এতো বড় ঘটনা নিয়ে পুলিশের কোনো মাথা ব্যথা নেই

আলমডাঙ্গার তাহেরা হত্যার প্রতিবাদে রাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো/রাবি প্রতিনিধি: আলমডাঙ্গার স্কুলছাত্রী তাহেরাকে ধর্ষণ করে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গতকাল শনিবার সকাল ১১টার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে মামলার বাদী তথা তাহেরার বাবা পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য আদালতে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আজ রোববার চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার রশীদুল হাসানের সাথে পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য কথা বলবেন।

tahara kill ru manubbandun (2)

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষার্থী সাজু আহমেদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন- ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন, চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক টিএমএম নুরুল মোদ্দাসের চৌধুরী প্রমুখ। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের মধ্য বক্তব্য রাখেন মার্কেটিং বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থি এনামুল হক, ভাষা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাসরিন আক্তার মিতু। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুভাষ চন্দ্র সুতার, সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী, সহকারী অধ্যাপক আব্দুস ছালাম, সহকারী অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ, সহকারী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক জিল্লুর রহমান, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম। এছাড়া কপোত, মিতু, দিশা, মুন্না, তুহিন, পলাশ, ফারুক, শাহিন, তৌহিদ, মিনরুল, সাব্বির, সাদির, আলমগীর, মারুফ, সুজন, ফরহাদসহ তিন শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

দেশের যখন আইনের শাসন নিষ্ক্রীয় হয়ে যায় তখন ধর্ষণ ও হত্যার মতো জঘন্যতম কর্মকাণ্ড সংঘটিত হতে থাকে মন্তব্য করে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় নির্মমতার শিকার হলো মেধাবী শিক্ষার্থী তাহেরা। নিজ বাড়িতে যেখানে একটা মেয়ে নিরাপদ নয়, সে দেশের আইনশৃঙ্খলার কতোটুকু অবনতি হয়েছে সেটা জনগণের কাছে স্পষ্ট। আর এ কারণে অকালেই শেষ হয়ে গেলো তাহেরার স্বপ্ন।

বক্তারা আরো বলেন, আজ তাহেরা ধর্ষণের শিকার হয়ে নিহত হয়েছে। আগামীকাল কার বোন ধর্ষণের শিকার হবে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু এতো বড় ঘটনা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের কোনো মাথা ব্যথা নেই। বরং ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে বক্তরা বলেন, তাহেরার ওপর এমন নির্মম নির্যাতন করে যারা হত্যা করেছে, তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে যেন এমনভাবে শান্তি দেয়া হয় যাতে অন্য কোনো দুষ্কৃতীকারী তা দেখে ভয় পায়। এ সময় বক্তরা পুলিশের এমন অবহেলার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন।

বক্তারা এ জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেয়ার ঘৃণিত অপচেষ্টা চলছে এমন অভিযোগ উত্থাপন করে বলেন, এ ঘটনা যে নিছক আত্মহত্যার ঘটনা ছিলো না, তা সকলের চেয়ে পুলিশ বেশি ভালো বোঝে। সে কারণেই অভিভাবকদের শত আপত্তি উপেক্ষা করেই পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করে। ময়নাতদন্তের সাথে জড়িত অনেকেই সে সময় সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে গিয়ে এমন নৃশংসতা তারা জীবনে দেখেননি বলে মন্তব্য করে বলেছিলেন- তাহেরাকে ধর্ষণ করে লাশের ওপর অত্যাচার চালানো হয়েছে। অথচ কয়েক দিনের ব্যবধানে তারা ভোল পাল্টে ফেলছেন কতো অনায়াসে। আত্মহত্যা করার মতো কী আদৌ কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিলো? সে স্বেচ্ছাই আত্মহত্যা করলে নিজ কক্ষেই করতে পারতো। পাশের কক্ষে কেন? আত্মহত্যা করলে তার হাত, বুক-পেট ও উরুতে কেন এতো কাটাকাটির চিহ্ন থাকবে? গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় এতো কাটাছেড়া করার মতো তার হাত এতো বেশি সক্রিয় থাকা স্বাভাবিক কি-না। তারপরও প্রশ্ন থাকে নিজের নখের আঁচড়েই তা হয়েছে এমন দাবি করেন যেসব মতলববাজ, তাদের কাছে প্রশ্ন- তখনও তো তাহেরা বেঁচে ছিলো। তাহলে এতো কাটাছেড়ার পরও রক্ত বের হলো না কেন? নিশ্চয় হত্যার পর কাটাকাটি করার কারণে রক্ত বের হয়নি। কেন এতো ধর্মভীরু মেয়ে পায়জামা খুলে রেখে গলায় ফাঁস লাগালো? কেন বাচ্চু এবং তার বন্ধু রাজন, সেলিম ও শাহরিয়ার এক সাথে পালালো? যারা এ নির্মম হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করছে, তাদের এ সকল প্রশ্নের সদুত্তর দিতে হবে।

প্রসঙ্গত, আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নিহত শিক্ষার্থী তাহেরা খাতুন এ বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো। গত ৯ ডিসেম্বর ওই শিক্ষার্থীর নিজ ভাড়া বাড়িতে একা পেয়ে চারজন দুষ্কৃতীকারী পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। পরে তারা তাহেরাকে ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে।