বর্জনের মধ্যদিয়েই প্রধান বিচারপতিকে বিদায়

 

স্টাফ রিপোর্টার: পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্ট বার সমিতির বর্জনের মধ্যদিয়েই অনুষ্ঠিত হল প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের বিদায় সংবর্ধনা। এর আগে বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনের দায়িত্ব নেয়ার সময়ও বার সমিতি তাকে অভ্যর্থনা জানানো থেকে বিরত ছিলো। শেষ কর্মদিবস হিসেবে বৃহস্পতিবার সকালে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস ও সরকার সমর্থক আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতিকে বিদায় সংবর্ধনা জানান। এদিকে বিদায় সংবর্ধনা শেষে সরকার সমর্থক আইনজীবীরা দুপুর ১২টার দিকে আদালত ভবনের দ্বিতীয় তলা দিয়ে বার ভবনে ঢোকার চেষ্টা করে। এ সময় বার সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনের গেট তালাবদ্ধ দেখতে পেয়ে তারা প্রথমে তালা খোলার জন্য চিৎকার করতে থাকেন। পরে কয়েকজন আইনজীবী নিচতলা দিয়ে ঢুকে বার সমিতির ভবনের ভেতর থেকে হাতুড়ি দিয়ে তালা ভাঙার চেষ্টা করেন। পরে তালা ভাঙতে ব্যর্থ হয়ে কলাপসিবল গেট ধরে টানাটানি শুরু করলে এক পর্যায়ে গেটটি ভেঙে যায়। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের পক্ষ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং সাধারণ আইনজীবীদের পক্ষ থেকে আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল বাসেত মজুমদার বিদায় সংবর্ধনা জানান। এ সময় বিদায়ী বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন। আপিল বিভাগের এক নম্বর এজলাস কক্ষে অনুষ্ঠিত এই বিদায় সংবর্ধনায় সুপ্রিমকোর্টের উভয় বিভাগের অধিকাংশ বিচারপতি উপস্থিত ছিলেন। ২০১১ সালের ১৮ মে থেকে দায়িত্ব পাওয়া প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন আজ শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত দায়িত্বে থাকবেন। আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শপথ গ্রহণের মাধ্যমে নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেবেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা।

বিদায়ী ভাষণে প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমাদের সাংবিধানিক স্কিমে নির্বাহী বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের সমান ভূমিকা রয়েছে। এই তিন অর্গানের মধ্যে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স রাখতে হবে। কেউ তাদের সীমা অতিক্রম করা উচিত হবে না। এই তিন বিভাগের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্রের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সহায়ক বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি সুপ্রিমকোর্টে পৃথক সচিবালয় গঠনের বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করে অচিরেই যেন একটি পৃথক সচিবালয় তৈরি করা হয় সেই বিষয়ে আশা প্রকাশ করেন।

বিদায় সংবর্ধনায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, ১৯৬৬ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন মোজাম্মেল হোসেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন ইকবাল হলে তার কক্ষ পাকিস্তানি সৈন্যরা পুড়িয়ে ফেলে। আপিল বিভাগে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লা ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর যুদ্ধাপরাধ মামলাতেও তিনি বিচারক হিসেবে ছিলেন। এসব মামলা ‘ঐতিহাসিক মামলা’ হিসেবে বিবেচিত হবে উল্লেখ করে মাহবুবে আলম বলেন, ‘আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং সংবিধান সমুন্নত রাখার প্রয়াসে আপনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। যুগান্তকারী রায় প্রদানের মাধ্যমে আপনি নিজেকে চির স্মরণীয় করে রেখেছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একজন বিচারক বেঁচে থাকেন তার প্রদত্ত রায়ের মাধ্যমে। তিনি তার কাজের মাধ্যমে ইতিহাসের অংশ হয়ে যান। একজন বিচারক হিসেবে মোজাম্মেল হোসেনের ভূমিকা দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলেও উল্লেখ করেন সরকারের এই শীর্ষ আইন কর্মকর্তা।