নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হোন : প্রয়োজনে পুলিশ আরো কঠোর হবে
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলায় এক সদস্যর গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ প্রশাসন। হামলার একদিন পরই খুলনা বিভাগের পুলিশ ও র্যাবের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা চুয়াডাঙ্গা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। পাশিপাশি নৈরাজ্য ও নাশকতা প্রতিরোধে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করেছেন। সভায় সাধারণ মানুষকে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজ এসএম মনিরউজ্জামান বলেছেন, মুষ্টিমেয় কিছু অসাধু ব্যক্তি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। সাধারণ মানুষ জেগে উঠলে ওদের দাঁড়ানোর স্থান থাকবে না।
গতকাল বুধবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা শহরের শহীদ হাসান চত্বরের মুক্তমঞ্চে নৈরাজ্য প্রতিরোধে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খুলনা বিভাগীয় পুলিশের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) এসএম মনিরউজ্জামান (বিপিএম) বলেন, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আরো কঠোর অবস্থানে যাবে পুলিশ। তিনি বোমা, ককটেল ও গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগকারীদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, আর কোনো অরাজকতা বরদাস্ত করা হবে না। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পুলিশকে যা যা করার দরকার এখন থেকে তাই করবে পুলিশ।
খুলনা পুলিশের সর্বোচ্চ এ কর্মকর্তা বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলাকারীদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। দুষ্কৃতীকারীদের ধরে পুলিশে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি উপস্থিত সুধীজনদের উদ্দেশে বলেন, বাঙালি জাতি জেগে উঠতে জানে। যার প্রমাণ ৭১ সাল। তিনি আরেক বার বাঙালি জাতিকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে প্রতিটি পাড়ায় মহল্লায় প্রতিরোধ কমিটি গঠনেরও আহ্বান জানান।
চুয়াডাঙ্গায় মঙ্গলবার রাতে পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মনিরউজ্জামান বলেছেন, যদি মনে করেন পুলিশের ওপর হামলা করে আপনারা পার পেয়ে যাবেন তাহলে ভুল করবেন। মাটির নিচে লুকিয়ে থাকলেও আপনাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে চুয়াডাঙ্গা পুলিশসহ সারাদেশের পুলিশ নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে বলেও উল্লেখ করেন এ কর্মকর্তা।
বক্তব্য দিতে গিয়ে খুলনা বিভাগীয় র্যাব-৬’র কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আরিফ সুমন বলেন, যারা গাড়িতে আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারতে পারে তারা দেশ ও জাতির শত্রু। এসব শত্রুকে চিহ্নিত করে দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। তিনি এসব নাশকতাকারীদের প্রতিরোধে সবার সহযোগিতা চান। খুলনা বিভাগীয় পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপুলিশ পরিদর্শক দিদার আহম্মেদ বলেন, পুলিশ সততা ও নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করছে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি পুলিশ সদস্যদের ওপর জঙ্গি স্টাইলে হামলা হয়, তাহলে পুলিশ কি বসে থাকবে? তিনি বলেন এখন থেকে পুলিশ আর মুখ বুঝে হামলা সহ্য করবে না, আঘাত এলেই প্রতিঘাত করা হবে।
পুলিশের আরেক অতিরিক্ত উপমহাপুলিশ পরিদর্শক খন্দকার রফিকুল ইসলামও তাদের পূর্বসারির বক্তাদের বক্তব্য অনুসরণ করেন। তিনি বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক ডামাডোলে পুলিশকে দিন-রাত সমানতালে ডিউটি করতে হচ্ছে। অথচ আমাদের ওপরই যদি হামলা হয় সেটি দুঃখজনক।
মতবিনিময় সভায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মো. দেলোয়ার হোসাইন বলেন, এমন কোনো পরিস্থিত দেশে সৃষ্টি হয়নি যার জন্য জ্বালাও পোড়াও করতে হবে। দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছে তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তাকারী চুয়াডাঙ্গা-৬ বিজিবির অতিরিক্ত পরিচালক মেজর আনোয়ার জাহিদ তার বক্তব্যে বলেন, দেশের অন্য জেলার চেয়ে চুয়াডাঙ্গার পরিস্থিতি অনেক ভালো। কিন্তু এ ভালো যারা রাখতে চান না তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে বেসামরিক প্রশাসনকে আমরা সবধরনের সহযোগিতা করবো।
চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন অনেক দূরদর্শিতামূলক বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের বিগত দুটি মেয়াদে চুয়াডাঙ্গায় রাজনৈতিক সহিংসতা হয়নি। আমরা সব সময় শান্তি চেয়েছি, এখনও চায়। তিনি বলেন অর্থনৈতিকভাবে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, এটি একটি মহল চায় না। আর এজন্য তারা দেশব্যাপি গাড়িতে আগুন, মানুষ জীবন্ত হত্যায় মেতে উঠেছে। তিনি চুয়াডাঙ্গায় পুলিশের গাড়িতে বোমা হামলার প্রসঙ্গ টেনে বলেন কি অপরাধ ছিলো পুলিশ কনস্টেবল জিন্নাত আলীর। তার ওপর হামলা চালানো হলো। তিনি নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের উদ্দেশে বলেন, শান্ত চুয়াডাঙ্গাকে অশান্ত করতে যাবেন না। তাহলে পালানোরও পথ খুঁজে পাবেন না।
চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনো জায়গা হবে না। যেকোনো বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশের গাড়িতে হামলায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
নৈরাজ্যর পথ পরিহার করে শান্তি ও অগ্রযাত্রার পথে আসুন এমন আহ্বান জানিয়ে সভায় আরো বক্তব্য দেন, আরআরএফ’র খুলনা বিভাগীয় কমাডেন্ট অফিসার নাজমুল হক, চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা, খুলনা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, ঝিনাইদহের আলতাফ হোসেন, র্যাব-৬’র মেহেরপুর ক্যাম্প কমান্ডার এএসপি রমজান আলী ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাস।
চুয়াডাঙ্গা কমিউনিটি পুলিশিঙের আয়োজনে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় শেষে ডিআইজি এসএম মনিরউজ্জামান থানা চত্বরে গণমাধ্যম কর্মীদেরকে ব্রিফ করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন। তিনি সংবাদিকদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে কলম ধরে জনমত সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে বলেন, মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে সাংবাদিকদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। স্বাধীনতার এতোদিন পর আবারও অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়েছে। তারা সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে। অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। পুলিশ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার কাজে নিয়োজিত। পুলিশ এ দায়িত্ব পালনে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজনে আরো কঠোর হয়ে পুলিশ জনগণের এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করবে। এ কাজে অবশ্যই সমাজের সাংবাদিকমহলের সহযোগিতা দরকার। পুলিশের ত্রুটি যেমন সাংবাদিকদের কলমে উঠে আসে, তেমনই সমাজের নৈরাজ্যসৃষ্টিকারীদের অপতৎপরতা তুলে ধরে শান্তিপূর্ণ সুন্দর সমাজ গঠনে সাংবাদিকদের অবদান রাখতে হবে।
চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিকদের মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেন। খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি বলেন, রাজনৈতিক কোনো সমস্যা হলে তা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান হবে। আমরা যারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করা। আমাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বই আমরা পালন করছি। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সিভিল প্রশাসনের যৌথ অভিযানের মধ্যদিয়ে দুষ্কৃতীমুক্ত সমাজ গঠনের চেষ্টা চলছে। এ কাজে সকলে সহযোগিতা করুন। জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে কলম ধরুন।