চুয়াডাঙ্গায় শৈত্যপ্রবাহ : শীতবস্ত্র বিতরণ

স্টাফ রিপোর্টার: মাঝারি মানের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে। গতকাল মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতার্ত মানুষদের জন্য সরকারি পর্যায়ে কম্বল বিতরণ চললেও বেসরকারি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চোখে পড়ার মতো এখনও এগিয়ে না আসায় জেলার শীতার্ত দরিদ্র মানুষেরা বিপাকে পড়েছে।

কনকনে ঠাণ্ডা আর ঘনকুয়াশায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গত সোমবার রাতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ১৫ শয্যার শিশুওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ৪০ জন। যাদের অধিকাংশই শীতজনিত রোগে আক্রান্ত। শীত ও কুয়াশায় নিম্ন আয়ের মানুষের পাশপাশি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বোরো বীজতলা পানবরজের। ভোরে কৃষকদের ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে বীজতলায় জমা শিশির সরানোর কাজে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি শীত মরসুমে দু দফায় দু হাজার ৬৫৬টি কম্বল চার উপজেলা পরিষদ ও চার পৌরসভার মাধ্যমে শীতার্ত দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণের জন্য দেয়া হয়েছে। দু হাজার ৯শটি কম্বলের বরাদ্দের ফ্যাক্স বার্তা ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছিয়েছে। কম্বল এসে পৌঁছুলেই বিতরণের কাজ শুরু হবে। এছাড়া, চুয়াডাঙ্গা থেকে পাঁচ হাজার কম্বলের চাহিদাপত্র ঢাকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তবে সরকারি পর্যায়ের কম্বল দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণের তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। বেসরকারি পর্যায়ে দু একজন ব্যক্তি কম্বল বিতরণ করলেও দরিদ্র শীতার্ত মানুষের চাহিদার তুলনায় একেবারেই নগণ্য।

স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চ চাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, শ্রীমঙ্গল ও ময়মনসিংহ অঞ্চল সমূহের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাতের এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখার আয়োজনে দুস্থ নারী-পুরুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টায় শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখা কার্যালয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ কর্মসূচির উদ্ধোধন করেন চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন। উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট তছিরুল আলম ডিউক, ব্যবসায়ী মিজাইল হোসেন, সাংবাদিক রফিক রহমান, শাহ আলম সনি, বিপুল আশরাফ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন ও শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক চুয়াডাঙ্গা শাখার ব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলামসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার জীবননগরে অসহায়, ছিন্নমূল ও শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক জীবননগর এসএমই/কৃষি শাখার উদ্যোগে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। ব্যাংক ম্যানেজার নূর মোহাম্মদ প্রধান অতিথি হিসেবে অসহায় শতাধিক মানুষের হাতে এ শীতবস্ত্র তুলে দেন। ব্যাংকের ম্যানেজার অপারেশন নাসির উদ্দিনসহ অন্যান্য কর্মাকর্তাগণ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

কুড়লগাছি প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কার্পাসডাঙ্গা ব্র্যাক অফিসের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কার্পাসডাঙ্গা ব্র্যাক অফিসে তাদের নিজ কার্যালয়ে কার্পাসডাঙ্গা ব্র্যাক সদস্যদের মাঝে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। উপস্থিত ছিলেন- ব্র্যাকের ম্যানাজার আশরাফুল হক, শাহাবুল, মিজানুর রহমান, কার্পাসডাঙ্গা ব্র্যাকের অফিসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।

এমআর কচি/শরিফ রতন জানিয়েছেন, দামুড়হুদা কার্পাসডাঙ্গা ও আশপাশ এলাকাসহ শীত এলেই প্রায় প্রতি বছরেই শীত বস্ত্র বিতরণে এগিয়ে আসে রাজনৈতিক, সামাজিক, এনজিওসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এবার এলাকার দতদরিদ্র মানুষের যবুথবু অবস্থা হলেও কেউ এগিয়ে আসেননি শীতবস্ত্র বিতরণে। অনেকেই বলেছেন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেই শীতবস্ত্র বিতরণে এগিয়ে আসছেন না কেউ। কার্পাসডাঙ্গাসহ আশপাশের এলাকার বেশির ভাগ মানুষই বসবাস করে দারিদ্র সীমার নিচে। ফলে শীতবস্ত্র কিনতে হিমসিম খেতে হয় তাদের। তাই প্রচণ্ড শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে এলাকার মানুষেরা। এ হতদরিদ্র মানুষেরা তাকিয়ে আছে শীতবস্ত্র কেউ বিতরণ করেন কি-না।