কৌশলে স্কুলছাত্র অপহরণের পর কবরস্থানে রেখে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি : উদ্ধার

আহরকচক্রের এক নারীসহ গ্রেফতার ৩ : আজ আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন জানাবে পুলিশ

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গা বদরগঞ্জ মর্তুজাপুরের নবম শ্রেণির ছাত্র সাগর হোসেনকে কৌশলে অপহরণের পর ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির এক পর্যায়ে অপহৃতকে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে আলমডাঙ্গার কেদারনগরের একটি বাড়ি থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ অবশ্য বলেছে, অপহরকচক্রের এক সদস্যের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে মুখ বাঁধা অবস্থায় কবরস্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে অপহরকচক্রের এক মহিলাসহ ৩ সদস্যকে।

sagor

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলার মোর্তুজাপুরের আনোয়ার হোসেনের ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র সাগর (১৪) গত ৮ ডিসেম্বর মোবাইলফোনের সিম উঠাতে সরোজগঞ্জ বাজারে যায়। তারপর সে আর বাড়ি ফেরেনি। পরিবারের লোকজন সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ করেও তার খোঁজ পাননি। পরদিন সাগরের মোবাইলফোন থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোন দিয়ে সাগর এখন তাদের ডেরায় দাবি করে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। উপায়ান্তর না পেয়ে শেষে সিঁন্দুরিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে জিডি করেন। এদিকে গতকাল বিকেলে সংবাদ পেয়ে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ সাগরকে উপজেলার কেদারনগর গ্রামের মৃত সৈয়দ আলী বিশ্বাসের ছেলে আজিজুরের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। উদ্ধারকৃত সাগর জানিয়েছে, সে সরোজগঞ্জ বাজারে গেলে একই গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে শিমুলের (২০) দেখা হয়। শিমুল তাকে আলমডাঙ্গায় বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। পরে তারা আলমডাঙ্গা শহরে যায়। সেখান থেকে মিরপুর উপজেলার পোড়াদহে বেড়াতে যায়। রাতে আলমডাঙ্গা শহরে ফেরে। সেখানে শিমুলের পূর্বপরিচিত আলমডাঙ্গার কেদারনগর গ্রামের মৃত সাকের আলীর ছেলে আসাদুল (৩৫) ও একই গ্রামের আইন উদ্দীন বিশ্বাসের ছেলে ডালিমের সাথে তার আলাপ হয়। ওই রাতেই তারা কেদারনগর যায়। ডালিমের বাড়িতে গিয়ে ওঠে। রাতে এক পর্যায়ে শিমুল পায়খানা ফেরার নাম করে সাগরকে রেখেই পালিয়ে যায়। ভোররাতে ডালিম ও আসাদুল সাগরকে ঘুম থেকে উঠিয়ে মুখে টেপ লাগিয়ে হাত বেঁধে রাখে। রাতে বাড়িতে রাখলেও দিনে রাখতো সেন্টু মেম্বারের পারিবারিক কবরস্থানের গর্তে। গত দু দিন দু রাত এভাবে থাকার পর গতকাল কৌশলে সাগর হাতের বাঁধন খুলে ফেলে। এরপর খোলে চোখের টেপ। দৌঁড়ে গিয়ে ওঠে নিকটবর্তী সৈয়দ আলীর ছেলে আজিজুরের বাড়িতে। সব কিছু খুলে বলে বাড়ির সবাইকে। এতোকিছু জানতে পেরে আজিজুর রহমান গ্রামের মেম্বার সেন্টুকে সংবাদ দেন। সেন্টু মেম্বার পরে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশে সংবাদ দেন। দুপুরে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ সাগরকে উদ্ধার করে আলমডাঙ্গা থানায় নিয়ে যায়। পুলিশ অবশ্য বলেছে, অপহরক শিমুলকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চোখ মুখ বাঁধা অবস্থায় কবরস্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।

একই সময়ে সিঁন্দুরিয়া ফাঁড়ি পুলিশ অভিযান চালিয়ে অপহরনের প্রধান হোথা শিমুলকে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে শিমুল সাগরকে অপহরণ করার কথা স্বীকার করে। গতকাল বিকেলে শিমুলের স্বীকারুক্তি মোতাবেক এএসপি (সার্কেল) কামরুজ্জামানের নির্দেশে চুয়াডাঙ্গা সদর থানার সেকেন্ড অফিসার আমীর আব্বাস, আলমডাঙ্গা থানা এসআই জিয়াউর রহমান ও ডিবির এএসআই জগদীশ, এএসআই সাজ্জাদসহ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে কেদারনগর গ্রামে অভিযান চালান। এ সময় অপহরক আসাদুল ও ডালিমের স্ত্রী আয়েশা খাতুনকে আটক করেছে। রাতেই তাদেরকে চুয়াডাঙ্গায় সদর থানায় নেয়া হয়। সাগরের চাচা আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় অপহরণ মামলা দায়ের করেছেন। সাগরকে আজ আদালতে নেয়া হবে। রেকর্ড করা হতে পারে তার দেয়া তথ্য। গ্রেফতারকৃতদেরও আজ আদালতে সোপর্দ করা হবে। রিমান্ডের আবেদন করা হতে পারে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চুয়াডাঙ্গা সদর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আমির আব্বাস বলেছেন, অপহরকচক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে।