কাথুলীর হাট নিয়ে বিরোধ : আলিয়া মাদরাসা মসজিদের ছাদে বসে হত্যার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় ৪ জন

চুয়াডাঙ্গা ফার্মপাড়ার অপু রহমান হত্যার নেপথ্য উন্মোচন : খুনি রাজ্জাকের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা ফার্মপাড়ার অপু রহমান মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যায়নি, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে দুর্ঘটনার নাটক সাজানো হয়। মৃতপ্রায় অবস্থায় যে রাজ্জাক তাকে হাসপাতালে নেয়, সেই রাজ্জাকই সিআইডি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ কথা স্বীকার করে চাঞ্চল্যকর বহু তথ্য দিয়েছে। তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও রেকর্ড করা হয়েছে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতপরশু গ্রেফতার করা হয় সাতগাড়ির কাজলকে। এ দিয়ে গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ জনে। অপু হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারী রফিকুল ইসলাম ওরফে রকিবুলও জেলহাজতে রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার পুরাতন ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ডপাড়ার সিরাজুল ইসলামের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক ঘটনার পর রক্তাক্ত অপুকে হাসপাতালে নিলেও সে আত্মগোপন করে। পরে সে আদালতে আত্মসর্পণ করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি ইন্সপেক্টর শরিফ মঞ্জু রিমান্ডের আবেদন জানান। চুয়াডাঙ্গা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আব্দুর রাজ্জাকের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সিআইডি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রাজ্জাক চুয়াডাঙ্গা রেলবাজারের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ফার্মপাড়ার অপু রহমানকে হত্যার কথা স্বীকার করে।

রাজ্জাক বলেছে, চুয়াডাঙ্গা পুরাতন ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ডপাড়ার (এতিমখানা) মৃত হবিবুর রহমান হবির ছেলে রফিকুল ইসলাম ওরফে রাকিবের সাথে কাথুলীর সাপ্তাহিক হাট নিয়ে অপু রহমানের বিরোধ বাধে। অপু রহমান ওই হাট ইজরা নেয়। পরবর্তীতে হাটের সাব ইজারা নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে রাকিব। তাকে না দিয়ে অপু রহমান কাথুলীর একজনের নিকট বিক্রি করে দেয়। এ কারণেই রাকিব তার এক সময়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অপু রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তিন দিন বৈঠকের পর ঘটনার একদিন আগে আলিয়া মাদরাসা মসজিদের ছাদের ওপর বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ বৈঠকে আমি (রাজ্জাক) মসজিদপাড়ার মৃত আজিজ ড্রাইভারের ছেলে শফিকুল ইসলাম অপু, সাতগড়ির শুকুর আলীর ছেলে হানিফ ও হত্যার মূল চক্রান্তকারী রফিকুল ওরফে রাকিব উপস্থিত ছিলাম। আমি অপু রহমানকে হত্যার জন্য দু লাখ টাকা দাবি করি। শফিকুল ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়। পরিকল্পনা মোতাবেক ঈদের একদিন আগে অর্থাৎ ২৭ জুলাই রাতে গাঁজা কেনার কথা বলে মোটরসাইকেলযোগে অপু রহমানকে সাতগাড়ির আজিম উদ্দীনের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ফেরার সময় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রফিকুল ওরফে রাকিবসহ অন্যরা রাস্তার পাশের খেঁজুর গাছের নিকট টর্চলাইট মারে। আমি তাদের কথা মতো সেখানে দাঁড়ায়। রকিব রড দিয়ে অপু রহমানের মাথায় আঘাত করে। অপু মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মোটরসাইকেল মাটিতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দুর্ঘটনার নাটক সাজানো হয়। স্থানীয়দের ডেকে তোলা হয়। আমিই অপুকে মৃত প্রায় অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে অপুর বাড়িতে খবর দেয়ার পাশাপাশি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে বলে জানায়।

উল্লেখ্য, গত ২৭ জুলাই রাত সাড়ে ১২টার দিকে অপু রহমানকে হাসপাতালে নেয়া হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজন হওয়ায় ওই রাতেই নেয়া হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মারা যায়। ঈদের দিন সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ নেয়া হয় নিজ বাড়ি চুয়াডাঙ্গার ফার্মপাড়ায়। জান্নাতুল মওলা কবরস্থানে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হয়। অপু রহমানের পিতা বাদী হয়ে হত্যামামলা দায়ের করেন। পুলিশ এজাহারনামীয় আসামি রফিকুল ওরফে রাকিব, সাতগাড়ির হানিফ. মসজিদপাড়ার শফিকুল ইসলাম অপুকে গ্রেফতার করে। এদের গ্রেফতার করা হলেও পুলিশি তদন্তে সন্দেহ দানা বাধে। এক পর্যায়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলার তদন্তভার গড়ায় সিআইডির ওপর। রাজ্জাক দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার এক পর্যায়ে আদালতে আত্মসমর্পন করে। তাকেসহ অন্যদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। বেরিয়ে আসে হত্যার নেপথ্য। রাজ্জাকের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতপরশু গ্রেফতার করা হয়েছে সাতগাড়ির কাজলকে। তাকেসহ পূর্বে গ্রেফতারকৃতদেরও রিমান্ডে নেয়ার প্রক্রিয়া করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টসূত্র জানিয়েছে। অপরদিকে গত ১৫ নভেম্বর রডটি উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থলের অদূরবর্তী একটি গবরে সারের গর্ত থেকে উদ্ধার করা হয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাবাদের একপর্যায়ে রফিকুলের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রডটি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে সিআইডি সূত্র।

এদিকে অপু রহমানের চাচা ইতালি প্রবাসী আলমগীর হোসেন বলেছেন, অপু রহমান ছিলো আমার সন্তানের মতোই। তাকে হত্যা করা হয়েছে। তার মতো আর যাতে কেউ হত্যার শিকার না হয় সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সিআইডি পুলিশ একজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করেছে। আমরা আশা করি অন্যদেরও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করতে সিআইডি সক্ষম হবে। আমরা চাই অপু রহমানকে যারা হত্যা করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।