ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে গড়ে উঠেছে বিষমুক্ত সবজির বউ বাজার

কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের নিয়ামতপুর ইউনিয়নে বসছে জৈব পদ্ধতিতে (অর্গানিক কীটনাশক) উৎপাদিত শাকসবজি ও ফল বিক্রির বাজার। আর এ বাজারের বিক্রেতা ও উৎপাদক সবাই গৃহিনী ও কৃষাণী।
নিজের বাড়ির আঙিনায় উৎপাদিত শাক-সবজি সবজির বউ বাজারে নিয়ে বিক্রি করছে তারা। স্থানীয়রা এই বাজারের নাম দিয়েছে বিষমুক্ত। এখান থেকে প্রাকৃতিক কৃষি নামের একটি সংগঠন শাকসবজি ক্রয় করে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে পৌঁছে গেছে। কীটনাশকযুক্ত শাকসবজির চেয়ে বেশি দামে তারা এগুলো বিক্রি করছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেলে কালীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব বলরামপুর গ্রামের মধ্যে এই বাজারটি গড়ে তোলা হয়েছে খোলা আকাশের নিচে। কেউ লাউ, কেউ কলা, বরবটি, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া আবার কেউ আলু, লালশাক, পুইশাক, পটল, পালংশাক এ বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছে।
নিয়ামতপুর ইউনিয়নের বলরামপুর, পূর্ব বলরামপুর, ভোলপাড়ার প্রায় অর্ধশতাধিক গৃহিনী বা কৃষাণী তাদের বাড়ির আঙিনায় উৎপাদন করছে এসব ফসল। দাম ভালো পাওয়ায় তারা বেশি করে উৎপাদনে আগ্রহ দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল হলেই ঝুড়িতে ও প্যাকেটে করে সবজিগুলো নিয়ে বসে তারা। কৃষাণী হালিমা জানান, কালীগঞ্জের একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে কীভাবে জৈব পদ্ধতিতে (কীটনাশকমুক্ত) ফসল উৎপাদন করা যায়। তাদের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রথম অবস্থায় তারা বাড়ির আঙিনায় পরিত্যক্ত জমিতে এসব ফসল উৎপাদন করছে। তিনি আরো জানান, তারা মূলত তাদের সবজি উৎপাদনের জন্য কম্পোস্ট সার আর বালাইনাশক ব্যবহার করে পোকা দমনে। তিনি দাবি করেন তাদের উৎপাদিত ফসল শতভাগ বিষমুক্ত।
সবজি ক্রেতা রায়হান জানান, আমাদের দেশে উৎপাদিত শতকরা ৯৯ ভাগ শাক সবজিই বিষযুক্ত। আমরা এলাকার নারীদের উদ্বুদ্ধ করেছি তারা বিষমুক্ত শাকসবজি বাড়ির আঙিনায় উৎপাদন করে তাদের কাছে বিক্রি করলে বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দাম দেয়া হবে। যার প্রেক্ষিতে তারা উৎপাদনে আগ্রহ দেখা গেছে। আমরা তাদের কাছ থেকে বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ক্রয় করছি। আর বিষমুক্ত শাক-সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ঢাকায়। আমরা মূলত এগুলো সংগ্রহ করে ঢাকার ২/৮, ব্লাক-এফ, লালমাটিয়ায় নিজেদের আউটলেট এ পাঠাচ্ছি।
নিয়ামতপুর ইউপির মেম্বার আব্দুস ছবুর খান জানান, আমি খুবই খুশি। আমার ইউনিয়নের গৃহিনীরা বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের কাজ করছেন। এ বাজারটি বড় আকারে হলে আগামীতে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলে জানান তিনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোশাররফ হোসেন জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তিনি এসব গৃহিনী কৃষাণীদের সাধুবাদ জানান। তারা বাড়ির কাজ সেরে দেশের মানুষের জন্য বিষমুক্ত শাক-সবজি উৎপাদন করছে। তিনি জানান, আমরা আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ দেব যেন তারা সারা উপজেলায় অন্য গৃহিনীদের এভাবে বাড়ির আঙিনা ফেলে না রেখে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের পরামর্শ দেন। তাহলে নিজের পরিবারের সবজির চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয় করতে পারবে।