তাই বলে উভয়কেই কি একই রকম হলে চলে?

 

ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব অনেক সময় গ্রাম্য গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্বে রূপ নেয়। এতে সম্ভাবনাময়ী বহু জীবন বিপন্ন হয়। উচ্ছন্নে যায় বহু পরিবার। চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার পল্লি চারুলিয়া গ্রামটি যেমন রুহুল ও রজবের জন্য বহুল আলোচিত হয়েছে, তেমনই দুজনের বিরোধের খেসারত দিয়েছে অসংখ্য মানুষ। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামেরও বিবাদমান দু পক্ষের রেষারেষি তথা জেদাজেদি শেষ পর্যন্ত কতোজনের প্রাণহানির পর থামবে, কে জানে? গত রোববার বিকেলে ছয়ঘরিয়ার সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম খুনের পর এরকমই শঙ্কাযুক্ত মন্তব্য অনেকের। কারণ, বিগত দিনেও রক্ত ঝরেছে। সিরাজুল খুন তারই জের? অনেকের মন্তব্য ও খুনের যে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, তাতে ওই প্রশ্নের জবাব যে হ্যাঁ সুচক তা অস্বীকার করবেন কীভাবে?

চারুলিয়ার রুহুল-রজব বিরোধে জড়িয়ে দু পক্ষের কেউ-ই ভালো থাকেনি। হানাহানিতে যেমন ঝরেছে উভয়পক্ষের রক্ত, তেমনই মামলার পাহাড় জমেছে। কখনো আত্মগোপন, কখনো জেলহাজত। অথচ দুজনেরই কৈশোর ছিলো সম্ভাবনার উজ্জ্বলতায় ভরপুর। বাড়ির উঠোন দিয়ে মোষ নেয়া নিয়ে যে বিরোধের সূত্রপাত সেই বিরোধ খুন পাল্টা খুনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, পাল্টাপাল্টি অস্ত্রধারী দলভুক্ত জেদের অন্ধত্ববরণে মেতেছে উন্মত্ততায়। ওরকম জেদে জগতের কেউই কোনোদিন ভালো থাকেনি। কারণ মেধাশক্তির বদলে পেশিশক্তি প্রয়োগ পশুত্বেরই প্রকাশ।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের ছয়ঘরিয়া গ্রামের দু পক্ষের বিরোধ দীর্ঘদিনের। চারুলিয়ার মতো অতোটা ভয়াবহ বিরোধপূর্ণ না হলেও কখনো কোনো পুলিশ কর্তার বলে বলিয়ান হয়ে একপক্ষ অপরপক্ষকে ঘায়েল করার নেশায় মেতে উঠেছে বলে যেমন অভিযোগ উঠেছে, তেমনই অপর পক্ষ রাজনীতির বলে বলিয়ান হয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অবৈধ অস্ত্রধারীদেরও আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে পিছুপা হয়নি বলে মাঝে মাঝেই জোরালো জনশ্রুতি উঠেছে। লাভ কি কোনো পক্ষের হয়েছে? জেদের বশবর্তী হয়ে অন্যায়ের বদলা নিতে অন্যায় পথে হেঁটে কখনোই কেউ লাভবান হয় না। যদিও ছাড় দিলে পেয়ে বসে, দুর্বলভাবে বলে দুর্বল যুক্তি তুলে কেউ কেউ হিংস্র হয়ে ওঠেন। অবশ্য আইনের সুষ্ঠু স্বচ্ছ নিরপেক্ষ তথা প্রভাবমুক্ত প্রয়োগের নিশ্চয়তা থাকলে এরকম যুক্তি এতোদিনে সমাজ থেকে নিশ্চয় উবে যেতো। কিছুটা হলেও তাতে আস্থাহীনতা যে সমাজে অশান্তির অন্যতম কারণ তা বলাই বাহুল্য।

পক্ষভুক্ত হলে প্রতিপক্ষ সৃষ্টি হয়। স্বার্থের মোহে মেতে উঠলে অন্যেও স্বার্থ রক্ষার ভিত গড়ে। জন্ম নেয় হিংসা। তারও খেসারত দিতে হয় উভয়কেই। সে কারণে স্বার্থের মোহে অন্ধত্বের বদলে উদারতা শ্রেয়। আর জেদ? নিজেকে প্রতিদিন একটু একটু করে গড়ে তোলা, তথা নিজেকে প্রতিদিন একটু একটু করে জয়ী করে লক্ষ্যে পৌঁছুনোর জেদ নিজেকে যোগ্যতার আসনে বসায়। বদলে প্রতিহিংসার জেদ নানাবিধ যন্ত্রণা তথা অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সে কারণেই প্রতিহিংসার জেদ যতো দ্রুত পরিহার করা যায়, ততোই কল্যাণকর। অবশ্যই এক হাতে তালি বাজে না। তাই বলে উভয়কেই কি একই রকম হলে চলে? ‘তুমি অধম বলে আমি উত্তম হবো না কেন’ যুগজয়ী উক্তি কি কোনো এক পক্ষকে মহৎ হতে শেখায় না? আর নয় হিংসা, হানাহানি। জেদ হোক শান্তি প্রতিষ্ঠার।