স্কুলছাত্রী তাহেরার নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে আলমডাঙ্গায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন অব্যাহত

তাহেরার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সহপাঠ এসএসসি পরীক্ষার্থদের মোমবাতি মিছিল ও শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার স্কুলছাত্রী তাহেরা খাতুন হত্যার মামলা কোনো আসামিকে গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ধরতে পারেনি পুলিশ। মূল সন্দেহভাজন আনন্দধামের বাচ্চুকে এলাকায় দেখা যায়নি। সূত্র বলেছে, পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয়রা তার অবস্থান জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে আলমডাঙ্গায় বিভিন্ন কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় আলমডাঙ্গায় পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা মোমবাতি মিছিল ও শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেছে। মোমবাতি মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে আলমডাঙ্গা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে সমবেত হয়। শহীদ মিনারের বেদীতে সকলে মোমবাতি প্রজ্জ্বলিত করে। শেষে সহপাঠীরা তাহেরার আত্মার শান্তি কামনা করে ১ মিনিট নীরবতা পালন করে। কান্না জড়ানো নিঃসঙ্গ বেদীমূলে তাহেরার স্মৃতির উদ্দেশে ভালোবাসার আলো প্রজ্জ্বলন করে এক সময় সহপাঠীরা অব্যক্ত বেদনা নিয়ে বাড়ি ফেরে। এ সময় উপস্থিত ছিলো সহপাঠী সিনথিয়া, মিম্মি, আনিকা, হিমি, সানজিদ সাদাত ইমু, মাহফুজুর রহমান ঝিমু, জনি, পরাগ, রোমান, শিমুল, আবির, আব্দুল্লাহ আল শাকিব, শিশির, রকিব, মিষ্টি, জুঁই, নিশি, নাহিদ তমাল রোমান, শাহরিয়ার কবীর প্রমুখ। আজ শনিবার বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে সহপাঠীরা।

তাহেরার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ক্রমেই ফুঁসে উঠছে আলমডাঙ্গার সর্বস্তরের মানুষ। ক্রমেই উত্তাল হচ্ছে আলমডাঙ্গা শহর। প্রতিদিনই বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের পর দিন আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের আয়োজনে আলমডাঙ্গার ইতিহাসের সর্বকালের সবচেয়ে বড় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া গতপরশু বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে শহরের আনন্দধাম এলাকায় প্রধান সড়কে অনুষ্ঠিত ওই মানববন্ধনে সর্বস্তরের মানুষ অংশ নেন। আলমডাঙ্গা বণিক সমিতি ও আনন্দধামবাসী যৌথভাবে ওই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেন। মানববন্ধন শেষে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বিক্ষোভ মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ওই কর্মসূচিগুলোতে বক্তারা দাবি করেন- থানা পুলিশ একটু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিলে সাথে সাথেই হত্যাকারীদের আটক করতে পারতেন। ঘটনার পর পর হত্যাকারীরা নিকটেই ঘুর ঘুর করছিলো। প্রধান সন্দেহভাজন বাচ্চু ঘরেই জানালা দরজা আটকে শুয়েছিলো। রাতে সে বাবুপাড়ায় আত্মীয়ের বাড়ি অবস্থান করে। পরদিন ভোরে পালিয়েছে। এছাড়া সন্দেহজনক আরও অনেকেই এখন বাড়ি ছাড়া। হত্যাকারীরা যেখানেই অবস্থান করুক না কেন তাদেরকে দ্রুত আটক করার দাবি তোলা হয়। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়। যাতে আর কোনো নরপশু এমন বর্বরোতা দেখাতে সাহস না দেখায়। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনের শৈথিল্য মেনে নেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। এ নৃশংস হত্যাকাণ্ড আমাদের সমাজের লজ্জা, সভ্যতার লজ্জা। এর শাস্তি পেতেই হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আজ শনিবারও তার আলমডাঙ্গা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহপাঠীরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়েছে। ওই কর্মসূচির সাথে আরও কয়েকটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যোগ দেয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে, পুলিশ গতপরশু ঘটনাস্থল আনন্দধাম এলাকা থেকে সুমন্ত নামের এক যুবককে থানায় নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সারাদিন পর রাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এলাকার অনেকেরই সন্দেহ রয়েছে সুমন্তের জড়িত থাকা নিয়ে। সুমন্ত মাঝে মধ্যে তাহেরাকে উত্ত্যক্ত করতো বলে অনেকেই অভিযোগ করেছেন।

সন্দেহজনক বাড়ির মালিকের ছেলে বাচ্চু ঘটনার পর পরই গাঢাকা দিলেও পরদিন পর্যন্ত তাদের বাড়ির অন্য সদস্যরা বাড়িতেই ছিলেন। গতপরশুদিন থেকে ওই বাড়িতে মালিকপক্ষ কারও দেখা যাচ্ছে না। পুলিশ এখনও পর্যন্ত তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তাছাড়া তাহেরার প্রাইভেট শিক্ষক রাশেদকে নিয়েও রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তার পড়াতে যাওয়ার টাইম-টেবল নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন ছুতো নিয়ে মাস্টারের ওই বাড়িতে দিনে একাধিক বার যাওয়া-আসার বিষয়টিও সবিশেষ সমালোচিত হচ্ছে।