ঢাকার কাকরাইল মসজিদ থেকে ২৪ তাবলিগকর্মী গ্রেফতার

 

স্টাফ রিপোর্টার: অরাজনৈতিক ইসলামী সংগঠন তাবলিগ জামাতের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সংগঠনের শীর্ষ মুরবি্বর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে লিফলেট বিতরণের সময় কাকরাইল মসজিদ থেকে ২৪ সাথীকে আটক করেছে পুলিশ। আর তাদের মুক্তির দাবিতে গতকাল শুক্রবার দিনভর রাজধানীর রমনা থানায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে সংগঠনের বেশকিছু কর্মী। একই সাথে অভিযুক্ত মুরবি্বর দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করে এ ঘটনার সুষ্ঠু সমাধানে সরকারের হস্তক্ষেপও কামনা করেছেন তারা।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রাতে বেশ কয়েকজন তাবলিগকর্মী বাংলাদেশের তাবলিগ জামাতের শূরা সদস্য ও কাকরাইলের অন্যতম মুরবি্ব ওয়াসিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মাগরিব নামাজের পর মসজিদের ভেতরে লিফলেট বিলি করতে থাকেন। এ নিয়ে দুইটি পক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশ গিয়ে ২৪ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

আটকের কারণ জানতে চাইলে মশিউর রহমান বলেন, তাবলিগ জামাতের মুরবি্বরা অভিযোগ করেছেন, তারা আসন্ন বিশ্ব ইজতেমাকে বাধাগ্রস্ত করতে এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তাদের ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে লিফলেট বিতরণকারীদের একজন মিতুল হাসান দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরেই ওয়াসিফুল ইসলামের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিলেন তারা। এজন্য তাদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে আটককৃতদের ওয়াসিফুল ইসলামের অনুসারীরা বেদম মারধর করার পর পুলিশে সোপর্দ করে। তিনি বলেন, আটক সাথীদের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলবে। মুরবি্বদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে শুক্রবার জুমার নামাজের পর তাবলিগের বেশ কয়েকজন কর্মী আটক ২৪ জন সাথীর মুক্তির দাবিতে রমনা থানার সামনে অবস্থান নেন। তাবলিগের সাথী আব্দুর রহমান উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, যেসব মুরবি্বদের মাধ্যমে দ্বীন শিক্ষার জন্য তাবলিগে এসেছেন এখন দেখছেন তাদের মধ্যেই দুর্নীতি ঢুকে পড়ছে। দুয়েকজন মুরবি্ব তাদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তাবলিগ জামাতকে ব্যবহার করছেন। এভাবে চলতে থাকলে একটি অরাজনৈতিক ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি সংগঠন টিকতে সমস্যা হবে। তিনি আটক সাথীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়ে সমস্যা সমাধানে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

জানতে চাইলে এ ব্যাপারে সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বলেন, তিনি এ ধরনের ঘটনার কিছুই জানতেন না। পরে শুনেছেন। বিস্তারিত জানতে চাইলে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে দিলি্লর নিজামুদ্দীনের নিষেধ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মুরবি্বদের নিষেধ রয়েছে। তাবলিগ জামাতের সাথে জড়িত একাধিক শীর্ষ সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে এ সংগঠনে বিভক্তির পাঁয়তারা চলছে। এ ঘটনার মূলে কাজ করছেন বাংলাদেশের তাবলিগের একজন প্রবীণ গুরুত্বপূর্ণ মজলিসে শূরার সদস্য। যিনি একাধারে ফায়সাল বা আমির। ওই সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, ফৌজদারী মামলা ও হয়রানিসহ অনেককে মারপিট করার অভিযোগ উঠেছে। পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী এ প্রতিষ্ঠানটিকে রাজনীতিযুক্ত করার প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন তাবলীগেরই কয়েকজন প্রবীণ সাথী। কিন্তু প্রায় বছর খানেক ধরে অনেকগুলো অভিযোগ ঘুরপাক খেলেও সম্প্রতি তাবলিগের দুটি অংশের দেশের কয়েক স্থানে প্রকাশ্যে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েছেন। ফলে অভিযুক্ত আমিরকে নিয়ে পুরো তাবলিগের অভ্যন্তরেই বিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য বজায় রাখতে অনেক সদস্যই এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। কিন্তু এখন বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। অন্যদিকে যারা মুখ খুলছেন, তাদের কখনো জঙ্গি, কখনো নারী দিয়ে ধরিয়ে দেয়াসহ তাদের মারপিট করার অভিযোগও মিলেছে। বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যেই আইন, বিচার ও সংসদীয় কমিটিতে পর্যন্ত নালিশ করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় অভিযুক্ত আমিরকে ইতোমধ্যে সংসদীয় কমিটি ডাকলেও তিনি সাড়া দেননি। ফলে এসব ঘটনাকে আমলে নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে অত্যন্ত গোপনে তদন্তের কাজও চলছে বলে জানা গেছে। এর আগে এ নিয়ে রাজশাহী ও ঢাকায় প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। এ ধরনের বিরোধপূর্ণ অবস্থান তাবলিগ জামাতে আগে কখনো লক্ষ্য করা যায়নি।