একটি দল মুক্তিযুদ্ধকে দলীয়করণ করতে চায়

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া  বলেছেন, স্বাধীনতাযুদ্ধ কোনো দলের ছিলো না। এটি ছিলো জনযুদ্ধ। একটি দল এ যুদ্ধকে দলীয় করতে চায়। স্বাধীনতা যুদ্ধকে কোনো দলের দলীয় সম্পত্তিতে পরিণত হতে দেয়া হবে না। গতকাল রোববার জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাদের করণীয় শীর্ষক আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখার জন্য তিনি ১০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও আর্থিক অনুদান প্রদান করেন।

খালেদা জিয়া বলেন, তথ্য উপাত্ত দিয়ে সত্যি কথা বললে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের পাকিস্তানের চর বলে আর অশ্লীল ভাষায় গালি দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদেরও রাজাকার বলে আ.লীগ। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের ভূমিকা ছিলো প্রশ্নবিদ্ধ। যুদ্ধের সময় তারা ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলো। সত্যিকার দেশ প্রেম তাদের ছিলো না।

সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। শাসক দলের লোভ আর ষড়যন্ত্রে সুন্দরবন আজ বিপন্ন। জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষায় আন্দোলনের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।

খালেদা জিয়া দাবি করেন, ১৯৭১ সালের মার্চে আওয়ামী লীগের নেতাদের ব্যর্থতার পটভূমিতে জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ করেছিলেন। হানাদার বাহিনীর অধিনায়ক জানজুয়াকে হত্যা ও বাকিদের বন্দী করেছিলেন। বেতার মারফত স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটিয়েছিলেন। তার ঘোষণার মাধ্যমেই বিদ্রোহ উন্নীত হয়েছিলো বিপ্লবে। প্রতিরোধযুদ্ধ উন্নীত হয়েছিলো স্বাধীনতা যুদ্ধে।

খালেদা জিয়া বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এ দেশে অনেক রাজনীতি হয়েছে। তাঁদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে, এখনো হচ্ছে। বিএনপি তা কখনো করবে না। বিএনপি মুক্তিযোদ্ধাদের ও স্বাধীনতার ইতিহাসকে কখনো দলীয় রাজনীতির উপকরণ করতে চায় না। এ নিয়ে বিতর্কও কাম্য নয়।

খালেদা জিয়া বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন তালিকা প্রণয়নের নামে যে জঘন্য জালিয়াতি ও দলীয়করণের আশ্রয় নেয়া হয়েছে, তা পরিশুদ্ধ করা হবে। প্রকৃত কোনো মুক্তিযোদ্ধা তালিকার বাইরে থাকবেন না। যেসব মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবার বিপন্ন ও মানবেতর জীবনযাপন করছে, তাদের সমাজে সম্মানজনক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেয়া হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কারাগারে বিশেষ মর্যাদা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হবে। দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিবাদ ও আন্দোলন সংগঠিত করার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ন্যায়সঙ্গত। আজ সেই ন্যায়সঙ্গত বিদ্রোহ সংগঠিত করার সময় এসেছে।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, সকলের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ আহ্বানে তারা সাড়া দেয়নি। তাই আমাদের বসে থাকার আর কোনো উপায় নেই। দেশের জনগণ আন্দোলন চায়, পরিবর্তন চায়। আওয়ামী লীগকে স্বদেশি হানাদার আখ্যা দিয়ে শিগগির আন্দোলন শুরুর হুমকি দেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আমরা অস্ত্রের মোকাবেলায় জনগণকে সাথে নিয়ে পথে নামবো। আমাদের আন্দোলন হবে শান্তিপূর্ণ, নিয়মতান্ত্রিক, জনগণের আন্দোলন। জনগণের সেই আন্দোলনে স্বৈরাচারী, অবৈধ সরকার তাসেরঘরের মতো ভেসে যাবে।

আলোচনাসভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ।