রাজধানীসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে ঝটিকা মিছিল : সহিংসতায় নিহত ৪ : অনির্দিষ্ট কালের অবরোধ

চুয়াডাঙ্গায় ২০ দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ : ৯ জন আহত: মাইক্রোবাসসহ ১৩ নেতাকর্মী গ্রেফতার

 

মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: নেতাকর্মীদের হামলা ও অবস্থানের কারণে রাজধানীতে সমাবেশ করতে পারেনি বিরোধী জোট। গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। কার্যালয় থেকে বের হতে চাইলে তার গাড়ি লক্ষ্য করে পিপার স্প্রে ছুড়ে পুলিশ। অন্যদিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিকেলে সংঘর্ষের পর সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবও কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। তাকে গ্রেফতারের জন্য বাইরে অবস্থান করছে পুলিশ। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজধানীসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে ঝটিকা মিছিল করেছে বিএনপিসহ জোটের নেতাকর্মীরা। সেসব মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে গিয়ে টিয়ারশেলের পাশাপাশি গুলিবর্ষণ করেছে পুলিশ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের পাশাপাশি বিরোধী জোট নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে সরকারদলীয় কর্মীরা। এ সময় সারাদেশে শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও শ শ ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপিপন্থি পেশাজীবী সংগঠনের নেতা ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে প্রজন্মলীগ। সারাদেশে পুলিশের গুলিতে নাটোরের ২ ছাত্রদল ও রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে দু বিএনপিকর্মীসহ নিহত হয়েছেন ৪ জন। পুলিশ ও সরকারদলীয় কর্মীদের যৌথ হামলায় আহত হয়েছে অন্তত ৫ শতাধিক বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী। রোববার রাত থেকে গতকাল দিনভর সারাদেশে চালানো হয়েছে ব্যাপক ধরপাকড়। গ্রেফতার করা হয়েছে- বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি লায়ন আসলাম চৌধুরী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, ডিসিসির সাবেক কমিশনার আলতাফ হোসেন, লক্ষ্মীপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন ভূইয়াসহ অন্তত সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, লক্ষীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, দিনাজপুর, মৌলভীবাজার, যশোর, ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ, চাঁদপুর, ফেনী, গাজীপুর, খুলনা, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, বাগেরহাট, খাগড়াছড়ি, নরসিংদী, পাবনা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ৪০ জেলায় সংঘর্ষ ও গণগ্রেফতারের ঘটনা ঘটেছে।  প্রতিবাদে সারাদেশে টানা অবরোধের পাশাপাশি নাটোর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আজ মঙ্গলবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ২০দলীয় জোট। দু জোটের কর্মসূচি আর পাল্টা কর্মসূচি ঘিরে প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী রাজধানী ঢাকার সাথে চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহসহ সারাদেশের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দিয়ে বিরোধী জোটের শীর্ষনেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা বলেছেন, আজ সারাদেশে যেভাবে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত একই ধরনের কর্মসূচি চলবে। গতকাল বিকেলে গুলশানের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়া বলেন, আমি গত পরশুদিন এসেছিলাম অফিস করতে। অফিস থেকে আমি অসুস্থ রিজভীকে দেখতে যাবো বলে পল্টনে যাওয়ার জন্য আমার গাড়ির মধ্যে বসেছি। তারপরেই  দেখি যে পুলিশ এখানে গেট বন্ধ করে রেখেছে। গাড়ি টাড়ি দিয়ে সব অবরুদ্ধ করে রেখেছে। কেন- আমি জানি না। খালেদা জিয়া বলেন, আজ আমাদের কালো পতাকা কর্মসূচি ছিলো। সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি। পরবর্তী কর্মসূচি না দেয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে।

চুয়াডাঙ্গায় ২০ দলীয় নেতাকর্মীদের রাজপথে নামতে দেয়নি পুলিশ। কয়েকবার চেষ্টা করলেও শেষমেশ পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ খেয়ে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। এ সময় তাদের ৯ জন নেতাকর্মী আহত হন। ২০ দলীয় জোটের ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ বলেছে, নাশকতা পরিকল্পনার অভিযোগে তাদেরকে আটক করা হয়েছে। রোববার রাতে ও গতকাল সোমবার সকালে এদেরকে আটক করা হয়। বেলা আড়াইটার দিকে তাদেরকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগ আনলেও বিএনপি বলেছে এরা ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মী। তারা শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য শহরে আসছিলেন।

বিএনপির নেতৃবৃন্দ জানান, আমরা কালো পতাকা নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের প্রস্তুতির সময় আচমকা হানা দিয়ে বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে। এতে আহত হন চঞ্চল, ওহাব, মাহবুব, সাইদুর, আরিফ, শাহাজাহান, সোহেল, কাকন ও একরাম। গ্রেফতারকৃতরা হলো চুয়াডাঙ্গা ফার্মপাড়ার রকিব উদ্দিনের ছেলে সাইদুর রহমান (২৮), সুমিরদিয়া কলোনির জোনাব মোল্লার ছেলে মাদার মোল্লা (৪৪), আনছার আলীর ছেলে আবদুল আলীম (৩৮), যদুপুর গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে আশাবুল (৪২), বোয়ালিয়ার আব্দুর রহমানের ছেলে আলহাজ (৩২), কোটালী গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে রকিবুল ইসলাম (৪২), রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের তাহের আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৫), ইছাহকের ছেলে এনামুল হক (৬৫), বেগমপুর আকন্দবাড়িয়ার ছানোয়ার হোসেনের ছেলে মোছেদ আলী (২৪), আফজাল হোসেনের ছেলে আবদুল মুন্না (৩৩), নুর উদ্দিনের ছেলে আশরাফুল হক (৫৫), আমজাদ হোসেনের ছেলে শরিফুল ইসলাম (৩৪) ও মোহাম্মদ আলীর ছেলে লুৎফর রহমান (৬৫)।

চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি আসাদুজ্জামান মুনসী দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আগের মামলা আছে। তাছাড়া এরা নাশকতা চালানোর উদ্দেশে শহরে ঢোকার চেষ্টা করলে তাদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তবে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, গ্রেফতারকৃতরা সবাই ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী। তারা চুয়াডাঙ্গায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য আসছিলেন। তাদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। পুলিশ আরো জানায়, গ্রেফতারকৃতরা একটি মাইক্রোবাসে চুয়াডাঙ্গায় আসে নাশকতার জন্য। তাদের চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের সবুজপাড়া থেকে আটক করা হয়। এ সময় একটি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো গ ১৪-৬১০১) আটক করা হয়।

২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের অভিযোগ চুয়াডাঙ্গায় ২০ দলীয় নেতাকর্মীদেরকে রাস্তায় নামতে দেয়নি পুলিশ। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস ও জেলা জামায়াতের আমির আনোয়ারুল হক মালিকের নেতৃত্বে¡ প্রায় হাজার খানেক নেতাকর্মী শহরের কেদারগঞ্জ এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিলের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরবর্তীতে জোটের নেতাকর্মীরা চুয়াডাঙ্গা কোর্ট রোডে জড়ো হয়ে বিক্ষোভের চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তাদের ওপর বেপরোয়া লাঠিচার্জ করেন এবং ফেস্টুন-ব্যানার কেড়ে নেয়। নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন দিকে সটকে পড়েন। এ সময় তাদের ৯ জন নেতাকর্মী আহত হন বলে নেতৃবৃন্দ জানান। পরবর্তীতে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা কয়েকবার বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিলেও পুলিশের কারণে তা ভেস্তে যায়। জেলা শহর দিনভর ছিল থমথমে। মোড়ে ছিলো পুলিশ মোতায়েন। তারা ছিলো তটস্থ। বিরোধী দলের নেতাকর্মীর বাড়িতে বাড়িতে রোববার রাতে পুলিশ আটক অভিযান চালায় বলে বিএনপির নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন।

আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, বিএনপির ৫ জানুয়ারির কর্মসূচিকে সামনে রেখে আলমডাঙ্গায়ও পৌর বিএনপির সভাপতিসহ-জামায়াতের ৩ জনকে আটক করেছে থানা পুলিশ। আলমডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি শহরের এক্সচেঞ্জ পাড়ার মৃত ইয়াছিনের ছেলে আনিচুর রহমান গত ৪ জানুয়ারি দুপুরে তার স্টেশনরোডস্থ ব্যবসাস্থলে বসে ছিলেন। ওই সময় আলমডাঙ্গা থানার এসআই আনিস তাকে আটক করেন। তাকে তাহেরা হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ভাঙচুরের ঘটনায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হলে গতকাল তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

অপরদিকে গত রোববার রাতে আলমডাঙ্গা থানার এসআই জিয়াউল হক উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের মোসলেম মণ্ডলের ছেলে ওয়ার্ড জামায়াতের আমির হোসেনকে (৪০) আটক করেন। একই মামলায় উপজেলার ফরিদপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে শিবিরকর্মী শাহিন কাদিরকে (৩০) আটক করেন।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে গতকাল সোমবার সকালে কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ বের করার আগেই ভোর থেকেই বিএনপির কার্যালয় ঘিরে অতিরিক্ত পুলিশ অবস্থান করছিলো। এর আগে রোববার সন্ধ্যায় সাবেক এমপি মাসুদ অরুন সাংবাদিকদের বলে ছিলেন সোমবার সকালে কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে কর্মসুচী পালনের অনুমতি না পাওয়ায় দ্বিধায় পড়েন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। রাতে অবশ্য নিশ্চিত করা হয় অনুষ্ঠান হচ্ছে না।

এদিকে ভোর থেকেই মেহেরপুর জেলা বিএনপি কার্যালয় ঘিরে পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নেন। এতে নেতাকর্মীরা কেউ কার্যালয়ে আসেননি। সকাল থেকেই তালাবদ্ধ ছিলো বিএনপি কার্যালয়। কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি বিএনপি। মেহেরপুর পুলিশ সুপার হামিদুল আলম জানান, নিরাপত্তার কারণে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে মেহেরপুরে বিজিবি টহল রয়েছে।

এদিকে বিএনপির গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনকে ঘিরে নাশকতার আশঙ্কায় মেহেরপুরে ১০ বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার দিনগত রাতে গাংনী থানা পুলিশের অভিযানে ৬ জন ও মুজিবনগর থানা পুলিশের অভিযানে ৪ জনকে আটক করে। আটককৃতরা হচ্ছেন- গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের সাবারুল ইসলাম (২৬), আব্দুস সালাম (৫৮), ধানখোলা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস (৫৮), মাইলমারী গ্রামের সেকেন্দার আলী (৩৫), বামন্দী নিশিপুরের এনামুল হক (৫৩) ও ধলা উত্তরপাড়ার সামসুল আলম (৪৫), মুজিবনগর উপজেলার বিশ্বনাথপুর গ্রামের মিজানুর রহমান (৩৮), আলীমুজ্জামান (৩৫) অষ্টমূল হক (২৮) এবং আজিত আলী (৫৬)। এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলায় দু প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন।

মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিএনপির গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালনকে ঘিরে নাশকতার আশঙ্কায় মুজিবনগর উপজেলায় ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার রাতে মুজিবনগর থানা পুলিশ ওই আটক অভিযান চালায়। আটককৃতরা হচ্ছে- মুজিবনগর বিশ্বনাথপুর গ্রামের মিজানুর রহমান (৩৮), অষ্টমুল হক (২৮), আনিসুল হক ও (৩৫), আজিত হোসেন (৫৬)। আটককৃতদের মেহেরপুর আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে মুজিবনগর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান।

কালীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করার প্রতিবাদে ঝিনাইদহে বিএনপি বিক্ষোভ মিছিল করেছে। গতকাল সোমবার দুপুর ২টায় শহরের আরাপপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয। বিক্ষোভ মিছিলে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী অংশ নেন। মিছিল শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ বিশ্বাস, জেলা বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম পিন্টু, জেলা যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক মীর ফজলে এলাহী শিমুল প্রমুখ। বক্তরা অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ থেকে মুক্তি দেয়াসহ ৫ জানুয়ারি বিএনপির সমাবেশ করতে দেয়ার দাবি জানান। অন্যথায় যে পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ি থাকবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহ শহর ও শৈলকুপায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে পৃথক সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয়পক্ষের অন্তত ২৮ জন আহত হয়েছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় বিএনপি কর্মীরা জনতার ব্যাংকের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে।

গতকাল সোমবার সকাল ১১টার দিকে ঝিনাইদহ পৌর শহরের এইচএসএস সড়কে, পায়রা চত্বরে, হামদহ এলাকায় ও শেরেবাংলা সড়ক থেকে বিএনপির কর্মীরা পৃথক মিছিল বের করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। পুলিশের সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা যোগ দিলে ত্রিমুখি ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় আহত হয় ৮ জন। সকালে শৈলকুপা উপজেলার শেখপাড়া বাজারে বিএনপি কর্মীরা একটি মিছিল বের করে। পুলিশ ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় সংঘর্ষ এড়াতে পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এসব সংঘর্ষে ৩ পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়। তাদের ঝিনাইদহ সদরসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। বর্তমান পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে।

এদিকে সোমবার সকাল ৭টার দিকে শৈলকুপার গাড়াগঞ্জ বাজারে বিএনপির কালো পতাকা মিছিল পুলিশ লাঠিপেটা করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। পুলিশের লাঠিপেটায় আহত হয়েছে ৫ জন। ওই মিছিল থেকে দুইজনকে গ্রেফতারও করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। শৈলকুপা থানার ওসি ছগির মিঞা বলেন, সকালে মিছিলটি গাড়াগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডের দিকে এগিয়ে আসে। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে মিছিলকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছুড়তে থাকে। শৈলকুপা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান দীপু বলেন, পুলিশের লাঠিচার্জে তাদের ৫ কর্মী আহত হন। নাশকতার আশঙ্কায় রোববার রাত থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ২৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. আলতাফ হোসেন জানান, নাশকতা সৃষ্টির আশঙ্কায় এদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ১৬ জন, শৈলকুপার চার জন, ঝিনাইদহ সদরের তিনজন ও মহেশপুর উপজেলার দুজন রয়েছেন।