গরু পাচারের জন্য ভারত অভ্যন্তরে প্রবেশ রুখতে হবে

দেশে মাংসের প্রচুর ঘাটতি। চাহিদা পূরণের জন্যই প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা গরু বিশেষ হারে শুল্কে বৈধতা দেয়া হয়। আর এ গরু পাচার করে আনতে গিয়ে মাঝে মাঝেই প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষীদের নৃশংসতার শিকার হন বাংলাদেশি নাগরিক। মাঝে মাঝে সীমান্তরক্ষীর হাতে ধরা পড়ার খবরও পত্রিকার পাতায় উঠে আসে।

বিএসএফ’র হাতে ধরা পড়া বা গুলিতে নিহত হওয়ার খবর কাঙ্ক্ষিত নয় যেমন, তেমনই কোনোকিছুর চাহিদা পূরণে চোরাচালানও স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। কেননা, চোরাচালানীরা সুযোগ পেলে শুধু প্রয়োজনীয় মালামালই পাচার করে আনে না, তারা মাদকসহ দেশের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর দ্রব্যও আনে। সে কারণেই চাহিদা পূরণে বৈধভাবে আমদানির পথ খোঁজার পাশাপাশি দেশে উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেয়া জরুরি। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, চাহিদা পূরণে দেশে গবাদি পশু পালন কি আদৌ সম্ভব? অসম্ভব বলে কিছু না থাকলেও বাস্তবতার আলোকে এক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ।

প্রতিবেশী দেশ একেতো বিশাল, তারপর প্রভাবশালী। পড়শি দেশের সাথে আমাদের দেশের শুধু বিশাল সীমান্তের কারণেই নয়, তাদের কয়েকটি প্রদেশে গরু উদ্বৃত্ত। রপ্তানিতে তাদের আগ্রহ অনস্বীকার্য হলেও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের শঙ্কায় প্রতিবেশী দেশ বৈধভাবে গরু রপ্তানির পথ খুলতে নারাজ। চোরাইপথে পাচারে প্রকাশ্যে নমনীয়তা পরিলক্ষিত না হলেও ভারতীয়দেরই অনেকে আমাদের দেশে গরু পাচারে আগ্রহী। তা না হলে গরু পাচার করে আনা সম্ভব হচ্ছে কীভাবে? যেহেতু তাদের মধ্যে গরু পাচারে আগ্রহ রয়েছে, সেহেতু তাদের দিয়েই সীমান্ত পার করাতে পারলে আমাদের দেশের নাগরিকদের ওভাবে ধরা পড়তে হয় না, মরতে হয় না পাখির মতো।

আর দেশে উৎপাদন? গ্রামবাংলার কৃষক পরিবারের ঘরে ঘরে গরু মোটাতাজাকরণের ইতিবাচক রেওয়াজ গড়ে উঠলেও গত কয়েক বছর ধরে গরু পালনকারীদের লোকসান গুনতে হয়েছে। যে কাজে লোকসান সে কাজে আগ্রহ হারানো অস্বাভাবিক নয়। গত ঈদুল আজহার বাজারে গরুখামারীদের অধিকাংশকেই লোকসান গুনতে হয়েছে। চিকিৎসা ও গোখাদ্য খাতে যে হারে খরচ বেড়েছে সে হারে গরুর দাম বাড়েনি। তা ছাড়া কোরবানির হাটে ভারতীয় গরুর আমদানি মূল্যহ্রাসের অন্যতম কারণ। কোরবানির হাটে গরুর মূল্য হ্রাসের জন্য ভারতীয় গরু পাচারকারীদের কারসাজি কম দায়ী নয়। বিষয়টি সুক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণের দাবি রাখে বটে।

দেশে গবাদি পশু পালন ঘরে ঘরে গড়ে ওঠা রেওয়াজ ধরে রাখতে লোকসান হ্রাসের বাস্তবমুখি পদক্ষেপ নিতে হবে। চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য দেশের পশু সম্পদ বিভাগকে ঢেলে সাজানো দরকার। দরকার সীমান্তবাসীর মধ্যে দেশাত্ববোধ জাগিয়ে তোলার জন্য সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচি। গরু পাচারের জন্য ভারত অভ্যন্তরে অবৈধ প্রবেশ রুখতে হবে।