সীমান্তে মোবাইল নেটওয়ার্ক সীমিত করার উদ্যোগ

ভারত ভূখণ্ডেও বাংলাদেশের সিম ব্যবহার করে জঙ্গিরা অপতৎপরতা চালায়

 

স্টাফ রিপোর্টার: পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরাসহ বাংলাদেশ ভারতের সীমান্ত এলাকার কাছাকাছি অনেক এলাকাতেই বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়। এ সুযোগ নিয়ে দু দেশে সন্ত্রাস, জাল টাকার ব্যবসা এবং জঙ্গিবাদের সম্প্রসারণ ঘটছে বলে বাংলাদেশ সরকারকে তথ্য দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দল এনআইএ। বাংলাদেশের সিম ব্যবহারকারীদের মধ্যে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি জালনোটের ব্যবসায়ী, পাচারকারী, জঙ্গিরাও রয়েছে। এ ব্যাপারে বিটিআরসি কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, মোবাইলের ফ্রিকোয়েন্সির সীমানা বাংলাদেশের সীমানার কতো দূর যাবে তা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতার মুখে রয়েছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন। দু দেশের সীমান্ত ব্যবহারে পাচারকারী এবং জঙ্গি সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক সীমিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ ব্যাপারে অনেক কাজ এগিয়েছে বলে জানালেন বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান।

সাম্প্রতি ভারতে কয়েকটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটনায় সম্পৃক্ত জঙ্গিদের গ্রেফতার করার পর তাদের হাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির সিম পাওয়া গেছে। সীমান্তের ওপারে এদেশের সিম বাংলা সিম হিসেবে পরিচিত। এনআইএ সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশ সরকারকে বেশ কিছু মোবাইল নম্বর দিয়েছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে প্রকাশ। বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক বলেন, বাংলাদেশের সীমানা সরলরৈখিক নয়। এ কারণে মোবাইল ফ্রিকোয়েন্সি সীমানা বরাবর সীমাবদ্ধ রাখা খুবই কঠিন। তবে গত সাত-আট বছর ধরেই এ ব্যাপারে কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন জটিলতা কাটিয়ে এ কাজ কিছুটা এগিয়েছে বলে জানান তিনি। বর্ধমান বিস্ফোরণের আগে আরও কয়েকটি জঙ্গি সম্পৃক্ততার ঘটনায় ভারতে গ্রেফতারকৃত সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে বাংলাদেশের মোবাইল সিমকার্ড। গত জুনে বাগুইআটিতে গ্রেফতার হন বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের ৭টি খুনের মামলায় অভিযুক্ত নূর হোসেন। অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকেও বেশ কয়েকটি বাংলা সিম উদ্ধার করে ভারতের পুলিশ। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে পেট্রাপোল সীমান্ত থেকে প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার দূরে বনগাঁ স্টেশনের কাছাকাছি এলাকা থেকেও অনায়াসে বাংলাদেশের সিম ব্যবহার করে কথা বলা যায়। পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার সবখানে পাওয়া যায় বাংলাদেশের নেটওয়ার্ক।

ভারতীয় মোবাইলের নেটওয়ার্কে না থাকায় এ নম্বরগুলো ব্যবহার করে বাংলাদেশে কার সাথে কথা বলা হয়, তা উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয় ভারতের গোয়েন্দা দল। একই অবস্থা বর্ধমান বিস্ফোরণ ঘটনায় উদ্ধার হওয়া বাংলা সিমের ক্ষেত্রেও। জেএমবির জঙ্গি সন্ত্রাসীদের কাছে প্রচুর বাংলা সিম পেলেও সেসব ব্যবহার করে বাংলাদেশের কার কার সাথে জঙ্গি কাওসর ও তার দলবল কথা বলেছে, তা জানতে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের শরনাপন্ন হতে হয়েছে ভারতের এনআইএ দলের গোয়েন্দাদের। এনআইএ এবং ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জানতে পেরেছে এ ধরনের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার কারণেই বেশকিছু দিন ধরে কাওসররা পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গিবাদ ছড়ালেও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের নজরদারি এড়িয়ে গেছে। ভারতের কোনো মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে বিদেশে একাধিকবার কথা বললে সেই নম্বরটি স্বাভাবিকভাবেই নজরদারিতে ধরা পড়ে। সেটা এড়াতেই জেএমবি শীর্ষজঙ্গি কওসররা বাংলাদেশে জেএমবি জঙ্গিদের সাথে কথা বলতে সচেতনভাবেই বাংলা সিম ব্যবহার করে সীমান্ত এলাকায় গিয়ে কথাবার্তা বলেছে বাংলাদেশে থাকা সঙ্গীদের সাথে। যাতে তাদের এ যোগাযোগের বিষয়টি প্রশাসনের নজরে না পড়ে। একইভাবে জালনোটের ব্যবসায়ী, পাচারকারীরাও সীমান্তের দু পার থেকেই নিরাপদে তাদের ব্যবসা চালায়। তাই জঙ্গি কার্যকলাপসহ জালনোটের ব্যবসায় ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের মোবাইলের ব্যবহার ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দলের সদস্যরা। পাশাপাশি সীমান্তে বাংলা মোবাইলের নেটওয়ার্কের এলাকা কমানোর জন্যও তারা অনুরোধ করেছে।

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের স্পেকট্রাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, সব দেশেই সীমান্ত এলাকায় মোবাইল ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ন্ত্রণ করা এবং ট্রান্সবর্ডার আন্তর্জাতিক আইন বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে বেশ জটিলতা রয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আর তাই মোবাইল নেটওয়ার্কের সীমানা কমিয়ে আনা সম্ভব হলেও সেটা বেশ জটিল এবং সময় সাপেক্ষ। কারিগরি জটিলতা ব্যালেন্স করে চেষ্টা করতে হবে, যাতে সেটা সীমান্ত এলাকা থেকে ১০০-২০০ গজের চেয়ে বেশি অতিক্রম না করে। বেশ কিছুদিন থেকেই বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিটিআরসিকে এ ব্যাপারে অনেক অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান।