চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেও ভরসা না পেয়ে নেয়া হয় নিরাময় নার্সিং হোমে : বিপত্তি
কামরুজ্জামান বেল্টু: প্রসূতির সন্তান ভূমিষ্ঠ করার সময় টানা টানিতে নবজাতকের ধড়-মস্তক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। টানা টানিতে পাসহ ধড় আলোয় এলেও মস্তক থেকে যায় প্রসূতির গর্ভে। ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল বুধবার সকালে চুয়াডাঙ্গার নিরাময় নার্সিং হোমে। নবজাতকের ধড়-মস্তক বিচ্ছিন্ন মৃতদেহ তার পিতার গ্রাম চুয়াডাঙ্গার ভিমরুল্লায় দাফন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা এ তথ্য জানালও অভিযোগ না তুলে বলেছে, এটা ভাগ্যেরই ফের।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা ভিমরুল্লা গোরস্তানপাড়ার টোকন আলীর স্ত্রী নাজমিন প্রসব বেদনা নিয়ে গতপরশু মঙ্গলবার রাতে সদর হাসপাতালে ভর্তি হন। বেদনা বাড়তে থাকে। হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে কর্তব্যরত স্টাফ নার্স রোগীসহ রোগীর লোকজনকে জানান, ধৈর্য ধরুন। সিজারের প্রয়োজন হলে বুধবারই করা যাবে। সকালে রোগীর লোকজন রোগীকে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিরাময় নার্সিং হোমে নিয়ে ভর্তি করায়। সকার ৮টার দিকে ডা. লিফা নারছীছ চৈতীকে নিরাময় নার্সিং হোমে ডেকে নেয়া হয়। তিনিসহ নার্সিং হোমের আয়া প্রসূতির সন্তান প্রসবে সহযোগিতা করাসহ চিকিৎসা দিতে থাকেন। রোগীর লোকজন জানিয়েছেন, সকাল ৮টার দিকে টানা টানিতে নবজাতকের পাসহ ধড় আলোয় এলেও মস্তক ছিড়ে থেকে যায় প্রসূতির গর্ভে। তখন অপারেশনের জন্য ডাকা হয় অনেসথেসিয়া ডা. গোলাম মোরশেদ ডালিমকে। তিনি অজ্ঞান করেন। নবজাতকের মস্তক প্রসবের জন্য টানাহেঁচড়া চলতেই থাকে। একপর্যায়ে চিকিৎসক দয় হাল ছেড়ে নার্সিং হোক ত্যাগ করেন। নাসিং হোমের আয়াসহ কয়েকজন নবজাতকের মস্তক অপসরণের চেষ্টা করে সফল হন। বিষয়টি জানা জানি হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
সন্তান ভূমিষ্ঠ করার সময় টানা টানিতে নবজাতকের ধড় মস্তক বিছিন্ন হওয়ার বিষয়ে ডা. গোলাম মোর্শেদ ডালিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাকে ডাকা হলে গিয়েছিলাম ঠিকই। সেখানে পৌছে দেখি প্রসূতির অবস্থা বেগতিক। প্রসূতির যন্ত্রণা লাঘবে চিকিৎসকের পরামর্শে অনেসথেসিয়া দিয়েছি। একই বিষয়ে ডা. লিফা নারছীছ চৈতীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রসূতির সন্তান প্রসবে চিকিৎসক হিসেবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়েছি। মস্তক ছাড়াই ধড় প্রসব হয়।
রোগীর লোকজন বলেছে, নাজমিনের পূর্বেও সন্তান রয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা হলে ১৪ অক্টোবর আল্ট্রাসনো করানো হয়। সে সময় চিকিৎসক বলেছিলেন জানুয়ারি মাসে সন্তান ভূমিষ্ঠ হবে। সেই অপেক্ষাতেই ছিলাম। হঠাত করে প্রসব বেদনা শুরু হলে হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে তেমন ভরসা না পেয়ে কয়েকজনের পরামর্শে নেয়া হয় নিরাময় নার্সিয হোমে। সেখানে যে এভাবে টানা টানিতে নবজাতকের ধড় মস্তক বিছিন্ন হয়ে যাবে তা বুঝিনি। এরপরও আমাদের অভিযোগ নেই। আমরা প্রসূতিকে নিরাময় নার্সিং হোমেই চিকিৎসাধীন রেখেছি। নবজাতকের লাশ নিজ গ্রামে দাফনও সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
ঘটনার প্রেক্ষিতে অনেকেই বিরূপ মন্তব্য করে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, সন্তান প্রসবের নামে যা হচ্ছে তা দেখার কি কেউ আছে? থাকলে এভাবে নবজাতক হত্যার ঘটনা ঘটতে পারে?