প্রাথমিক সমাপনীর সব প্রশ্ন ফাঁস!

স্টাফ রিপোর্টার: প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় আবারো প্রশ্নপত্র ফাঁসের কলঙ্ক লাগলো। গত রোববার শুরু প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রতিটি বিষয়ে পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। ফেসবুকে কয়েকটি গ্রুপ এবং কয়েকটি কোচিং সেন্টার ফাঁসের জন্য দায়ী বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজধানী ও বিভিন্ন জেলায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ এনে ক্ষোভ জানিয়েছেন অভিভাবকরা।

গত বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় কয়েকটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। ঐ পরীক্ষার অন্তত দুইটি বিষয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ পেয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি।

গতকাল মঙ্গলবার সমাপনীর বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাড্ডার একটি কোচিং সেন্টার থেকে এ প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন অভিভাবক। এর আগে রোববার ও সোমবার যথাক্রমে অনুষ্ঠিত ইংরেজি ও বাংলা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসেরও অভিযোগ ওঠে। ফাঁসের অভিযোগ বেশি ওঠে ঢাকা, বগুড়া, দিনাজপুর, রংপুর, টাঙ্গাইলসহ কয়েকটি জেলায়। সোমবার টাঙ্গাইলের বাসাইলে হাতে লেখা প্রশ্নপত্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিলির উদ্দেশে ফটোকপি করার দায়ে এক কিন্ডারগার্টেনের মালিক ও এক ফটোকপি ব্যবসায়ীকে কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রশ্নপত্র ফাঁসের  অভিযোগ এনে গতকাল রাজধানী ও বিভিন্ন জেলায় অনেকগুলো বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেছেন অভিভাবকরা।

প্রশ্নপত্র ফাঁস বিষয়ে গতকাল মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর পাচ্ছি সাংবাদিক ও অন্যান্য মাধ্যমে। তবে ৬৪ জেলা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে কিছু জানায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অভিযাগ পাওয়া গেলে যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, ইংরেজি পরীক্ষার দিন কেউ কোন অভিযোগ করেনি। তবে বাংলা পরীক্ষা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কোন কোন জায়গার ষাট শতাংশ ও সত্তর শতাংশ প্রশ্নপত্র কমন পড়ার খবর পাওয়া গেছে। এটা প্রশ্নপত্র না সাজেশন তা জানি না। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকেও নাকি এই ধরনের সাজেশন দিচ্ছে। পরীক্ষা যাতে ভালভাবে না হয় সেজন্য ‘মোটিভেটেড’ হয়ে কেউ কেউ প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর ছড়াচ্ছেন।

গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কোথাও প্রশ্ন হুবহু ছাপিয়ে দিচ্ছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের কাছে খবর নিচ্ছি। সাংবাদিক ও অন্যান্য মাধ্যমে খবর পাচ্ছি। তবে ৬৪ জেলা থেকে অফিসিয়ালি কেউ প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে কিছু জানায়নি। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে এসব কাজ করছে। কী সেই উদ্দেশ্য তারাই তা ভালো বলতে পারবে। ভালোভাবে পরীক্ষা গ্রহণে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তারা চাইছে না ভালোভাবে পরীক্ষা হোক। যদি চাইতো তাহলে সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে সরকারকে সাহায্য করত। মঙ্গলবারের পরীক্ষায় শতভাগ মিল পাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে ধরে এই পরীক্ষা বাতিল করা হবে কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সারাদেশ থেকে প্রতিবেদন নিতে হবে। পাবলিক পরীক্ষা হুট করে বাতিল করতে পারি না। সারাদেশে প্রভাব আছে কি-না দেখতে হবে। আমরা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে বিজি প্রেসে প্রশ্ন ছাপাচ্ছি। সেখান থেকে নিরাপত্তা দিয়ে প্রশ্নপত্র উপজেলায় পাঠানো হচ্ছে, কীভাবে কোথা থেকে কারা এসব করছে তা দেখতে হবে।

তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে থাকলে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায় আমিই নেব। তবে তদন্তশেষে বোঝা যাবে আমি ও সচিব কতোটুকু দায়ী।

উল্লেখ্য, দেশের ছয় হাজার ৭৯১টি এবং দেশের বাইরে ১১টি কেন্দ্রে পঞ্চম শ্রেণির ২৭ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪৪ জন এবং মাদরাসার তিন লাখ পাঁচ হাজার ৭২১ জন শিক্ষার্থী এবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।