অবরোধের প্রথমদিন অতিবাহিত : যানবাহনে আগুন ককটেল বিস্ফোরণ অগ্নিদগ্ধ ২

স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের প্রথম দিনে গতকাল সকালে ঢাকা থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও ঢাকায় কোনো বাস আসেনি। তবে কোনো কোনো জেলায় আন্তঃজেলা পর্যায়ের কিছু বাস চলাচল করেছে। অবরোধের কারণে রাজধানীতে গণপরিবহনের সংখ্যা ছিলো একেবারেই কম। কম ছিলো অন্যান্য যানবাহনের সংখ্যাও। এতে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরের সাধারণ যাত্রীদের ছিলো সীমাহীন দুর্ভোগ। অপরদিকে গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণসহ বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে রাজধানীতে চলছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ। মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অবরোধকারীরা ঝটিকা মিছিল করে। চুয়াডাঙ্গা কোর্টমোড়ে বিএনপি মিছিল বের করতেই পুলিশি বাধার মুখে পড়ে।

Chuadanga Politics pic 2(06-01-15)

রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ১১টি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। এতে অগ্নিদগ্ধ হয়েছে দুজন চালক। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মারমুখি আচরণে তারা রাজপথে দাঁড়াতেই পারেনি। সতর্ক নজরদারির মধ্যেও কয়েকটি স্থানে পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে মনোয়ার হোসেন নামে একজন আনসার সদস্য দগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। অপরদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজপথে মহড়া দেয়। সোমবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশব্যাপি সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধের ডাক দেন।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের ডাকা টানা অবরোধের প্রথমদিন মঙ্গলবার নির্বিচারে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, সংঘাত, পুলিশের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগসহ বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে সারাদেশে। রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ ও চাঁপাইনবাগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। এতে পুলিশ, সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছেন। পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২০ দলীয় জোটের ৪ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। রাজশাহীতে আবার তাণ্ডব চালিয়েছে শিবির ক্যাডাররা। তারা পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তাদের পিটিয়েছে। এতে তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাক ছাড়া হয়নি। রাস্তাঘাটে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিলো কম।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় চুয়াডাঙ্গা শহরের কোর্টমোড় থেকে অবরোধ ঝটিকা মিছিল বের করা হয়। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মুহা. অহিদুল ইসলাম বিশ্বাসের নেতৃত্বে কয়েকজনের মিছিলটি পুরাতন হাসপাতালের সামনে পৌঁছে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে মিছিল ঘুরে দলীয় কার্যালয় অভিমুখে রওনা করে। এদিকে দলীয় কার্যালয় অভিমুখে ফেরার সময় কোর্টমোড়ে আবারও পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এক পর্যায়ে তরুণদলের জেলা আহ্বায়ক মাবুদ সরকারকে পুলিশ আটক করার চেষ্টা করলেও বিএনপি নেতাদের হস্তক্ষেপে রক্ষা পায়। মিছিলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্মআহ্বায়ক মজিবুল হক মালিক, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এম জেনারেল ইসলাম ও রউফুন নাহার রীনা, জেলা মৎস্যজীবী দলের আহ্বায়ক আবু বকর সিদ্দিক বকুল এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হাজি আব্দুল মান্নান।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগরে বিএনপিসহ সমমনা ২০ দলের ডাকা অবরোধ ও ক্ষমতাসীন দলের প্রতিরোধ হামলা এবং ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় সাধারণ মানুষ চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন যাবত ছাত্রলীগের হামলা পাল্টা হামলায় ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং প্রতিপক্ষের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার ডাকা অবরোধ জীবননগরে ঢিলেঢালাভাবে পালিত হয়েছে। বিএনপির ৫ জানুয়ারি ঢাকার আন্দোলনকে ঘিরে দুটি দলের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে কর্মমুখি মানুষের মাঝে স্থবিরতা নেমে আসে। সকাল থেকে রাত অবধি সাধারণ মানুষের রাস্তাঘাটে চলাচল ছিলো কম। গতকাল অবরোধের প্রথম দিনে রাস্তাঘাটে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিলো অল্প। নসিমন-করিমন, সিএনজি চললেও বাস এবং দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলাচল করেনি। সরকারি অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, ব্যাংক-বীমাসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও মানুষের উপস্থিতি ছিলো তুলনামূলকহারে কম। সকাল থেকে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।