স্টাফ রিপোর্টার: দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের উপস্থিতিতে ইবাদত, বন্দেগি, জিকির-আসকার আর আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে উত্তাল কহর দরিয়াখ্যাত টঙ্গীর তুরাগ পার। আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত ৫০তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে শনিবার তুরাগ তীরে পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে চলছে বয়ান। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের সমাগম বেশ কম বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। শনিবার সরেজমিন ইজতেমা মাঠ পরিদর্শন করে স্থানীয়দের এ দাবির সত্যতা পাওয়া গেছে। আখেরি মোনাজাতের আগের দিন শনিবার বিকাল পর্যন্ত মুসল্লিদের উপস্থিতি ইজতেমা মাঠ ছাপিয়ে যায়নি। অন্যান্য বছর বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতে অংশ নেয়ার জন্য আগের দিন দুপুর থেকে টঙ্গীমুখী মানুষের ঢল দেখা গেলেও এবার তেমনটি চোখে পড়েনি। এর পেছনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধকে দুষছেন আয়োজকরা। অবরোধকে ঘিরে অজানা শংকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অনেক মুসল্লি বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে পারেননি। সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেছেন, এ বছর বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের সমাগম ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম হতে পারে। ইজতেমা আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। আখেরি মোনাজাতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ শামিল হবেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ বছর আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে বিশ্ব ইজতেমা প্রাঙ্গণে যাবেন কিনা শনিবার সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি।
আখেরি মোনাজাতের প্রস্তুতি: আয়োজকরা জানিয়েছেন, স্থান সঙ্কুলানসহ বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন অসুবিধার কথা বিবেচনা করে ২০১১ সাল থেকে দু দফায় বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হচ্ছে। যারা প্রথম পর্বে বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দেবেন তারা দ্বিতীয় পর্বে অংশ নিতে পারবে না। প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত শেষে মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠ ছেড়ে দেয়ার পর ১৬ জানুয়ারি বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে ১৮ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে ৫০তম ইজতেমার সব পর্ব।
গতকাল শনিবার বিশ্ব ইজতেমা মাঠ ঘুরে জানা গেছে, রোববার আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে ৮০টি দেশের ১০ সহস্রাধিক বিদেশীসহ প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ মুসল্লি অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। টঙ্গীর তুরাগ নদীর পারের ১৬০ একর চটের শামিয়ানায় ইজতেমা ময়দানকে প্রথম পর্বে ৩২টি ও দ্বিতীয় পর্বে ৩২টি জেলাকে মোট ৪০টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে।
চলছে বয়ান: গত দুদিন ধরে ইজতেমা মাঠে ফজর থেকে এশা পর্যন্ত ইজতেমা মাঠে ইমান, আমল, আখলাক ও দ্বীনের পথে মেহনতের ওপর বয়ান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বয়ানে বলা হয় দুনিয়ার জিন্দেগি ক্ষণস্থায়ী, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের দিল থেকে আসবাবের (সম্পদের) এক্বিন বের না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার দিলে কুদরতি এক্বিন পয়দা হবে না। সবাইকে দ্বীনের জন্য মেহনত করতে হবে। আল্লাহর কাছে আমল ছাড়া এ দুনিয়ার জিন্দেগির কোনো মূল্য নেই। বয়ানে আরও বলা হয়, দ্বীনের দাওয়াতের মাধ্যমে ঈমান মজবুত হয়। ঈমান মজবুত হলে আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এ সম্পর্ক গড়ে উঠলে দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াবি হাসিল হয়। শনিবার বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিনে দেশ-বিদেশ থেকে আগত মুরব্বিরা তাবলিগের ছয় ওছুলের মধ্যে দাওয়াতে দ্বীনের মেহনতের ওপর গুরুত্বারোপ করে বয়ান করেন।
বয়ান করছেন যারা: শনিবার বাদ ফজর থেকে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল হোসেন গোদরা, বাদ জোহর ভারতের হজরত মাওলানা শওকত আলী, বাদ আসর ভারতের হজরত মাওলানা মোহাম্মদ জোয়াহের, বাদ মাগরিব পাকিস্তানের হজরত মাওলানা আবদুল হক। দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করে বয়ান শুনছেন।
ভিআইপিদের মোনাজাতে অংশগ্রহণ: বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে ভিভিআইপিদের অংশগ্রহণের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক মো. নূরুল ইসলাম। তিনি জানান, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো ভিভিআইপির ইজতেমাস্থলে মোনাজাতে অংশ নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।