৭২ ঘণ্টায়ও তেল অপসারণের কার্যকর উদ্যোগ নেই

 

স্টাফ রিপোর্টার: শ্যালা নদীতে ট্যাংকার ডুবির ৭২ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তেল অপসারণের বিষয়ে কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত এক্সপেরিমেন্ট নিয়েই ব্যস্ত তারা। গতকাল শুক্রবার তেল অপসারণের জন্য বিশেষ তরল স্প্রে করা শুরু হলেও ২০ মিনিট পর তা স্থগিত করা হয়। এ অবস্থায় ৮০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ফার্নেস অয়েল। এতে বিশ্ব ঐতিহ্যের সুন্দরবনে মহাবিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতো বড় বিপর্যয় বিশ্বে আর কখনও দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ বিপর্যয় সিডর-আইলার চেয়েও ভয়াবহ হবে।

ইতোমধ্যে শ্যালা নদীর আশপাশের খাল ও নালায় মাছ ধরা বন্ধ হয়ে গেছে। অভয়াশ্রমে এখন আর ডলফিন ভাসতে দেখা যাচ্ছে না। তাই বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতিসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন সবচেয়ে বেশি হুমকির মুখে রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এছাড়া করমজলে কুমিরের প্রজনন কেন্দ্রে ৭টি কুমিরের ছানার মুখে ঘা দেখা দিয়েছে। মরতে শুরু করেছে গুঁইসাপ ও হাঁস-মুরগি। তেলযুক্ত পানি খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে গবাদি পশু। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে গঠিত ৯ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটির সদস্যরা শুক্রবার দুপুরে শ্যালা নদীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ওই কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট প্রদান করবে বলে জানা গেছে। এদিকে তেল অপসারণের ব্যাপারে বন বিভাগ, মংলা বন্দর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পরিবেশ বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের কাজে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। কোন পদ্ধতিতে তেল অপসারণ করা হবে এ ব্যাপারে তারা কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। তেল অপসারণের জন্য আনা রাসায়নিক পদার্থ ছিটানোও সম্ভব হচ্ছে না। এ পদার্থের মেয়াদ রয়েছে কি-না, এটি কোন দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, আমদানি কোড পরীক্ষা করে দেখার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পরিবেশের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে তেল অপসারণ করার জন্য বিশেষ এ কেমিক্যালটি ব্যবহার করা যচ্ছে না বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আর ওই কেমিকেল ব্যবহার করেও তেল অপসারণ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ ডুবে যাওয়া ট্যাঙ্কারে ছিলো সাড়ে ৩ লাখ লিটার ফার্নেস অয়েল। কিন্তু তেজস্ক্রিয়তা কমানোর জন্য মাত্র সাড়ে ১০ হাজার লিটার কেমিকেল তরল মজুদ রয়েছে। তাই এ পদ্ধতিটিও ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় স্থানীয়দের মাধ্যমে সনাতন পদ্ধতিতে ফোম, ছালার চট, কলা পাতা, দিয়ে চলছে তেল অপসারণের কাজ।

এদিকে, শ্যালা নদীর মৃগমারী থেকে আন্ধারমানিক, তাম্বুলবুনিয়া, হরিণটানা, শুয়ারমারা, জিউধরা, ধানসাগর, নন্দবালা, হাড়বাড়ীয়ায়, জংডা, করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় ভাসছে তেল।

শ্যালা নদীতে তেলবাহী ট্যাংকার নিমজ্জিত হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে চরম সমন্বয়হীনতা আর অব্যবস্থাপনা পরিলক্ষিত হচ্ছে। বনবিভাগ, মংলাবন্দর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএ, নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড, পরিবেশ বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন নিজেদের পছন্দমতো কার্যক্রম মনিটরিং ও তদারকি করছে। কেউ কারও কার্যক্রম সম্পর্কে আগে কোনো ধারণা পাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানগুলো যে যার মতো করে অভিজ্ঞতা অর্জনে ব্যস্ত সময় পার করছে। সবাই এক্সপেরিমেন্ট করতেই ব্যস্ত। ফলে মূল কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। আর তাই শেষ পরিণতিও সুখকর হচ্ছে না। সমন্বয়হীনতার কারণে অর্ধনিমজ্জিত ট্যাংকারটি উদ্ধারেই ৫৪ ঘণ্টা সময় লেগেছে। শেষ অবধি বেসরকারি উদ্যোগে ট্যাংকারটি উদ্ধার হয়।সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর এক্সপেরিমেন্টাল কার্যক্রমের কারণে তেল ক্রমেই ছড়াচ্ছে। তেল ছড়িয়ে পড়ায় দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশংকা করছে পরিবেশ গবেষকরা।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ঘটনাস্থল বন্দরের আওতায় পড়ে না। তারপরও এ দায় মংলা বন্দর এড়াতে পারে না। এ ঘটনায় বনবিভাগ, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিআইডাব্লিউটিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড সমানভাবে দায়ী। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা না থাকা।