মুখ থুবড়ে সাশ্রয়ী সেচে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির প্রকল্প

গাংনীতে বিদ্যুতের অভাবে পড়ে আছে বিএডিসির ৫টি পাউয়ার পাম্প

 

মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার মহাম্মদপুর গ্রামে মাথাভাঙ্গা নদীর তীরে তিন বছর আগে নির্মিত ৫টি সেচ পাম্প আজও চালু হয়নি। মুক্ত জলাশয়ের পানি ব্যবহার করে সাশ্রয়ী সেচে কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করে বিএডিসি। বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ হলেও সংযোগ অভাবে চালু হচ্ছে না পাম্পগুলো।

Gangni Pump pic_ (2)

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সমন্বিত মুজিবনগর কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মহাম্মদপুর গ্রামের ৪ ব্যক্তির নামে ৫টি সেচ পাম্প স্থাপন করা হয়। এতে বিএডিসির ব্যয় হয় ২৪ লাখ ৮৫ হাজার ২৬৮ টাকা। পাউয়ার পাম্প নামের ওই সেচ পাম্প দিয়ে মাথাভাঙ্গা নদী থেকে পানি তুলে সেচ দেয়া হবে। এতে সেচ খরচ কমার পাশাপাশি সারা বছর সহজেই সেচের ব্যবস্থা হওয়ায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির আশা নিয়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। নির্মাণকৃত সেচ পাম্প মালিকরা হচ্ছেন- বুলবুল আহম্মেদের ২টি দু কিউসেক করে, আলী হোসেনের ১টি পাঁচ কিউসেক, আহসান হাবীবের ১টি পাঁচ কিউসেক ও রহিদুল ইসলামের ১টি দু কিউসেক। ২০১১-২০১২ অর্থ বছরের ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বিএডিসি এ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে। এর মধ্যে রয়েছে পাম্প হাউজ ও সেচ নালা।

বুলবুল আহম্মেদ জানান, বিএডিসির নিয়ামনুযায়ী ৫ কিউসেকের জন্য ৪২ হাজার ও ২ কিউসেকের জন্য ৭ হাজার ৫শ টাকা করে খরচ হয়েছে চাষিদের। এর মধ্যে জামানত, সেচ নালা তৈরির একটি অংশ ও অংশগ্রহণ ফি রয়েছে। নির্মাণকাজ শুরুর আগে থেকেই সেচপাম্প মালিকরা টাকা পরিশোধ করেছেন। কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে আজও চালু না হওয়ায় তারা অন্য পাম্প স্থাপন করতে পারছে না। ফলে লাভের বদলে কৃষি উৎপাদনে ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন মাথাভাঙ্গা নদী পাড়ের ক্ষেত মালিকরা।

নির্মাণের পর থেকে সেচনালা ও পাম্প হাউজ অব্যবহৃত থাকায় নষ্ট হতে বসেছে। দ্রুত চালু করা না গেলে সরকারি এ সম্পদ বিনষ্ট হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেন চাষিরা। সেচপাম্প মালিক রহিদুল ইসলাম জানান, পাম্প হাউজ ও সেচ নালা তৈরির জন্য কৃষকরা জমি দিয়েছেন। ক্ষেতের আইলের পাশ দিয়ে সেচ নালা নির্মাণ করা হয়েছে। এতে চাষিদের জমি নষ্ট হয়েছে। কিন্তু সহজলভ্য সেচের আশায় তারা এ ক্ষতি কিছুই মনে করেননি। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে পড়ে রয়েছে সেচনালা। এতে চাষিরা সেচপাম্প মালিকদের ওপর ক্ষিপ্ত। এ মাঠে সারা বছরই ধান, পাট, সবজি, হলুদ ও ডাল জাতীয় ফসল আবাদ হয়। ফলে সারা বছরই সেচের প্রয়োজন পড়ে। দ্রুত বিদ্যুত সংযোগ দিয়ে পাম্পটি চালু করার দাবি জানান মাথাভাঙ্গা নদী পাড়ের চাষিরা।

জানতে চাইলে বিএডিসি ক্ষুদ্র সেচ মেহেরপুরে গাংনী ইউনিটের উপসহকারী প্রকৌশলী সৌরেন্দ্র মোহন বিশ্বাস বলেন, ৫টি পাউয়ার পাম্পের সংযোগের জন্য পল্লী বিদ্যুতকে ডিমান্ড নোট দেয়া হয়েছে ২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে। ওই বছরই বৈদ্যুতিক লাইন নির্মাণ হয়েছে। কিন্তু ওভার লোডের কথা বলে সংযোগ দিচ্ছে না পল্লী বিদ্যুত। এ বিষয়ে বিএডিসির কিছুই করার নেই বলে জানান তিনি।

মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আলী হোসেন জানান, ওভারলোডের কারণে সংযোগ দেয়া যাচ্ছে না। বিএডিসি যখন ডিমান্ড নোট জমা দেয় তখন লিখিত শর্ত ছিলো ওভারলোডের কারণে সংযোগ পেতে দেরি হবে। তবে বামন্দী বাজারে একটি উপকেন্দ্র (সাব স্টেশন) নির্মান হচ্ছে। এটি চালু হলেই সেচ পাম্পগুলোর সংযোগ দেয়া সম্ভব হবে।