রাজনৈতিক অস্থিরতা : কীভাবে সভ্য বলে দাবি করবো আমরা?

‌দীর্ঘদিন ধরেই দেশে অর্থনৈতিক স্থবিরতা বিরাজ করছে। এর মূল কারণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দীর্ঘদিন ধরেই অনুপস্থিত। এবারের ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে আরো অনিশ্চয়তা দানা বেধেছে। রাজপথ উত্তপ্ত। পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আর কর্মসূচিতে দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষগুলোর মাঝে দীর্ঘশ্বাসের মাত্রা বেড়েই চলেছে।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকার মেয়াদ সম্পন্ন করার আগেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন পদ্ধতি বাতিল করে। আপত্তি জানিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত দলগুলো। কাজ হয়নি। গত বছরের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হয়। নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটভুক্তরা অংশ না নিলে অনেকটা একতরফা নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট পুনরায় সরকার গঠন করে। সংসদে বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি উঠে এলেও এ পার্টি থেকেও সরকারভুক্ত করা হয় কয়েকজনকে। গড়ে অন্যরকম রেকর্ড। এরই মাঝে কেটে গেছে একটি বছর। বছর ঘুরে সেই ৫ জানুয়ারি নিয়েই ঘোলা হয়ে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ। ফের রাজপথ রক্তে লাল হয়ে উঠেছে। প্রাণহানি সভ্যতার ললাটে কী অসভ্যতার কালি লেপন করে না?

ক্ষমতাসীন দলের বক্তব্য, তারা ৫ জানুয়ারিকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার দিবস হিসেবে দেখছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন দলগুলো এ দিবসকে গণতন্ত্র বিপন্ন দিবস বলে আখ্যা দিয়ে অভিযোগ তুলে বলেছে, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে বিপন্ন করে দেশবাসীকে অবরুদ্ধ করে তুলেছে। এরই মাঝে দেশব্যাপি অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। লাগাতার হরতালও আহ্বান করা হতে পারে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম তাদের সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়ে আসছে। অপরদিকে ৯ জানুয়ারি টঙ্গীতে শুরু হতে যাচ্ছে মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় সমাবেশ। রাজপথ যখন উত্তপ্ত তখন বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দফার কী হবে? এ প্রশ্ন তৃণমূল পর্যায়ের ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের। আন্দোলনের মাঝে হয়তো বিশ্ব ইজতেমাগামী যানবাহনগুলোকে অবরোধমুক্ত ঘোষণা করবে। তাতে কি স্বস্তি মিলবে?

অবশ্যই দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে হবে। কোনো দলের বাকশক্তি হরণ করে নয়, গ্রেফতার নিপীড়নও সমাধান নয়। দেশের মানুষ শান্তি চায়। যদিও কবির ভাষায়, শান্তির জন্যই যুদ্ধ। সভ্যতার অনেক বছর পেরিয়ে এখনও যদি সেই পুরাতন মানসিকতা লালন করে শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশেই হাবু-ডুবু খাই আমরা, তবে আমাদের কি কেউ সভ্য বলবে?