মিল-অমিলের ফাঁদে ৩১ লাখ ক্ষুদে শিক্ষার্থীর মহাসর্বনাশ

 

স্টাফ রিপোর্টার: ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের মিল-অমিলের ফাঁদে পড়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়া ৩১ লাখ ক্ষুদে শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষাজীবনের প্রতিযোগিতার শুরুতেই ভয়ঙ্কর হোঁচট খেয়েছে। বিশেষ করে মেধাবী শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। অন্যদিকে কম মেধাবী শিক্ষার্থীরা অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে নিজেদের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেয়ে কথিত ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পাওয়ার ব্যাপারেই বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। সহপাঠীদের সাথে প্রতিযোগিতায় সন্তানদের টিকিয়ে রাখতে ভবিষ্যত পরিণতির কথা না ভেবে অভিভাবকদের অনেকেই এর পেছনে ছুটছেন।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, কথিত ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের সাথে পরীক্ষার হলে দেয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল থাকুক কিংবা না থাকুক তাতে কিছু যায়-আসে না। কারণ প্রশ্ন ফাঁস বিতর্কে সারাদেশে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে তা খুদে শিক্ষার্থীদের মারাত্মকভাবে মানসিক চাপে ফেলেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব নিঃসন্দেহে প্রতিটি খুদে শিক্ষার্থীর আগামী শিক্ষাজীবনের ওপর পড়বে। এ ইস্যুটি প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষাব্যবস্থার মূল লক্ষ্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলেও আশঙ্কা করছেন শিক্ষাবিদরা।

তাদের ভাষ্য, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মিডিয়া থেকে পাওয়া প্রশ্নপত্রের সাথে পরীক্ষার হলে দেয়া প্রশ্নপত্রের হুবহু মিল না থাকলে তা ফাঁস বলা যাবে না বলে মন্ত্রী-আমলারা যে দাবি তুলেছেন, সেটাই এখন ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা এ সুযোগ নিয়েই সংঘবদ্ধ চক্র মূল প্রশ্নপত্রের সাথে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মিল রেখে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিচ্ছে। এতে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সর্বনাশ হলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।

অভিজ্ঞজনদের দাবি, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের সাথে মূল প্রশ্নপত্রের কতো শতাংশ মিল পাওয়া গেলো বা না গেলো সেদিকে না তাকিয়ে এ অপতৎপরতার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে ভয়ঙ্কর এ প্রবণতা অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব হতো। এতে ক্ষমতাসীন সরকারও এ ইস্যুতে ইমেজ সঙ্কটের হাত থেকে রক্ষা পেতো।

শিক্ষাবিদরা এ ইস্যুটিকে বিশেষ গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র বলে চিহ্নিত করে খোদ সরকারকেই এ জন্য দায়ী করেছেন। তাদের ভাষ্য, বিভিন্ন ফেসবুক আইডিতে যে প্রশ্নপত্র পাওয়া যাচ্ছে তাকে সাজেশন বলে দাবি করে খোদ মন্ত্রী-আমলারাই দুর্নীতিবাজচক্রকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। শিক্ষাবর্ষের শুরু, মাঝামাঝি কিংবা পরীক্ষার এক-দু মাস আগে কোনো ধরনের গাইড লাইন না দিয়ে পরীক্ষার ঠিক আগের দিন নির্বাচিত প্রশ্নমালা ফেসবুকে প্রকাশ কোন ধরনের সাজেশন পর্যায়ে পড়ে এবং মন্ত্রী-আমলারা এতে কীভাবে কেন সমর্থন জোগান তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

এদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের এ ইস্যুতে শিক্ষাবিদদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও ক্ষোভে ফুঁসতে শুরু করেছে। তারা প্রশ্ন ফাঁসের সাথে জড়িতদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের যারা এ সর্বনাশা অপতৎপরতায় সায় দিচ্ছেন তাদেরও শাস্তি দাবি তুলেছে। ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের ভাষ্য, সাজেশনের নামে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিয়ে ছোট ছোট শিশুদের অন্যায় করতে শেখানো হচ্ছে। এর মধ্যদিয়ে জাতির মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে।