টানাটানি : নবজাতকের ধড় মস্তক বিচ্ছিন্ন

 

প্রসূতি কখন প্রসব বেদনায় কাতর হবে, কখন তাকে চিকিৎসা কেন্দ্রে নিতে হবে? বলা কঠিন। তবে অন্তঃসত্ত্বার সর্বশেষ ঋতুস্রাবের দিন হিসেব করে কবে নাগাদ প্রসূতি সন্তান প্রসব করতে পারেন তা মোটামুটিভাবে নির্ধারণ করা যায়। স্বাস্থ্যগত এ হিসেবের পাশাপাশি চিকিৎসা বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার সন্তান প্রসবকে আরো সহজতর করেছে। এরপরও সন্তান প্রসবের সময় টানাটানি কেন? কেন নবজাতকের ধড়-মস্তক বিচ্ছিন্ন? এ লজ্জা কি স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের নয়?

চুয়াডাঙ্গা ভিমরুল্লার এক প্রসূতিকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাতে ভর্তির পর ভোর পর্যন্ত তেমন ভরসা না পেয়ে নিরাময় নার্সিং হোমে নেয়া হয় প্রসূতিকে। সেখানে প্রসূতির সন্তান ভুমিষ্ঠ করতে চলে টানাটানি। এতে নবজাতকের মস্তক প্রসূতির গর্ভে থাকলেও ধড় ছিঁড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে বেরিয়ে আসে। এ ঘটনাকে প্রসূতির নিকটজনেরা কপালকে দোষারোপ করলেও আধুনিক স্বাস্থ্য বিজ্ঞান কি তা মেনে নিতে পারে? সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন- অদক্ষতা, নাকি অর্থলিপ্সুতায় হিতাহিত জ্ঞান ভুলে নবজাতক হত্যা? কে খুঁজবে এ প্রশ্নের জবাব? কে নেবে উপযুক্ত পদক্ষেপ?

নতুন করে বলার অবকাশ রাখে যে, তুলনামূলকভাবে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার মান বহু পিছিয়ে। এরপরও প্রসূতিকে নিয়ে অদক্ষ দায়মাদের সেই নির্মমতার যুগ গত হয়েছে। বেড়েছে সচেতনতা। তা না হলে প্রসূতির প্রসববেদনা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে নেয়ার মানসিকতা গড়ে উঠতো না। দেশের জেলা সদরে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে রাত দিন ২৪ ঘণ্টা প্রসূতির উন্নত চিকিৎসা সেবাদানের যাবতীয় ব্যবস্থা রয়েছে। সদর হাসপাতালেও প্রসূতির চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক। যদিও বাস্তবে তা খাতা-কলমে। তা না হলে সদর হাসপাতাল থেকে প্রসূতিকে নার্সিং হোমে নিতে হলো কেন?

গাইনি কনসালটেন্টকে হাসপাতাল কম্পাউন্ডের কোয়ার্টারে বসবাসের বাধ্যবাধকতা থাকলেও বাস্তবে ভিন্ন। মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে? অভিন্ন দশা। রাতে প্রসূতির প্রসব বেদনা দেখা দিলে তাকে নিয়ে কতোটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, তা বিড়ম্বনার শিকার ব্যক্তিরা ছাড়া অন্যদের বোঝানো ভার। এ সুযোগটাই কাজে লাগায় অধিকাংশ ক্লিনিক-নার্সিং হোম তথা বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দালাল ও মালিকেরা। প্রসূতি কাতরাচ্ছে। তার নিকটজনদের দেখতে হচ্ছে অসহায়ের মতো। তখন কোনো ব্যক্তি প্রসূতিকে ক্লিনিকে নেয়ার পরামর্শ দিলে সেটাই গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। আড়ালে থাকে অর্থবাণিজ্যের পরিকল্পিত ছক।

দুর্ঘটনাকে নিছক দুর্ঘটনা বলে চালানোর যুগ যখন গত হয়েছে অনেক আগে, তখন প্রসূতির সন্তান প্রসবের সময় টেনে নবজাতক ছেঁড়ার ঘটনাকে কি দুর্ঘটনা বলা যায়? ভাগ্যকে দোষারোপ অবশ্যই অসচেনতার বহির্প্রকাশ। একজন চিকিৎসকের হাতে এ ধরনের ঘটনা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়, দক্ষতা যাচাইয়ে তদন্তের দাবি রাখে। সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে কেন প্রসূতিকে বেসরকারি হাসপাতালে নিতে হলো তাও খুঁটিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

পুনশ্চ: স্বাস্থ্য প্রশাসনের কুম্ভঘুম ভাঙবে কবে?