মূল্যবান খনিজের বিপুল সম্ভার

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের কাঁচশিল্পের কাঁচামাল সরবরাহে বিপুল আশা জাগিয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদ। নদে প্রবাহিত পলির অর্ধেকের বেশি কাঁচ তৈরির খনিজ কোয়ার্টজ (কাঁচবালি) বহন করছে। এছাড়াও মূল্যবান কমপক্ষে ছয়টি খনিজের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

গবেষকরা বলছেন, এ উত্স থেকে কোয়ার্টজ সংগ্রহ করে ব্যবহার করা হলে কাঁচশিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। অন্য খনিজগুলোও পৃথক করে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হলে রঙ, সিরামিকস, ইলেকট্রনিক শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের আমদানি বন্ধ হবে বা কমবে। নদ থেকে বছরে কমপক্ষে ২৫০ মিলিয়ন টন খনিজসমৃদ্ধ বালি সংগ্রহ করা সম্ভব। সংগ্রহযোগ্য খনিজ থেকে প্রাথমিকভাবে বছরে অন্তত ৮০০ কোটি টাকা আয় করা সম্ভব হবে। বাণিজ্যিকভাবে আয়ের পরিমাণ আরো বাড়ানো সম্ভব।

ব্রহ্মপুত্র নদের পলিতে মূল্যবান খনিজের বিপুল উপস্থিতির তথ্য জানার পর অন্য কয়েকটি নদীতেও একই ধরনের খনিজের উপস্থিতি রয়েছে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। তারা জানিয়েছেন, পদ্মা-মেঘনাসহ আরো কয়েকটি নদীতে এ ধরনের খনিজের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ উপস্থিতি রয়েছে। যথাযথ উপায়ে জরিপ ও গবেষণা করা হলে এক্ষেত্রে অনেক বড় সম্ভাবনা বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছে। আবার খনিজ সংগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনামত পলি উত্তোলন করা হলে ড্রেজিং খরচও কমবে। ব্রহ্মপুত্র নদের উত্পত্তিস্থল তিব্বতের কৈলাশ শৃঙ্গের মানস সরোবর হ্রদ থেকে। এর বাংলাদেশে প্রবেশ মুখ কুড়িগ্রামের নাগেশ্বর থানা। ভারতের শিলং ও দার্জেলিং হয়ে বিপুল পরিমাণ পলি নিয়ে বাংলাদেশে এ নদের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর (জিএসবি) এবং ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি এন্ড মেটালার্জি (আইএমএমএম) সূত্রে জানা যায়, এ পলিতে বিপুল পরিমাণে কোয়ার্টজ, ইলমিনাইট, রুটাইল, জিরকন, মোনাজাইট এবং গারনেটের মত মূল্যবান খনিজ রয়েছে।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন জানায়, কোয়ার্টজ কাঁচশিল্প ছাড়াও সোলার প্যানেলের সিলিকনের চিপ তৈরিসহ এ ধরনের বিভিন্নকাজে ব্যবহার করা হয়। ইলমিনাইট, রুটাইল ও জিরকন ব্যবহার করা হয় পেইন্ট, পেপার ও সিরামিক শিল্প-কারখানায়। ইলমিনাইট ও রুটাইলের ব্যবহার রয়েছে বিমান তৈরিতে ব্যবহূত টাইটেনিয়ামের উত্স হিসেবেও। গারনেট রত্নপাথর এবং কাঁচ বা লোহার তৈরি সামগ্রী উজ্জ্বল করতে ব্যবহৃত হয়। ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক বিভিন্ন পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে মোনাজাইট ব্যবহৃত হয়। এ খনিজগুলোর ব্যবহার বা রপ্তানি নিশ্চিত করা গেলে শিল্পগবেষণার জগতে বাংলাদেশ আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে।

আইএমএমএম সম্প্রতি ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবেশ মুখ ও সন্নিহিত এলাকায় একটি জরিপ পরিচালনা করেছে। জরিপ ফলাফল থেকে জানা যায়, নদ দিয়ে প্রতি বছর ৭৩৫ থেকে ৮০০ মিলিয়ন টন পলি প্রবাহিত হয়। এর অন্তত এক তৃতীয়াংশ নদের বুকে এবং এক তৃতীয়াংশ তীরবর্তী এলাকায় জমা হয়। বাকি এক তৃতীয়াংশ প্রবাহিত হয়ে সমুদ্রে হারিয়ে যায়। ব্রহ্মপুত্র থেকে বছরে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন টন বা ২৫ কোটি টন খনিজসমৃদ্ধ বালি সংগ্রহ করা সম্ভব।