পানিপথে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়ে থাইল্যান্ডের বনে বিপদে আলমডাঙ্গার ৭ যুবক

টাকা হাতিয়ে নিয়ে বণ্ডবিলের আশাদুলসহ দু দালাল লাপাত্তা : গ্রামজুড়ে কান্না

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: দালালের খপ্পরে পড়ে পানিপথে মালয়েশিয়া পাড়ি জমিয়ে থাইল্যান্ডের বনে চরম বিপদে পড়েছে আলমডাঙ্গা বণ্ডবিল গ্রামের ৭ যুবক। এলাকার দু সহযোগী আদম দালাল বিদেশ নিয়ে যাওয়া বাবদ সকলের টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে। মূল আদমব্যবসায়ীরা টাকা না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে অসহায় ৭ যুবকের ওপর চালাচ্ছে নির্মম নির্যাতন। প্রবাসী সন্তানের মোবাইলফোনে বিপদের কথা জানতে পেরে পরিবারের সদস্যদের মাঝে শুরু হয়েছে কান্নার মাতম।

জানা গেছে, আলমডাঙ্গা পৌরসভাধীন বণ্ডবিল গ্রামের তাজুল হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন আনু (৩৫), ডবন মণ্ডলের ছেলে মহিনুল ইসলাম (২৮), তানিমের ছেলে মজিবুল ইসলাম (২৬), মেহের আলীর ছেলে ইকরামুল হক (৩২), একই গ্রামের শামীম (৩০), রফিকুল ইসলামের ছেলে মুসলিম (২২) ও গোলাপ আলীর ছেলে নূর ইসলাম (২৬) পানিপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে এখন থাইল্যান্ডের বনে চরম বিপদের মুখোমুখি। সেখানকার আদমব্যবসায়ীরা টাকা না পেয়ে প্রতিদিন তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাচ্ছে। পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া অবৈধভাবে বিদেশে তাদের জীবন সঙ্কটাপন্ন।

একই গ্রামের রেজাউল মোল্লার ছেলে আদম দালাল আশাদুলসহ পার্শ্ববর্তী রোয়াকুলি গ্রামের আরেক দালালের খপ্পরে পড়ে আজ তারা বিপদে রয়েছে বলে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের দাবি। তারা জানিয়েছেন, এ দুজন দালাল গ্রামের যুবকদের সব সময় অল্প খরচে এমনকি বাকিতে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার লোভ দেখাতো। মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়াই নিয়ে যাবে এমন প্রস্তাব দিতো। তাদের আকর্ষণীয় প্রস্তাবের প্রলোভনে জড়িয়ে পড়ে গ্রামের ওই ৭ যুবক ও তাদের পরিবার। জন প্রতি দু লাখ ২০ হাজার টাকায় রফা হয়। চুক্তি মোতাবেক অধিকাংশই চুক্তি মাফিক টাকাও পরিশোধ করেছে। কয়েকজনের কিছু বাকি রয়েছে। এমন অবস্থায় প্রায় দেড় মাস পূর্বে ওই ৭ যুবককে দু দালাল মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। দেড় মাস পরিবার তাদের কোনো খোঁজখবর পেতো না। গত কয়েক দিন পূর্বে তারা বাড়িতে ফোন করে জানায় যে, তারা এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি। সকলেই থাইল্যান্ডের বনে অবস্থান করছেন। সেখানকার দালালরা টাকা পায়নি বলে তারা টাকার দাবিতে শারীরিক নির্যাতন করছে বলে জানিয়েছে। মোবাইলফোনে করে তারা অনেক কান্নাকাটি করছে। টাকা পাঠিয়ে দালালদের নিকট থেকে তাদেরকে উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে। না হলে নির্যাতনে নির্যাতনে তারা প্রাণ হারাবেন বলে কান্নায় ভেঙে পড়ছে।

এদিকে এলাকার সহযোগী আদম দালাল দুজন লাপাত্তা। তারা প্রত্যেকের নিকট থেকে সমস্ত টাকা হাতিয়ে নিয়ে মূল দালালদের নিকট টাকা না পাঠিয়েই নিজেরা গা-ঢাকা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অসহায় ৭ পরিবারসহ গ্রামের আত্মীয় পরিজনের বাড়িতে এখন কান্নার রোল। থাইল্যান্ডের বনে অবস্থানকারী স্বজনদের জন্য উৎকণ্ঠা ও আশঙ্কায় তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। গ্রামজুড়ে বইছে শোকের মাতম।