আশা হত্যামামলায় পার পেলেও সেই ঝন্টুকে ঝুলতে হচ্ছে ফাঁসির কাষ্ঠে

কুষ্টিয়ায় জাসদ নেতা কাজী আরেফসহ ৫ খুন মামলায় দণ্ডিত দু আসামির রিভিউ খারিজ : ফাঁসি বহাল

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার তরুণ শিল্পপতি আশাবুল হক আশা অপহরণের পর খুন-গুম মামলায় পার পেলেও জাসদ নেতা কাজী আরেফসহ ৫ খুন মামলায় রেহাই পেলো না কুষ্টিয়া কুর্শার সেই রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু। তার ও আনোয়ার হোসেনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা করে না পেলে এখন মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর বাধা নেই।

জানা গেছে, ১৯৯৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কালিদাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক জাসদ সভাপতি কাজী আরেফ আহমেদ, কুষ্টিয়া জেলা জাসদের তৎকালীন সভাপতি লোকমান হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইয়াকুব আলী, স্থানীয় জাসদ নেতা ইসরাইল হোসেন ও সমশের মণ্ডল। আসামির তালিকায় উঠে আসে চুয়াডাঙ্গা কয়রাডাঙ্গার নূরুজ্জামান লাল্টুসহ কথিত বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যদের নাম। ঘটনার পাঁচ বছর পর ২০০৪ সালের ৩০ আগস্ট কুষ্টিয়ার জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালত এ হত্যামামলায় ঝন্টুসহ ১০ জনের ফাঁসি ও নূরুজ্জামান নান্টুসহ ১২ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া ১০ আসামি হলেন- ইলিয়াস, রাশেদুল ইসলাম ওরফে ঝন্টু, সাফায়েত হোসেন হাবিব, আনোয়ার হোসেন, সাহির হোসেন, মান্নান মোল্লা, বাকের, রওশন, জাহান ও জালাল। এদের মধ্যে শেষ পাঁচজন পলাতক। এছাড়া রাফাত ওরফে রাফা, গারেস, তাসিরুদ্দিন, আসগর জোয়ারদার, নজরুল ইসলাম, ওয়ালিউর রহমান, একুব্বার, টিক্কা ওরফে জাব্বার, লাবলু, ফিরোজ ওরফে ফরু, লাল্টু ওরফে নুরুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন কুষ্টিয়ার আদালত। ইলিয়াস, রাশেদুল, আনোয়ার, সাহিরসহ দণ্ডপ্রাপ্তরা এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। তাদের আবেদনে হাইকোর্ট যাবজ্জীবনপ্রাপ্তদের দণ্ড থেকে খালাস দেয়ার পাশাপাশি নয়জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। বিচারিক আদালতে সর্বোচ্চ সাজার আদেশ পাওয়া সাহির হাইকোর্ট থেকে খালাস পেয়ে যান। এরপর হাইকোর্টের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের আবেদন করে। অন্যদিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখায় ইলিয়াস, রাশেদুল ও আনোয়ার হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন। ২০১১ সালের ৬ আগস্ট আপিলের রায়ে হাইকোর্টের রায়ই বহাল রাখা হয়। ফলে ইলিয়াস, রাশেদুল ও আনোয়ারের মৃত্যুদণ্ডাদেশও বহাল থাকে। এর মধ্যে আনোয়ার হোসেন ও রাশেদুল ইসলাম ঝন্টু পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছিলেন, যা গতকাল বুধবার খারিজ হয়ে গেলো।

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে চুয়াডাঙ্গা জ্যোতি বিস্কুটের অন্যতম পরিচালক ফেরিঘাট রোডের বাসিন্দা আশাদুল হক আশাকে অপহরণ করা হয়। তার মৃতদেহ আজও মেলেনি। আশাকে হত্যা করে আলমডাঙ্গার পোলতাডাঙ্গায় পুঁতে রাখা হয়েছে বলে ঝন্টুসহ তার সহযোগীদের কয়েকজন তথ্য দিলেও শেষ পর্যন্ত উদ্ধার হয়নি। এ মামলায় ঝন্টু রেহাই পেলেও কাজী আরেফ হত্যামামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ রিভিউ খারিজ হওয়ায় আইনজীবীরা বলেছেন, ওর সামনে এখন রাষ্ট্রপ্রতির নিকট প্রাণ ভিক্ষা চাওয়া। রাষ্ট্রপতির সাড়া না মিললে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকলো না।