আওয়ামী লীগ নেতা মোহন ঘোষ নিহত : পুলিশসহ আহত ১১

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ক্ষমতাসীনদলের বর্ধিতসভায় হামলা ও ভাচুর

 

ঝিনাইদহ/কালীগঞ্জ প্রতিনিধ: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিতসভায় হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। হামলায় উপজেলার কোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনন্দ মোহন ঘোষ (৫৫) নিহত হয়েছেন। পুলিশসহ আহত হয়েছেন ১১ নেতাকর্মী। আহতদের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে কালীগঞ্জ শহরের পৌর অডিটোরিয়ামে বর্তমান এমপিকে বাদ দিয়ে সভা করাকে কেন্দ্র করে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ তথ্য দিয়ে হামলার শিকার নেতাকর্মীদের অনেকেই অভিযোগ করে বলেছেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল ইসলাম আনার সমর্থিতরা বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। এ সময় ১১টি মোটরসাইকেল, একটি মাইক্রোবাস ও শতাধিক চেয়ার ভাঙচুর করা হয়।

Mohon Gosh

নিহত আওয়ামী লীগ নেতা আনন্দ মোহন ঘোষ কোলাবাজারের ফটিক ঘোষের ছেলে। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান পক্ষের নেতা ছিলেন। বিকেলে সংঘর্ষে আহত হলে তাকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনি মারা যান।

দলীয় নেতাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে কালীগঞ্জ পৌরসভা অডিটোরিয়ামে উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিতসভা শুরু হয়। কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাবেক এমপি আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান। অতিথি হিসেবে জেলা পরিষদ প্রশাসক আব্দুল ওয়াহেদ জোয়ারদার ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্কাস আলীসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দও উপস্থিত হন। অভিযোগ ওঠে- সভা শুরুর একপর্যায়ে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের ক্যাডাররা লাঠিসোটা, রামদা, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বর্ধিতসভায় হামলা চালায়। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মাইক্রোবাস, ১১টি মোটরসাইকেল ও শতাধিক চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। ফলে বর্র্ধিতসভা পণ্ড হয়ে যায়। হামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইসরাইল হোসেন, কোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনন্দ মোহন ঘোষ, ত্রিলোচানপুর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, কালীগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র রেজাউল ইসলাম, কালীগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার মনিরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগকর্মী শরিফুল ইসলাম, শামিম, জামানসহ কমপক্ষে ১১ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা আনন্দ মোহন ঘোষকে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে তিনি মারা যান। সেখানে তিনি হামলার পর শহরে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।

কালীগঞ্জ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক গ্রুপের বর্ধিতসভায় আরেক গ্রুপের লোকজন হামলা চালায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। শহরে উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর সিদ্দিকি ঠাণ্ডু জানান, বর্তমান এমপি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুল আজিম আনারকে বাদ রেখে গোপনে বর্ধিতসভার আয়োজন করা হয়। এতে বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা সভায় হামলা করে।

কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইসরাইল হোসেন জানান, সাবেক এমপি আব্দুল মান্নান উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন। তিনি গোপনে জেলা নেতৃবৃন্দের ডেকে এনে বর্তমান এমপিকে বাদ দিয়ে বর্ধিতসভার আয়োজন করেন। এতে নেতাকর্মীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে হামলা ও ভাঙচুর করেছে। কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক সাবেক এমপি আব্দুল মান্নান জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করার লক্ষ্যে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে জেলা নেতৃবৃন্দ আমাকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে। নিয়ম অনুযায়ী গতকাল বুধবার কালীগঞ্জ পৌর অডিটোরিয়ামে বর্ধিতসভার আয়োজন করা হয়। কিন্তু সভা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর বর্তমান এমপি আনারের ক্যাডাররা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে এবং গাড়ি, মোটরসাইকেল ও সভার চেয়ার ভাঙচুর করে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘ আট বছর ধরে কালীগঞ্জে আওয়ামী লীগ দুটি ভাগে বিভক্ত। এক গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান। আর অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। কিছুদিন আগেও আব্দুল মান্নান সমর্থিত পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজু দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে শহরে মিছিল করলে অপরপক্ষের সমর্থকরা মেয়রের অফিস ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।