কোটচাঁদপুরের অপহৃত ব্র্যাক ব্যাংক কর্মকর্তা মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত

 

কোটচাঁদপুর প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ব্র্যাক ব্যাংক কর্মকর্তা অপহরণের ৭২ ঘণ্টা পর বিকাশের মাধ্যমে মুক্তিপণ দিয়ে অবশেষে মুক্ত হয়েছে। অপহরণকারীদের হাত থেকে তিনি মুক্ত হলেও ভবিষ্যত শঙ্কার হাত থেকে মুক্ত হতে পাচ্ছে না তার পরিবার।

গতকাল রোববার শঙ্কর রায় সুজনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গোটা পরিবারই চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এ শঙ্কার কারণে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতেও তাদের অনীহা। গত বৃহস্পতিবার রাতে অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে যশোর আরাপপুর ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মকর্তা শঙ্কর রায় সুজন অপহরণ হন। তিনি কোটচাঁদপুর পৌর শহরের বেনেপাড়ার অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ঠাকুর দাস রায়ের কনিষ্ঠ পুত্র। মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফেরার পর সুজন সাংবাদিকদের কাছে তার অপহরণের বর্ণনা দেন।

যেভাবে সুজন অপহণের শিকার: কোটচাঁদপুরের বাড়ি থেকে সুজন প্রতিদিন যশোরে অফিস করেন। বৃহস্পতিবার ব্যাংকের কাজ শেষ করতে তার সন্ধ্যা পার হয়ে যায়। রাত ৮টার দিকে সুজন বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশে পালবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ান। এ সময় ১টি বাস দাড়ানো ছিলো। জানালায় পর্দা দেয়া বাসটির ভেতর যাত্রীবেশী ৮/১০ জন দুর্বৃত্ত পূর্ব থেকে বসা ছিলো। সুজন ওই বাসে ওঠার সাথে সাথে বাসটি কালীগঞ্জ অভিমুখে চলতে শুরু করে। ৫/৭ মিনিটের মধ্যে বাসে বসা দুর্বৃত্তরা সুজনের হাপ-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে সাথে থাকা ম্যানিব্যাগ ও মোবাইলফোন ছিনিয়ে নেয়।

অপহরণের পর ৭২ ঘণ্টা: অপহরণের পরই অপহরণকারীরা সুজনের মোবাইল দিয়ে তার পিতাকে অপহরণের কথা জানায় এবং মুক্তির জন্য ২০ হাজার টাকা নিয়ে কোটচাঁদপুরের বলুহর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়াতে বলে। অপহরণকারীদের কথা মতো বৃহস্পতিবার রাতে ২০ হাজার টাকা নিয়ে বলুহর স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকলেও টাকা নিতে কেউ আসেনি বা সুজনকেও মুক্তি দেয়া হয়নি। এরপর সুজনের মুক্তির জন্য অপহরণকারীরা ২ লাখ টাকা দাবি করে। মুক্তিপণের এ ২ লাখ টাকা সুজনের বিকাশ নম্বরে প্রেরণের জন্য বলা হয়। সুজন তার প্রাণ বাঁচাতে অপহরণকারীদের দাবিকৃত অর্থ যে ভাবেই হোক জোগাড় করে দেয়ার জন্য তার পরিবারের প্রতি কান্নাজড়িত কণ্ঠে আকুতি জানান। গত শনিবার দুপুরে অপহরণকারীদের দাবিকৃত অর্থ সুজনের মোবাইলে বিকাশ করা হয়। সুজন সাংবাদিকদের জানান, শনিবার দুপুরে অপহরণকারীরা তাকে ছেড়ে দেয়ার কথা জানায়। এর কিছুক্ষণ পর তার হাপ-পা ও চোখ বেঁধে বাসটি চলা শুরু করে।

যে ভাবে তাকে মুক্তি দেয়া হয়: শনিবার দুপুরে তাকে নিয়ে বাসটি প্রায় ১ ঘণ্টা চলার পর বাসটি থেমে যায়। এর প্রায় ৩ ঘণ্টা পর বাসটি আবার চলা শুরু করে। এর কয়েক ঘণ্টা পর রাতে একটি নির্জন স্থানে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সুজনকে বাস থেকে নামিয়ে তার পকেটে নগদ ১ হাজার টাকা ও তার মোবাইল সিমটি রেখে অপহরণকারীরা চলে যায়। অপহরণকারীরা চলে গেলে সুজন নিজ চেষ্টায় চোখের বাঁধন খুলে ৪/৫ মিনিট হেঁটে একটি বাজারে উঠে স্থানটি কচুরীবাজার, মাগুরা বলে জানতে পারেন। সেখান থেকে তিনি একটি ট্রাকযোগে কালীগঞ্জে পৌঁছান। বাড়ির লোকজন সংবাদ পেয়ে তাকে রোববার ভোরেই বাড়িতে নেয়।

উল্লেখ্য, অপহরণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাকে ওই একই বাসে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় আটকে রাখা হয়েছিলো এবং বাসটি ৩ দিন কোথায় রাখা হয়েছিলো তার কোনো হদিস মেলেনি। বর্তমানে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ।