মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় কেশর আলু চাষ সম্প্রসারণ হচ্ছে। এক সময়ের অনাবাদি উঁচু জমিতে ওই আলুচাষ করে অনেক কৃষকের ভাগ্য বদল হয়েছে। এখন শীত মরসুমে কেশর আলু বা জলপাই আলুচাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
গাংনী উপজেলার পূর্বমালসাদহ-হাড়িয়াদহ মাঠের এক সময়ের অনাবাদি উঁচু জমিতে বছর বিশেক আশে কেশর আলুচাষ শুরু হয়। স্থানীয়ভাবে এটি জলপাই আলু হিসেবে পরিচিত। দুয়েকজন কৃষক করে সফলতা দেখে ওই মাঠের বেশির ভাগ জমিতে এখন চাষ হচ্ছে জলপাই আলু। লাভজনক ফসল হওয়ায় এখন আর উঁচু জমিতে চাষ সীমাবদ্ধ নেয়। আবাদ ছড়িয়ে পড়েছে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মাঠে ও বাড়ির আঙিনায়। শীতের সবজি একসাথে ওঠায় বেশির ভাগ কৃষক লোকসানে পড়েন। সেই লোকসান পোষাতে অনেকেই অন্যান্য ফসলের মতোই জলপাই আলুচাষ করছেন। এ ফসলে লোকসানের কোনো আশঙ্কা নেই। অন্যান্য ফসলের চেয়ে অনেক লাভজনক একটি ফসল বলে জানান জলপাই আলুচাষিরা।
পূর্বমালসাহ গ্রামের জলপাই আলুচাষি আব্দুল মালেক ও রবিউল ইসলাম জানান, এক বিঘা জমিতে চাষ খরচ ১০-১৫ হাজার টাকা। চলতি বছরে বিঘায় উৎপাদন ৮০ থেকে ১০০ মণ। ক্ষেত থেকে প্রতিমণ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৪০ টাকা। তাতে বিঘাপ্রতি প্রায় ৪০ হাজার টাকার আলু বিক্রি হচ্ছে। সবজি চাষের সাথে আলুচাষের খরচের তুলনা করে আলুচাষিরা আরো জানান, কপি, মূলা, বেগুন, টমেটো, আলুসহ শীতকালীন ফসল আবাদে প্রচুর খরচ করতে হয়। ভালো দাম পেলে লাভ হয় নয়তো বড় ধরনের লোকসান গুনতে হয় চাষিদের। তাই এক সময়ের সবজি চাষি অনেকেই এখন জলপাই আলু বা কেশর আলুচাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে জলপাই আলু বিক্রির দৃশ্য চোখে পড়ে। তাছাড়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রতিদিনই ছোট ছোট ঝুড়িতে আলু বিক্রি করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বাজারে প্রতিকেজি আলু এখন ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, এ আলুর প্রতি ভোক্তাদের বেশ চাহিদা রয়েছে। পুষ্টিকর খাবার হিসেবে এর জুড়ি নেই।
জলপাই আলুচাষের ব্যাপারে চাষিরা বলেন, মালসাদহ মাঠে চাষের শুরুর দিকে ভারতীয় দেবগিরি জাতের বীজের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন চাষিরা। এখন চাষিরা নিজের ক্ষেতেই বীজ উৎপাদন করছেন। শ্রাবণ থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে ক্ষেতে বীজ বপণ করা হয়। অগ্রহায়ণ মাসের শুরু থেকে ফসল তোলা শুরু হয়। আলু তুলে মিষ্টি কুমড়োসহ সহজেই অন্যান্য ফসল চাষ করা যায়।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার মাজেদুল ইসলাম জানান, কৃষিতে জলপাই আলুকে কেশর আলু বলে। এটি একটি অপ্রচলিত ফসল। প্রচলিত ফসলের তালিকায় এ ফসলের নাম নেই তাই চাষের সঠিক পরিসংখ্যান কৃষি অফিসে নেই। তবে পূর্বমালসাদহ বিভিন্ন এলাকায় কেশর আলুচাষ সম্প্রসারণ হচ্ছে বলে জানান তিনি। গ্রীষ্মকালে মানবদেহের পুষ্টি ও পানির চাহিদা মেটাতে এর জুড়ি নেই। তাছাড়া উঁচু জমিতে প্রচলিত ফসল উৎপাদন কঠিন তাই সেখানে এ জাতের আলুচাষ করে লাভবান হতে পারেন কৃষকরা।
মেহেরপুরের গাংনীতে জলপাই আলুচাষ বাড়ছে
