ভোট কবে- ঠিক করবে জনগণ : বিসওয়াল

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কখন অনুষ্ঠিত হবে তা এদেশের জনগণই ঠিক করবে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল। ঢাকার সাথে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়ার ওপর ওয়াশিংটন খুব গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিসওয়াল। একটি শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতন্ত্রের পক্ষে আমাদের অবস্থান রয়েছে এবং আমরা বাংলাদেশের সাথে কাজ চালিয়ে যাবো, তিন দিনের সফর শেষে গতকাল শনিবার ঢাকা ছাড়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে বলেন তিনি। কাঠমাণ্ডুতে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়ে সেখান থেকে বৃহস্পতিবার ঢাকা আসেন বিসওয়াল। পর্যবেক্ষক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হয়ে সার্ক সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ঢাকায় বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, শ্রমিক অধিকার কর্মীসহ তৈরি পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এক বছর দায়িত্ব পালনের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় ঢাকা সফর করলেন বিসওয়াল। নির্বাচনের আগে গত বছরের ১৬ নভেম্বর নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হরতাল, অবরোধ ও রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসে সমস্যা সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের চেষ্টা করেছিলেন বিসওয়াল। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বর্জনের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় এবং টানা দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসে। নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের পশ্চিমা মিত্রদের পক্ষ থেকে দ্রুত একটি অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছিলো। বিসওয়াল শুক্রবার রওশন এরশাদের কাছে আগামী নির্বাচন কবে হবে তা জানতে চেয়েছেন বলে জাতীয় পার্টির এক নেতা জানিয়েছেন। অবশ্য এদিন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কিত প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গেছেন তিনি। নির্বাচনের বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণই এর সময়সীমা নির্ধারণ করবে। আমি বলতে পারি- দু দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে কীভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া যায় তার ওপর আমরা খুব গুরুত্ব দিচ্ছি, বলেন বিসওয়াল। বিএনপি চেয়ারপারসনের সাথে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যখন যেখানে যাই সব সময় সরকার ও বিরোধীদের সাথে সাক্ষাৎ করি। গণতন্ত্র চর্চার অংশ হিসেবে আমরা তা করি। আমরা বিশ্বাস করি, একটি জাতি হিসেবে বাংলাদেশের শক্তি হচ্ছে এর গণতন্ত্র এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বিসওয়াল বলেন, বৈঠকে তিনি রাজনৈতিক সংলাপের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন। সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীলতা ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার যে দায়িত্ব রয়েছে তার ওপরও আমরা জোর দিয়েছি। অবশ্য বিচার বহির্ভূত হত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এ বিষয়ে তদন্ত ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। জবাবদিহির মধ্যে থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা এবং যেকোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সরকারের কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি, বলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ওয়াশিংটন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে তিনি এ বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন বলে জানান বিসওয়াল। এজন্য দিনক্ষণ ঠিক করা নিয়ে ভাবছি আমরা। স্বাস্থ্য, কৃষি ও পরিবেশসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে এবং এ অগ্রগতি অব্যাহত থাকুক তা আমরা দেখতে চাই। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারত্ব সংলাপের কথা স্মরণ করে বিসওয়াল বলেন, তার এ সফরও ওই সংলাপের ধারাবাহিকতা। বিসওয়াল বলেন, অভিন্ন লক্ষ্যের অনেক অনেক ক্ষেত্র আমরা পেয়েছি যেখানে আমরা সম্পর্ক গভীর ও জোরালো করতে চাই এবং  এ সফরও ওই সংলাপের ধারাবাহিকতা।

ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত ওই সংলাপে পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের অংশীদারত্বও খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার প্রশংসা করে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে তিনি খুবই সোচ্চার ছিলেন। মজিনার উত্তরসূরিও তা অব্যাহত রাখবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গতকাল শনিবার হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে তারও যোগ দেয়ার কথা ছিলো। তবে সন্ধ্যায় উজবেকিস্তানের উদ্দেশে যাত্রা করতে হবে বিধায় সার্বিক পরিস্থিতি মিলিয়ে তিনি যেতে পারেননি।