ব্যাগের বর্ণ বদলে ধূম্রজাল : হেরোইনসহ যুবক গ্রেফতার : এসআই তোবারক ক্লোজড

দামুড়হুদার পূর্বাশা কাউন্টারে এক প্লাটুন পুলিশ নিয়ে সহকারী পুলিশ সুপারের অভিযান

 

স্টাফ রিপোর্টার: দামুড়হুদার পূর্বাশা কাউন্টার থেকে কালো ব্যাগসহ আলমডাঙ্গা মুন্সিগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই তোবারক ও এক যুবককে থানায় নেয়া এবং দিনভর তথ্য গোপন করায় জনমনে নানা প্রশ্ন দানা বেঁধেছে। গতকাল রোববার সকাল ১১টা ১০ মিনেটের দিকে উদ্ধার করা কালো ব্যাগটি শুধু লাল ব্যাগেই রূপান্তর হয়নি, ১ কেজি ৭শ ২০ গ্রাম হেরোইন বলে চালানো পদার্থও বাজার থেকে কেনা ধুপ বলায় ঘোরতর সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ফলে নিশ্চিত করে জানা যায়নি, কাউন্টার থেকে উদ্ধার করা ব্যাগে সোনার বার নাকি প্রকৃত হেরোইন ছিলো। হেরোইনসহ মিশন নামের ওই যুবককে গ্রেফতার দেখানো হলেও এসআই তোবারককে মামলার আসামি করা হয়নি। তবে রাত ৮টার দিকে এসআই তোবারককে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে।

damurhuda pic. 28.12.14 (1)

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, তখন ঘড়ির কাঁটা সকাল ১১টা পেরিয়ে কয়েক মিনিট হয়েছে। মোটরসাইকেলযোগে কালো ব্যাগ নিয়ে দামুড়হুদা থানার সাবেক বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ দামুড়হুদা বাজারের পূর্বাশা কাউন্টারে প্রবেশ করেন। সাথে ছিলো এক যুবক। কাউন্টারে প্রবেশ করেই কালো ব্যাগটি কাউন্টার মাস্টার আলমকে দিলে তা দ্রুত সরিয়ে দেয়া হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই এক প্লাটুন পুলিশ নিয়ে পূর্বাশা কাউন্টারে হাজির হন সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) কামরুজ্জামান। কাউন্টারে প্রবেশ করেই এসআই তোবারকের দেহ তল্লাশি শুরু করেন। ব্যাগটির সন্ধান চান। খোঁজাখুঁজিও করা হয়। এসআই তোবারক তখন বার বার ক্ষমা চেয়ে বলেন, আমাকে মেরে ফেলেন স্যার। আমি ভুল করেছি। এক পর্যায়ে কাউন্টার মাস্টার আলম সরিয়ে দেয়া ব্যাগটি ফিরিয়ে আনেন। ব্যাগটিসহ এসআই তোবারক ও তার সাথে থাকা যুবককে নিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার দামুড়হুদা মডেল থানার উদ্দেশে রওনা হন। যুবককে নেয়া হয় কাস্টডিতে। এসআই তোবারককে বসিয়ে রাখা হয় থানার ওসি তদন্তের কক্ষে। খবর পেয়ে সাংবাদিকদের অনেকেই থানায় তথ্য নিতে হাজির হন। ততোক্ষণে সহকারী পুলিশ সুপার জীবননগর আন্দুলবাড়িয়ার ওয়ার্ড উপনির্বাচন পরিদর্শনের উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। থানার অফিসার ইনচার্জ ইন্সপেক্টর কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমি বলতে পারবো না। সার্কেল স্যার ফিরলে তিনি সাংবাদিকদের সামনে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরবেন।

তথ্য না দেয়ায় সন্দেহ ক্রমশ ঘনীভূত হতে থাকে। স্থানীয়দের অনেকেই বলেন, ব্যাগে সম্ভবত সোনার বার রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, সোনা নয় হয়তো হেরোইন আছে। এসব গুঞ্জনের মধ্য বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা আসে। সন্ধ্যায় দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, ব্যাগে ১ কেজি ৭শ ২০ গ্রাম হেরোইন ছিলো। হেরোইনসহ যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযানে নেতৃত্বদানকারী দামুড়হুদা থানার এসআই আফজাল বাদী হয়ে মামলা করেছেন। লাল ব্যাগসহ আটক যুবককে এ মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার আদালতে সোপর্দ করা হবে। উদ্ধারের সময় কালো ব্যাগ, মামলার সময় লাল ব্যাগ হলো কীভাবে? প্রশ্নর জবাব মেলেনি। তবে সহকারী পুলিশ সুপার বলেছেন, কালোব্যাগসহ যুবককে আটক করে থানায় দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সন্ধ্যায় পুলিশ সুপারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকের নিকট থেকেই ঘটনার বিস্তারিত শোনেন এবং বলেন, প্রকৃত ঘটনা ক্ষতিয়ে দেখা হবে। তদবির ও আটক যুবক এসআই তোবারকের আত্মীয় হওয়ায় বিভাগীয় প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে এসআই তোবারককে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত যুবক নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছে, নাম- মিশন। পিতার নাম মঞ্জুরুল হক। বাড়ি বগুড়া জেলার শাজাহানপুর থানার তিতকুর গ্রামে।

এদিকে গতকাল দিনভর পূর্বাশা কাউন্টারে দারোগার দেহ তল্লাশিসহ কালোব্যাগ এবং থানায় নেয়ার ঘটনাটি দামুড়হুদায় প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। প্রশ্ন ওঠে, দারোগার দেহ তল্লাশির সময় তার কাছে থাকা পিস্তলটি নিয়ে নেয়া হয়। দেহ তল্লাশির সময় হাত উঁচু করে বারবার তোবারক ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে বলেন, আমাকে মেরে ফেলেন স্যার, তবুও প্রকাশ্যে কিছু করেন না, সেই তোবারক কেন মামলা থেকে পার পেলেন? অপরদিকে দামুড়হুদায় গুঞ্জন রয়েছে, এসআই তোবারকের স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব থেকে গতকাল মোটা অঙ্কের টাকা তোলা হয়েছে। অবশ্য এর কোনো সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। আবার হেরোইন বলে যে পদার্থ জব্দ দেখানো হয়েছে আদৌ হেরোইন কি-না তা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহ দানা বেধেছে। উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে ওই প্যাকেট থেকে পড়ে যাওয়া একটি টুকরো তুলে নাকের সামনে ধরলে হেরোইনের মতো কিছু মনে হয়নি, বরঞ্চ ধুপেরই গন্ধ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

স্থানীয়রা বলেছে, এসআই তোবারক যখন দামুড়হুদা থানায় ছিলেন তখন তিনি এক ব্যক্তির নিকট টাকা দাবি করে না পেয়ে ১২ বোতল হেরোইনসহ চালান দেন। সম্প্রতি তাকে আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে বদলি করা হয়। সেখানেও গাছ বিক্রি সংক্রান্ত অনিয়মের সাথে যুক্ত হন বলে অভিযোগ রয়েছে।