পানিপথে মালয়েশিয়ায় গিয়ে খাড়াগোদার শাহাদত খুন : ৫ মাস পর বাড়ি ফিরলেন শাহাদতের সঙ্গী তরিকুল

বেগমপুর প্রতিনিধি: সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে প্রতারক আদমব্যাপারীর খপ্পরে পড়ে পানিপথে মালয়েশিয়ায় নেয়ার পথে নির্মমভাবে খুন হয় চুয়াডাঙ্গা সদর খাড়াগোদা গ্রামের শাহাদত। শাহাদতের লাশ তার পরিবার ফিরে না পেলেও দীর্ঘ ৫ মাস পর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরলেন শাহাদতের সাথে থাকা একই গ্রামের তরিকুল। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নির্যাতন ও শাহাদত খুনের ঘটনার বর্ণনা দিলেন। প্রতারক আদম ব্যাপারীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে এলাকাবাসী। তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তুলেছে গ্রামের লোকজন।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ১০ জুলাই প্রতারক আদমব্যাপারীর প্রলোভনে পড়ে পানিপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমায় চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের খাড়াগোদা গ্রামের সোনাই মণ্ডলের ছেলে শাহাদত হোসেন, লতিবের ছেলে সুজাত, আলমের ছেলে তরিকুল ও তহিদের ঘরজামাই। তাদেরকে দু লাখ ৪০ হাজার টাকায় পানিথে মালয়েশিয়ায় নিয়ে যায় একই গ্রামের কথিত আদমব্যাপারী আসমান মণ্ডলের ছেলে সাদেক আলী, আফসারের ছেলে জামির হোসেন ও হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভেড়াখালী গ্রামের আবজেল আলীর ছেলে আশাবুল ওরফে আশা। যাওয়ার ১৫ দিন পর শাহাদতের বাড়িতে খবর আসে দালালরা তাকে হত্যা করে পানিতে ফেলে দিয়েছে। সন্তানের লাশ ফেরত পেতে দাললাদের নিকট ধরনা দিতে থাকেন শাহাদতের পরিবারের লোকজন। নিস্ফল ঘুরাঘুরি। নিহত শাহাদতের ভাই সিদ্দিক গত ১৬ অক্টোবর কথিত আদমব্যাপারীদের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ জামিরকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করলেও গা-ঢাকা দিয়েছে ছাদেক ও আশা। তরিকুলকে মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরে ছেড়ে দিলে সেখানকার পুলিশ গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। জেলে থাকা যশোরের একজনের মাধ্যমে তরিকুলের পরিবারের লোকজন সন্ধান পায় তরিকুল বেঁচে আছে। ছেলেকে ফেরত আনতে মরিয়া হয়ে ওঠেন পরিবারের লোকজন। জনৈক হারুনের মাধ্যমে গত বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে মা-বাবার বুকে ফিরে আসেন তরিকুল।

পানিপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে তরিকুল জানালেন, দালালদের মাধ্যমে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সন্ধ্যার দিকে কক্সবাজারে গিয়ে একটি ট্রলারে উঠি। গভীররাতে দালালরা একটি ছোট জাহাজে তুলে দেয়। ১৪ দিন জাহাজের মধ্যে একমুঠো ভাত ও এক শিশি পানি খেয়ে দিন কাটে। একদিন শাহাদত পানির জন্য ছটফট করতে থাকে এবং দালালদের নিকট পানি চায়। পানি চাওয়ার কারণে দালালরা ক্ষিপ্ত হয়ে তরিকুলকে পিটিয়ে হত্যা করে। আমি ঠেকাতে গেলে তারা আমাকেও বেধড়ক মারপিট করে। শাহাদতের মৃতদেহ আমার বুকের ওপর ফেলে রাখে। একপর্যায় দালালরা চাকু দিয়ে তার বুক চিরে পানিতে ফেলে দেয়। যেন লাশটি আর না ভাসে। চোখের সামনে পিটিয়ে হত্যা এবং চাকু দিয়ে চিরে পানিতে লাশ ফেলা দৃশ্য তা আর বর্ণনা করতেই গা শিউরে উঠছে। অবশেষে সন্ধ্যার দিকে পৌঁছায় থাইল্যান্ডের জঙ্গলে। নির্জন জঙ্গল আর পাহাড়-পর্বত দিয়ে হাটিয়ে শেষ রাতের নিকে মালয়েশিয়ার ভুখণ্ডের মধ্যে ছেড়ে দিয়ে একটি পিকআপে তুলে দেয় দালালরা। পিকআপে উঠতেই পুলিশ ধরে ফেলে আমাকে। নিয়ে যায় কুয়ালালামপুরের জেলহাজতে। সেখানে ১৫ দিন আর জেলহাজতে ৬৫ দিন কাটে। প্রতারক দালালদের খপ্পরে পড়ে পানিপথে কেউ যেন বিদেশে না যায়।

এদিকে তরিকুলের সন্ধান করে দিতে ঝিনাইদহ শ্যামনগর যাদবপুরের জনৈক ভাদু দু দফায় তরিকুলের পিতার কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার টাকা। তরিকুলের পিতা-মাতা বলেন, এখন দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।