রোহিঙ্গা জঙ্গি নিয়ে জেএমবির আত্মঘাতী হামলার ছক

লকাতায় দু দেশের গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য প্রকাশ

 

স্টাফ রিপোর্টার: কোন পথে রোহিঙ্গা জঙ্গিদের সাহায্য নিয়ে জেএমবি আত্মঘাতী হামলার ছক কষেছিলো বাংলাদেশে? ভারতের কোথায় কোথায় হামলার ছক কষেছে তারা? ঠিক কি ভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর জঙ্গি হামলার চক্রান্ত হয়েছিলো? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে কোলকাতা এবং হায়দরাবাদে ধৃত সাজিদ এবং খালিদকে যৌথভাবে জেরা করছেন এনআইএ এবং বাংলাদেশের গোয়েন্দারা। শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার রাত পর্যন্ত দফায় দফায় তারা এ দুজনকে জেরা করেন। পাশাপাশি বর্ধমান বিস্ফোরণে যুক্ত জেএমবি’র তিন জঙ্গি বোমারু মিজান, সানি এবং ফারুখ হোসেনের খোঁজ পেতে দীর্ঘ জেরা করা হয়।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নারী মানব বোমার মাধ্যমে হামলার ছক কষেছিলো জেএমবি। এই বিষয়ে সিদ্ধহস্ত রোহিঙ্গা জঙ্গিরা। সমপ্রতি মিয়ানমারে গড়ে উঠেছে নতুন জঙ্গি সংগঠন আরাকান মুজাহিদিন। দলটির সাথে জেএমবি এবং রোহিঙ্গা সলিডিটারি অর্গানাইজেশনের যোগ রয়েছে। হায়দরাবাদে ধৃত খালিদ এই রোহিঙ্গা সলিডিটারি অর্গানাইজেশনের সদস্য।

জানা গেছে, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঢুকে পড়েছে। ভারতের হায়দরাবাদ ও ব্যাঙ্গালোরসহ কয়েক রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে তারা। এদেরই একটি অংশকে কাজে লাগাচ্ছে জঙ্গিরা। রোহিঙ্গা সলিডিটারি অর্গানাইজেশন এবং জেএমবি এদের কয়েকজনকে বাছাই করে মানব বোমায় পরিণত করেছে। বাংলাদেশ এবং ভারতে হামলার ছক হয়েছে এদেরকে দিয়ে। কোনো কারণে এরা যদি ধরাও পড়ে তাহলে জেএমবি-র জঙ্গি নেটওয়ার্ক অধরাই থাকবে। তাদের পরিকল্পনা জানা যাবে না। পাশাপাশি ভাষাগত সমস্যার কারণে এদের জেরা করতেও বেশি সময় লাগবে। ততোক্ষণে মূল পরিকল্পনাকারীরা সরে পড়তে পারবে।

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, খালিদকে জেরা করে মিয়ানমারের জঙ্গি সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডিটারি অর্গানাইজেশনের কয়েকজনের সন্ধান পাওয়ার চেষ্টা চলছে। সাজিদকে জেরা করে ত্রিশালের জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় যুক্ত তিন জেএমবি জঙ্গি জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান, সালেউদ্দিন সালেহিন ওরফে সানি এবং ফারুখ হোসেনের খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বর্ধমান বিস্ফোরণে জড়িত আরও ৯ জনের সন্ধান পেতে পুরস্কার ঘোষণা করছে এনআইএ। বর্ধমান বিস্ফোরণে ধৃত সাজিদ, খালিদ, আমজাদ, হাকিম ও আমিনার ডি এন এ নমুনা পরীক্ষার জন্য হায়দরাবাদে পাঠানো হচ্ছে।শুক্র এবং শনিবার বাংলাদেশ থেকে কলকাতায় আসা ৭ সদস্যের তদন্তকারী দলটি দফায় দফায় সাজিদ, খালিদকে জেরা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। তদন্তে উঠে আসা তথ্যের গুরুত্ব বুঝেই তারা বর্ধমানের বিস্ফোরণস্থলে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (গোয়েন্দা) মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে আসা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত ডিআইজি জিএম আজিজুর রহমান, এনএসআইর পরিচালক কর্নেল আবু হেনা মো. মোস্তফা, ৱ্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) মেজর মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গোপনীয়) মাহফজুর রহমান এবং সিআইডির এসএস আশরাফুল ইসলাম-রা কোলকাতায় এনআইএ’র দপ্তরে বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া জেহাদি বই, রাসায়নিক নমুনা দেখে ছবি তোলেন? ২০০৫ সালে বাংলাদেশের ৬৩টি জেলায় প্রায় একই সাথে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিলো জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)? বর্ধমানের বিস্ফোরণের সাথে সেই ঘটনার মিল তারা খতিয়ে দেখেন। জেরার সময় বাংলাদেশের গোয়েন্দারা সাজিদের সামনে মোনায়েমের ছবি তুলে ধরেন। প্রথমে নারায়ণগঞ্জের কথা স্বীকার না করতে চাইলেও পরে সে মেনে নেয় বলে, মোনায়েম তার বড় ভাই। বৈঠকে বাংলাদেশের গোয়েন্দা দলটি বর্ধমান বিস্ফোরণের সাথে সম্পর্কিত জেএমবি জঙ্গিদের বেশ কিছু মোবাইল নম্বর দিয়েছে। পাশাপাশি বাংলাদেশের দলটি সেদেশের এক কুখ্যাত জঙ্গি সোহেল মাহফুজের বিষয়ে তথ্য চেয়েছে। এনআইএ’র পক্ষে বৈঠকে ছিলেন এনআইএ’র পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সঞ্জীবকুমার সিং।