গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা মালিকের কাছে অভিনব পন্থায় চাঁদা দাবি করছে দুর্বৃত্তরা। ইটভাটায় পৌছে দেয়া হচ্ছে টোকেন। এতে থাকছে বাহিনী ও তাদের মোবাইল নম্বর এবং ধার্য চাঁদার পরিমাণ। অবশ্য চাঁদাবাজরা প্রতিরোধের মুখেও পড়ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে বামন্দীর বিশ্বাস ইটভাটায় পুলিশ-চাঁদাবাজাদের মধ্যে বোমা গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে।
ইটভাটা মালিক ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বামন্দী শহরের দক্ষিণে অবস্থিত বিশ্বাস ইটভাটায় রাত আড়াইটার দিকে কয়েকজন অস্ত্রধারী চাঁদাবাজ হানা দেয়। চাঁদার দাবিতে লেখা একটি টোকেন ভাটা মালিককে পৌছে দেয়ার জন্য শ্রমিকদের শাসায়। তবে চাঁদাবাজরা জানতো না ইটভাটার একদিকে পুলিশ অবস্থান করছে। চাঁদাবাজদের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশ সদস্যরা তাদের আটকের জন্য ধাওয়া করে। এ সময় তারা পর পর কয়েকটি বোমার বিষ্ফোর ঘটায়। অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশের পক্ষ থেকে পাল্টা কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করা হয়। এতে দিশেহারা চাঁদাবাজরা প্রাণরক্ষায় ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়।
বামন্দী পুলিশ ক্যাম্পের এএসআই বনি কুদ্দুস জানান, ইটভাটার লোকজন কয়েকদিন ধরে পাহার করছিল। রাতে টহলের সময় তিনিসহ কয়েকজন কনস্টেবল ইটভাটার কাছে গিয়ে টহলের বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এ সময় ইটভাটার অন্য প্রান্ত দিয়ে কয়েকজন চাঁদাবাজ প্রবেশ করে। তবে বোমা হামলায় পুলিশের কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানান তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বাস ইটভাটার ওই ঘটনার আগে চাঁদাবাজরা আকুবপুরের জোয়ার্দ্দার ইটভাটা, ছাতিয়ান, বাওট, ওলিনগর ও বামন্দীর কয়েকটি ইটভাটায় যায়। চাঁদা ধার্য করে শ্রমিকদের হাতে টোকেন দিয়ে আসে। দু-একদিনের মধ্যে ইটভাটা মালিক চাঁদা না দিলে ভাটার কার্যক্রম বন্ধ ও শ্রমিকদের পুড়িয়ে মারার হুমকি দেয়।
ইটভাটা মালিক সূত্রে আরো জানা গেছে, গাংনী উপজেলায় ফিক্সড ও ব্যারেল চিমনি মিলে অর্ধ শতাধিক ইটভাটা রয়েছে। মাসখানেক আগে থেকে বেশির ভাগ ইটভাটায় ইট তৈরি ও পোড়ানে শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা মোবাইলফোনে ইটভাটার মালিক ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে একের পর এক হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করছে। কোনো কোনো ইটভাটায় চাঁদাবাজরা এসে শ্রমিকরদের শাসিয়ে যাচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরে চিৎলা-বাঁশবাড়িয়া মাঠে অবস্থিত আনারুল ব্রিকস মালিকের কাছে দুটি মোবাইল নম্বর থেকে পৃথক চরমপন্থি পরিচয়ে ৫০ হাজার ও ৬০ হাজার টাকা চাঁদাদাবি করা হয়। ২২ নভেম্বর রাতে কয়েকজন এসে ইটভাটার শ্রমিকদের হাতে একটি টোকেন ধরিয়ে দেয়। টোকেনে চাঁদাবাজ বাহিনীর ইউনিট সেভেন স্টার নামের ওই টোকেনে চাঁদার পরিমাণ, মোবাইল নম্বর, ইটভাটা নম্বর, ইটভাটার আকার ও পরিচয় হিসেবে কুষ্টিয়া/যশোর লেখা রয়েছে।
আনারুল ইসলাম জানান, টোকেন দেয়ার পরের দিন তাকে ওই মোবাইল নম্বর থেকে বলা হয় দ্রুত টাকা পরিশোধ করতে হবে। এর দু দিন পরে রাতে ইটভাটায় আসে কয়েকজন চাঁদাবাজ। আনারুল ইসলামসহ শ্রমিকদের প্রতিরোধের মুখে পালিয়ে যায়। ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ করেন আনারুল। এদিকে চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য দমাতে বসে নেই পুলিশ। বিভিন্ন স্থানে টহল বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্রেফতার অভিযান চলছে বলে জানান গাংনী থানার ওসি (তদন্ত) মোক্তার হোসেন।