা খতিয়ে দেখবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারাই ব্যবস্থা নেবে। তিনি আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট ২০১৪ সালে নির্বাচন বানচাল করার নামে অনেক বাড়িঘর পুড়িয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে। দুর্ভাগ্য দেশের মানুষ যখন শান্তির পথ দেখছে, ঠিক সেই সময় আবারো মানুষ হত্যা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ভীত হয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট নাশকতামূলক কাজ এবং অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। সাধারণ মানুষের কোনো সমর্থন না পেয়ে তারা আরো নাশকতামূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। তারা বিবেকবর্জিতভাবে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করছে, কোথাও যাত্রীবাহী গাড়িতে গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড ১৯৭১ সালের পাক সেনাবাহিনীর নৃশংসতাকেও হার মানিয়েছে অভিযোগ করে সংসদ নেতা বলেন, তারা আগুন দিয়ে নারী, শিশুসহ নিরীহ মানুষকে নির্মমভাবে পুড়িয়ে হত্যা করছে। সম্প্রতি একজন গর্ভবতী মহিলা তাদের নাশকতার শিকার হয়েছেন, তার শরীরের অধিকাংশ জায়গা পুড়ে গেছে এবং গর্ভের শিশুটিও মারা গেছে। এটা কোন রাজনীতি প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর।
শেখ হাসিনা বলেন, সব ধরনের অপরাধী তথা জঙ্গি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ওয়ারেন্টভুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের গ্রেফতার, অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারে পুলিশের অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিলে পুরস্কার: নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য ১ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে সরকার। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বৈঠক শেষে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, যারা বোমা ছুড়বে ও গাড়িতে আগুন দেবে, সাধারণ জনগণ তাদের ধরিয়ে দিলে এক লাখ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, হরতাল-অবরোধে যারা নাশকতা করছে তাদের ধরিয়ে দেয়ার জন্য বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিতে পুরস্কারের সুনির্দিষ্ট অঙ্ক ঘোষণার জন্যও ওই সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে বলেন তিনি। এর আগে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান নাশকতাকারীদের ধরিয়ে দিলে পুরস্কার দেয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। তবে পুরস্কারের মূল্য কতো হবে, তা পরে জানানো হবে বলে তিনি জানিয়েছিলেন।
আমির হোসেন আমু বলেন, বিএনপি জোটের অবরোধে নাশকতা ঠেকাতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গঠিত স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কমিটিকে আরও শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গত কয়েক দিনে নাশকতার আশঙ্কায় সারাদেশে সাত হাজার ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের সবাইকে ধরা হয়েছে নাশকতার ঘটনাস্থল থেকে। খালেদা জিয়া যে শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চান- এটাই আমরা প্রমাণ করে দিচ্ছি।
আমির হোসেন আমু বলেন, গত মঙ্গলবার রাতেও ঢাকা মহানগর থেকে ১৫৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়, যার মধ্যে ১৩৪ জন বিএনপির, বাকিরা জামায়াত-শিবিরকর্মী। এতেই প্রমাণিত হয় খালেদা জিয়া মিথ্যা বলছেন। তবে তার মনে রাখা উচিত পেট্রোল বোমা মেরে দাবি আদায় করা যায় না। শিল্পমন্ত্রী বলেন, ডিসি (জেলা প্রশাসক), এসপিসহ (পুলিশ সুপার) বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আমাদের আইনশৃঙ্খলা কমিটি রয়েছে। সকল নির্বাচিত প্রতিনিধি, গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের সকল পক্ষকে যুক্ত করে এ কমিটি আরও শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে শান্তি স্থাপনের জন্য নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। শিল্পমন্ত্রী বলেন, সভায় পরিস্থিতি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবেচনা করে আমরা মোটামুটি সন্তোষ প্রকাশ করার মতো একটি অবস্থায় এসেছি। কারণ ওনাদের (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মধ্যদিয়ে আজ আমরা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি লক্ষ্য করছি।
গ্রেফতারের বিবরণ তুলে ধরে আমির হোসেন বলেন, নাশকতার আশঙ্কায় অবরোধের মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ১৫৪ জন গ্রেফতার হয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপির ১২৫ জন, জামায়াত-শিবিরের ২৭ ও অন্য দলের দুজন রয়েছেন। এছাড়া সারাদেশে যে সাত হাজার ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে তার মধ্যে ঢাকা রেঞ্জে বিএনপির ১৩৪ জন, জামায়াত-শিবিরের ১৮ জন, চট্টগ্রাম রেঞ্জে বিএনপির ১২০ জন, জামায়াত-শিবিরের ২৮ নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। রাজশাহী রেঞ্জে বিএনপির ৭৬ জন ও জামায়াত-শিবিরের ৩৩ জন, রংপুর রেঞ্জে বিএনপির ৩৮ জন ও জামায়াত-শিবিরের ৬০ জন, খুলনা রেঞ্জে বিএনপির ১১৭ জন ও জামায়াত-শিবিরের ৩৫ জন এবং বরিশাল রেঞ্জে বিএনপির ২২ জন ও জামায়াত-শিবিরের একজন, সিলেট রেঞ্জে বিএনপির ৩৫ জন ও জামায়াত-শিবিরের ১৩ জন, রেলওয়ে রেঞ্জে বিএনপির তিনজন ও জামায়াত-শিবিরের তিন নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। হাইওয়েতে এখন পর্যন্ত কোনো গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি। নাশকতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকা অবস্থায় স্পট এবং এর আশপাশের এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান শিল্পমন্ত্রী।
সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে দাবি করে আমির হোসেন আমু ১৬ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকার সাথে বিভিন্ন জেলার যান চলাচলের সার্বিক চিত্র সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, এ সময় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৭ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬৬ হাজার গাড়ি (বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, অয়েল ট্যাঙ্কার, জিপ) হাইওয়ে দিয়ে ঢাকায় এসেছে এবং ঢাকা থেকে বিভিন্ন স্থানে ছেড়ে গেছে।
সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য বিএনপি মানুষের কাছে পরিত্যক্ত দাবি করে আমির হোসেন আমু বলেন, মানুষের ধারণা তাদের রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাদের রাজনীতি মানুষ গ্রহণ করছে না। সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং ডিজিএফআই, এনএসআই, এসবি, কোস্টগার্ড ও আনসারের প্রধানসহ কমিটির সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।