ইবিতে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে

ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির প্রথমবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায় এ পর্যন্ত ৮ জন পরীক্ষার্থীকে আটক করা হলেও হোতাদের শনাক্ত করা যায়নি। এসব পরীক্ষার্থীকে আটক করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে চালান দেয়া হলেও পুলিশ এখনও এ ঘটনার সাথে কারা জড়িত তার কোনো তথ্য উদঘাটন করতে পারিনি। ফলে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনার সাথে সম্পৃক্তরা এখনও পর্যন্ত ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তবে পুলিশ বলেছে, আটককৃত পরীক্ষার্থীরা প্রাথমিকভাবে যে তথ্য দিয়েছে তার যাচাই-বাছাই চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে মোবাইলফোনে পাঠানো এসএমএস দেখে ও হেডফোনের সাথে ব্লুটুথ সংযোগের মাধ্যমে শুনে শুনে উত্তরপত্র পূরণ করার সময় গত রোববার দুজন (এইচ ইউনিট পরীক্ষা দেয়ার সময়) এবং সোমবার ছয় জনকে (বি ইউনিট পরীক্ষা চলাকালে) হাতেনাতে ধরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। পরীক্ষার হলে মোবাইলফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও তারা কৌশলে মোবাইল ব্যবহার করছিলো। আটককৃত ৮ জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে তিনজনই মেয়ে পরীক্ষার্থী। তাদের সবার বাসা ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানায়। আটককৃতদের মধ্যে গত ২৪ নভেম্বর নাহিদ ও ইমরানকে এবং ২৫ নভেম্বর বাকি ৬ জনকে কুষ্টিয়া আদালতে চালান দেয়া হয়। কুষ্টিয়া ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৪’র বিচারক মাজহারুল ইসলাম তাদেরকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। এরপর থেকে তারা কারাগারে রয়েছেন। আটক হওয়ার ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ আটককৃতদের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনো তথ্য উদঘাটন করতে পারিনি। প্রাথমিক বিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত পরীক্ষার্থীরা যেসব তথ্য দিয়েছে তার সত্যতা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ফলে জালিয়াতির হোতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। জালিয়াতিচক্র এখনও তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে।

পুলিশ জানিয়েছে, আটককৃত পরীক্ষার্থীদের নামে পাবলিক পরীক্ষা আইন-১৯৮০’র ৮ (৯) (খ) ধারার অধীনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় (ইবি থানা) তিনটি মামলা হয়েছে। মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। তিনজন তদন্ত কর্মকর্তা মামলা তিনটি তদন্ত করছেন।

এদিকে একটি নির্ভরশীল সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির সাথে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির কয়েকজন নেতাকর্মী জড়িত রয়েছেন। তাদের অধিকাংশের বাসা ঝিনাইদহ জেলায়। এ চক্রে কমপক্ষে ১০ জন জড়িত রয়েছে। সূত্রটি আরও জানায়, চক্রটির সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অসাধু শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীও জড়িত রয়েছেন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কার্যক্রমের সাথেও জড়িত। তারাই এসব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন কৌশলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রশ্নপত্র সরবরাহ করছে। প্রশ্নপত্র পাওয়ার তারা সেগুলো দ্রত সমাধান করে আগে থেকেই চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের মোবাইলফোনে এসএমএস করে পাঠিয়ে দিচ্ছে। ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে এ চক্রের কয়েকজন সদস্যকে ক্যাম্পাসে তৎপরতা চালাতে দেখা গেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। মামলার একজন তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পরীক্ষার্থীরা কিছু তথ্য দিয়েছে। তবে সেগুলোর সত্যতা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সেগুলোর যাচাই-বাচাই চলছে।

ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিবুল ইসলাম বলেন, জালিয়াতিচক্র শনাক্তে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত তেমন কিছু জানা যায়নি। তিনি বলেন, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আদালতে তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। আবেদন মঞ্জুর হলে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুর রহমান বলেন, আমরাও জানতে চাই আসলে জালিয়াতিচক্রে কারা জড়িত আছে আর কারাই বা এর পেছনের শক্তি হিসেবে কাজ করছে। তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া আছে, জালিয়াতির সাথে যাদের সম্পৃক্ততা আছে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে।